Golper Alo - ভালোবাসার গল্পের জগৎ 👉পর্ব ( ০৫ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

Header Ads Widget

👉পর্ব ( ০৫ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

🔖 আত্মার_অন্তরালে

গল্পের ছবি

✍️ লেখক: [প্রীতি_আক্তার_পিহু]

📖 পর্ব: [০৫ ]

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।


👉পর্ব ( ০৫ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু

ইউভান আনায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল। তারপর একটি বোতল থেকে পানি বের করে আনায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কোথাও লাগেনি তো?" আনায়া মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে বির বির বলল, "নিজে ব্যথা দিল আর এখন খোঁজ নিচ্ছে!" ইউভান আনায়ার গোমরা মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, "আই এম সরি সানসাইন।" আনায়া এবার ইউভানের দিকে তাকায়, আবার নিজের দিকে। তার চোখগুলো বড় হয়ে গেল, অবাক দৃষ্টিতে ইউভানের চোখে চোখ রাখল। বসন্ত হুট করে তার হৃদয়ের ভেতরে এসে ধাক্কা দিল। ইউভান তাকে সানসাইন বলে ডেকেছে আর সেই কথাটাই যেন সমস্ত অভিমানকে ধূলোয় মিশিয়ে দিল। লজ্জায় আনায়া চোখ নিচু করে নিল। তার গাল লাল হয়ে উঠল।ইউভান আনায়ার রক্তিম মুখশ্রী দিকে তাকিয়ে শুধালো, "তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস সানসাইন?" আনায়া চমকে তাকায় ইউভানের দিকে। আমতা আমতা করে বলে উঠে, "আ আমি ক কেন লজ্জা পাবো আজব।" ইউভান ঠোঁট কামড়ে হাসে।এরপর কিছুটা ঝুকে এসে শীতল কন্ঠে বলে উঠলো, "তাহলে তোর গালে এত পিংক দেখা যাচ্ছে কেন?" আনায়া ভ্রু কুচকায় কোন কিছু না ভেবেই বলে ওঠে, "আপনি পাগল নাকি? লজ্জা পেলে গাল রেড হয়ে যায় পিংক নয়।" ইউভান কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলল, " উমমম এটা খুবই চিন্তার বিষয় আমি চোখে উল্টাপাল্টা দেখছি।তার মানে তোর গাল পিংক দেখাচ্ছে না তাহলে কি রেড দেখাচ্ছে? আনায়া এবার কিছুটা বিরক্ত নিয়ে কপাল কুঁচকায় উত্তর দিল, " হ্যাঁ এবার ঠিক দেখেছেন।" ইউভান অন্যদিকে ফিরে বাঁকা হাসলো।এরপর আনায়ার আরেকটু কাছে এসে শুধালো, "তার মানে কি তুই লজ্জা পাচ্ছিস?" আনায়া কিছু না চিন্তা করে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ!" পরমুহূর্তে চোখ বড় হয়ে যায় আনায়ার।কি থেকে কি বলে ফেলেছে সে?সে তড়িৎবেগে পুনরায় বলে, "ইয়া মানে না আমি কেন লজ্জা পাবো।" "কেন তুই যে বললি লজ্জা পেলে গাল রেড হয়ে যায়। নিজেই তো স্বীকার করলি তোর গাল এখন রেড হয়ে আছে তো?" আনায়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।ইউভান যে তাকে মারাত্মক ভাবে কথা জালে ফাঁসিয়েছে এটা ভালো মতোই বুঝতে পেরেছে সে।আনায়া জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।ইউভান নিঃশব্দে হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।আনায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, " বাকিরা আসবে না ইউভান ভাই?" ইউভান ড্রাইভিং করতে করতে ঠান্ডা কণ্ঠে উত্তর দেয়, " বাকিদের দায়িত্ব নেইনি আমি।ওরা কোন না কোন ভাবে চলে আসবে।" আনায়া আর কথা বাড়ায় না। মাঝেমধ্যে আড় চোখে ইউভানকে দেখতে থাকে লুকিয়ে লুকিয়ে। এই দেখার মাঝে মনের অদ্ভুত শান্তি আসে তার।কিছুক্ষণ বাদে গাড়ি এসে থামল কয়েকটা খাবারের স্টলের সামনে। আনায়া বুঝতে না পেরে ইউভানের দিকে তাকায়।ইউভান ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কী খাবি তুই?" আনায়া ক্রমশ অবাক হয়ে তাকায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না ইউভান তাকে খাবারের জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।আনায়াকে আর পায় কে খুশিতে গদ গদ হয়ে ওঠে। আনায়া মেকি হেসে বলে, "ফুচকা, চটপটি, বাদাম,আইসক্রিম, চকলেট,হাওয়াই মিঠাই, এগুলো আর কিছু না।" ইউভান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে শুধালো, " এতগুলো আনহেলদি খাবার একসাথে?এর থেকে আমার হাতে থাপ্পড় খা এটা আরো বেশি হেলদি তোর জন্য।" আনায়া রাগী চোখে তাকায় ইউভানের পানে।এই লোকটা যখন সুযোগ করে থাকে অপমান করতেই থাকে। খালি খালি তো বদমাশ, বুইরা বলে ডাকে না আনায়া।ইউভান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নামে। আনায়া সেদিকে একবার তাকায় নিশ্চয়ই তার জন্য সব খাবার আনতে গিয়েছে।আনায়া সবকিছু খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।ঠিক পাঁচ মিনিট বাদে ইউভান গাড়িতে এসে বসে। আনায়া হাতের দিকে দেখে শুধুমাত্র মিল্কশেকের ক্যন হাতে।ইউভান আনায়ার দিকে মিল্কশেকটি এগিয়ে দিয়ে বলে, "এই নে তোর বাদাম,চকলেট, আইসক্রিম, হাওয়ায় মিঠাই।" আনায়া মিল্কশেকটি হাতে নিল।তার মাথায় কিছু ঢুকছেনা সে অবাক হয়ে বলে, " আপনি কী সত্যি সত্যি অন্ধ হয়ে গিয়েছিন ইউভান ভাই?আমাকে মিল্কশেক কেন ধরিয়ে দিলেন? আমি কি আপনাকে এগুলো আনতে বলেছি?" ইউভান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উত্তর দিল, "সে একই তো হলো তুই আলাদা আলাদা ভাবে আনতে বলেছিলে আমি সব একসঙ্গে মিক্স করে নিয়ে এসেছি। এই মিল্কশেকে চকলেট, বাদাম, আইসক্রিম, হাওয়াই মিঠাই অর্থাৎ মিষ্টি সবকিছুই আছে।আর ফুচকা চটপটি ওই দুইটা বকেয়া থাকুক অন্য একদিন খাওয়াবো সেটা।" আনায়া ফ্যল ফ্যল করে চেয়ে রইল। তার নিজেকে নিজে থাপড়াইতে ইচ্ছে করছে।ভুতে ধরেছিল যার কারণে এই অসভ্য বদমাইশ লোকের কাছে সে কিছু খেতে চেয়েছে। আনায়া রাগে ফুঁসে বলে উঠে, "খাব না আমি আপনি খান আপনার মিল্কসেক।" ইউভান কঠিন দৃষ্টি ফেলে আনায়ার উপর। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে আওড়ায়, " ওটা খেতে না চাইলে সমস্যা নাই। আমার কাছে আরো হেলদি খাবার আছে তোর জন্য আর সেটা হলো থাপ্পড়। কিছুক্ষণ আগের থাপ্পরটা নিশ্চয়ই খুব মজা লেগেছে তোর?তাহলে মজার খাবার টা আরেকবার খেতে দেই তোকে?" আনায়া দমে যায়।আর কোন কথা না বলে চুপচাপ মিল্কশেকটি খাওয়া শুরু করে।ইউভান বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট তাই পুনরায়। সারা রাস্তা আনায়া রাগে কিছু বলে নাই।প্রায় আধঘন্টা বাদে গাড়ি এসে থামে চৌধুরী ম্যানশন এর সামনে। আনায়ার দ্রুত গাড়ি থেকে নামে। একবারও পিছন ফিরে তাকালো না সে হনহনিয়ে চলে গেলো।ইউভান সেদিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।হঠাৎ ফোনে একটা এসএমএস আসায় দ্রুত উল্টো পথে গাড়ি চালায় ইউভান।তার অনেক কাজ বাকি এখন। -------- রাত প্রায় বারোটা, আনায়া রুমে একা মন মরা হয়ে বসে আছে।তার কোন কিছু ভালো লাগছে না। বারবার শুধু বেলকুনিতে উকি মেরে আবার রুমের ভিতর আসছে।ইউভান এখানো বাসায় ফিরে নায়।আনায়া না চাইতেও মনটা খুদবুদ করছে।সে এবার একঝাটকায় উঠে দাঁড়য়। কোনো কিছু না ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে ধীরে ধীরে সদর দরজা পার করে।বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার কিন্তু আনায়ার মনে বিন্দু পরিমাণ ভয় নেই। সে ওই অন্ধকারের মধ্যে বাগানের দিকে হাঁটা শুরু করে।ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে আনায়ার পুরো শরীর জুড়ে। সে এবার দোলনায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে নেই। অন্ধকারের ঠান্ডা শিহরণ তার সারা শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে আনায়া নিজেই জানে না। হঠাৎ— অন্ধকারের মধ্যে একটা ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। প্রথমে অস্পষ্ট, কিন্তু আস্তে আস্তে তা স্পষ্ট হয়।কালো হুডি পরা একব্যক্তি এগিয়ে আসছে আনায়ার দিকে। তার হাতে দুটি সূর্যমুখী ফুল।লোকটি নিঃশব্দে এগিয়ে এসে আনায়ার কোলের ওপর ফুলগুলো আলতো হাতে রাখে। চাঁদের আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফুলগুলোতে লালচে দাগ রক্ত। ব্যক্তিটি এবার কিছু না বলে ধীরে ধীরে পেছনে সরে যায়।তারপর কুয়াশার মতো মিলিয়ে যায় গভীর অন্ধকারে। ঠিক সেই মুহূর্তে আনায়ার ঘুম ভেঙে যায়।তার মনে হচ্ছিল, কেউ এখানে ছিল! কিন্তু কে? চারপাশে তাকায় আনায়া।তখনই কোলের ওপর কিছু একটা অনুভব করে আনায়া। দৃষ্টি নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস আটকে আসে সেই সূর্যমুখী ফুল।আনায়া ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে।হাতের মুঠোয় থাকা সূর্যমুখী ফুলদুটি দিকে তাকায় স্পষ্ট রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে ফুলের উপর।আনায়ার বুকের ভেতর ধুকধুকানি বেড়ে যায়। এত বছর ফুল আসলেও কখনো রক্তের দাগ পায়নি সে কিন্তু এবার?আনায়া আর এক মুহূর্ত দাঁড়ানোর সাহস পাই না দ্রুত উল্টো পথে দৌড়াতে শুরু করে। তার পায়ের নিচে শুকনো পাতা চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে, নিঃশ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। বাসার দরজা পার হয়ে করিডোরে ঢুকতেই কারোর সাথে সজোড়ে ঢাক্কা খায়।আনায়া তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কিন্তু শক্ত একটা হাত তাকে আঁকড়ে ধরে।আনায়া ভয়ে চোখ তুলে তাকায় সাথে সাথে চেনা পরিচিত মুখাবয়ব দেখে কিছুটা শান্ত হয়। "কি হয়েছে তোর এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?দেখে মনে হচ্ছে কারো থেকে পালিয়ে আসছিস হুম?" ইউভান ভ্রু উচিয়ে কথাগুলো বলে। আনায়া কথা শুনে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়। হাফসাফ করতে থাকে কি বলবে সে এখন? সূর্যমুখী ফুলের কথা বলবে নাহ? আনায়া কথাটা চাপিয়ে যায় আমতা আমতা করে বলে ওঠে, "ওই ইউভান বাগানে ছিলাম তো হঠাৎ কেমন যেন ভূতের ভয় হতে শুরু করে। তাই আর কি দৌড়াচ্ছিলাম।" ইউভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে আনায়ার হাতের দিকে, "এত রাতে তোর হাতে সূর্যমুখী ফুল কোথা থেকে এলো সানসাইন?" আনায়া চমকে ওঠে। কি উত্তর দিবে সে এখন?আনায়া কোনমতে কথা ঘুরানোর জন্য বলে, "আরেহ এটা তো রুহি আমাকে এনে দিয়েছিল তাই সেটা হাতে নিয়ে ঘুরছি আর কী।তাছাড়া কোথায় বা পাব ফুল।" ইউভান খুব ভালোমতো লক্ষ্য করে আনায়ার ছটফটানি।সে পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো, "এত রাতে তুই না ঘুমিয়ে জেগে আছিস কেন?আর এত রাতে কোন সাহসেই বা বাগানে গেলি?কলিজা তো দেখছি তোর অনেক বড় হুমম?" আনায়া এবার চোখ তুলে তাকায় এখন কী বলবে সে? ভয়ে হাত পা অবস হয়ে আসে।সে চট করে বলে, “আসলে, আমি... আমি একটা টপিক ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আপনি আসলে বুঝিয়ে দেবেন।কালকের ভার্সিটির পড়া।” ইউভান অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল। তারপর ভ্রু কুঁচকে বলে, “এত রাতে পড়ার টপিক?আমি কী তোকে পড়ানোর চাকরি নিয়েছি?" আনায়া বুদ্ধি করে উত্তর দেয়, "আরেহ কালকে ভার্সিটির পড়া।আপনি যদি আমাকে বুঝিয়ে না দেন আমি কালকে ক্লাসে পড়াটা পারবো না। তখন কি হবে? সবার সামনে আমাকে স্যার অপমান করবে। তখন আপনার সম্মান কোথায় যাবে একবার ভেবেছেন ইউভান ভাই?" "তুই পড়া না পারার সাথে আমার সম্মানের কি সম্পর্ক?" আনায়া মেকি হেসে বলে, "সম্পর্ক আছে তো। সবাই আপনাকে বলবে যে ইউভানের বোন পড়া না পারার কারণে কান ধরে দাঁড়িয়েছে ক্লাসে। তখন কি আপনার শুনতে ভালো লাগবে?" ইউভান দাঁতে দাঁত চেপে বলে, প্রথমত তোর মতো গাধী আমার বোন না।আর এখন আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা না হলে এখানেই তোকে জানে মেরে ফেলবো।" আনায়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকায়। সে এটাই বুঝতে পারে না আবার কি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছে যার কারণে ইউভান এত রেগে গেল।আনায়া পুনরায় শুধালো, "ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।পড়া না পারলে কি বা হবে?শুধু ভরা ক্লাসে কান ধরেই দাঁড়িয়ে থাকবো এই আর কি।" বলেই মুখ উচিয়ে সামনে এগোতে থাকে আনায়া।ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে ইউভান গম্ভীর কন্ঠে আওড়ালো, " টেবিলে গিয়ে বস আমি আসছি ৫ মিনিট পর।" আনায়া মুচকি হাসে।সে জানতো ইউভান তাকে মানা করতে পারবে না।এজন্যই তো একটু ড্রামা করলো। মনে মনে ভীষণ খুশি হয় আনায়া। উরু উরু মন নিয়ে রুমের দিকে যেতে থাকে সে।ইউভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলায় আনায়ার হাতে থাকা সূর্যমুখী ফুল দুইটির দিকে। হঠাৎ একটি কালো-ছায়া পেছন থেকে দ্রুতগতিতে চলে যায়।ইউভান সঙ্গে সঙ্গে পেছন ফিরে তাকায় সদর দরজার দিকে।আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটি কালো ছায়া। ছায়াটি নড়েচড়ে ওঠে এরপর অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে শুরু করে। ইউভান ঘাড় কাত করে বাঁকা হাসে।এরপর ঠোঁট দিয়ে অদ্ভুত সুরে বাঁশি বাজায়। (Mama im in love with criminal) গানের টোন। বাঁশি বাজাতে বাজাতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠেতে থাকে। রাত বাজে ঠিক একটা। চারপাশ নিস্তব্ধ। শুধুমাত্র আনায়ার ঘরের টেবিল ল্যাম্পের আলো। এই আলোটা যেন আজ তার সবচেয়ে বড় শত্রু। বাধ্য হয়ে পড়ার টেবিলে বসে আছে সে, যদিও তার চোখ তো বইয়ের পাতায় নয়—ঘড়ির কাঁটার দিকে। বারবার মনে হচ্ছে, "এখনই যদি কেউ এসে আমাকে উদ্ধার করত!" ঠিক তখনই ইউভান এসে হাজির হয়। তার পরনে সাদা শার্ট। চেয়ারে বসে সে সোজা বলে ওঠে, “তাড়াতাড়ি বল, কোন টপিক বুঝতে পারছিস না?” আনায়া ভেবেই পায় না কী বলবে। সে তো এমনিতেই দেরি করার বাহানায় এই নাটকটা সাজিয়েছিল। দ্রুত একটা বই তুলে দিয়ে বলে, “এই... এইটা, ভাইয়া। এই পৃষ্ঠা থেকে ওই পৃষ্ঠা।” ইউভান একটুও সন্দেহ না করে বইটা খুলে বোঝাতে শুরু করে। তার ভ্রু কুঁচকানো, চোখে গভীর মনোযোগ। আনায়া ততক্ষণে বইয়ের বদলে ইউভানের দিকে তাকিয়ে আছে। কীভাবে সম্ভব? একটা ছেলে এত সুন্দর কীভাবে হয়? ইউভানের এলোমেলো চুল যেন আনায়ার হৃদয়টাকেই এলোমেলো করে দিচ্ছে। সেই শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখা হাতদুটো যেন বইয়ের পাতা উল্টানোর বদলে আনায়ার মনের পাতা উল্টাচ্ছে। আনায়া মনে মনে বলে, "প্রতিদিনই কি এরকম একটু একটু করে প্রেমে পড়া যায়? এভাবে একটা মানুষ কিভাবে অন্য কারও মনে ঘূর্ণিঝড় তুলতে পারে ইউভান ভাই?" কিন্তু হঠাৎ ইউভান ধমক দিয়ে বলে ওঠে, “তোর মনোযোগ কোথায়, বেয়াদব? আমি তোকে কিছু বোঝাচ্ছি, আর তুই কোথায় তাকিয়ে আছিস?” আনায়া চমকে ওঠে । তাড়াতাড়ি বলে, “না... আসলে আমি সব বুঝতে পারছি!” ইউভান অবাক হয়ে তাকায়। “সব বুঝতে পারছিস? তাহলে সবকিছু এখনই লিখে দে।” আনায়া গলায় শুকনো ঢোক গিলে। তার মাথায় কিছুই নেই! সে আস্তে আস্তে বলে, "ইউভান ভাই আসলে আমার তো এখন ঘুম পাচ্ছে। কালকে লিখে দিই?” ইউভান চোখ ছোট করে তাকায়। “তুই কি চড় খাবি নাকি লিখবি কোনটা আনু?” আনায়া ভয়ে কলম তুলে নেয়। কিন্তু কিছুই তার মাথায় আসছে না। ইউভান তখন ফোন স্ক্রল করছিল।হঠাৎ আনায়া বলে ওঠে, “ইউভান ভাই আমি সব লিখে দেব। কিন্তু আপনি আমাকে একটা গান শোনাবেন।” ইউভান বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকায়। “গান শোনাব? তোকে আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ঠিকমতো পড়াশোনা কর নাহলে আমি তোকে রিকশাওয়ালা মামার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব।” আনায়ার চোখোখ বড় বড় হয়ে যায়। মনে মনে বলে, “আমার কী দোষ? আমি কেন রিকশাওয়ালার মামার সঙ্গে বিয়ে করতে যাব? আমি তো আপনাকেই বিয়ে করব। আমার মতো মেয়ে আপনি আর পাবেন না। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি হুহুহু।” তবে সে মুখে কিছু বলে না। মুখ গোমরা করে পড়ায় মনোযোগ দেয়। প্রায় রাত আড়াইটার দিকে ইউভান উঠে দাঁড়ায়। আনায়া ততক্ষণে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঠিক তখনই সে নিজের ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে বলে, “বলছি... শুনছেন?” ইউভান দরজার দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “শুনছি, ম্যাডাম।” আরু আমতা আমতা করে বলে, “আজকে রাতে... গান গাইবেন না?” ইউভান থামে। এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর গম্ভীর গলায় বলে, “আমার মুড নেই।” এই কথায় আনায়ার মন ভেঙে যায়। সে নিজের চোখ থেকে ঘুম সরিয়ে তাকিয়ে রইল । ইউভান দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। আনায়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে মনে মনে বলে, “মুড নেই বললেন? কেন নেই? তবে আমি জানি, একদিন ঠিক আপনার মুড তৈরি করব। আর তখন, আপনি শুধু আমার গানই গাইবেন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে নিয়ে গাইবেন।”চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে আনায়া। রাত তখন গভীর। আনায়ার ঘুম আসছে না কিছুতেই। কেন জানি আজকের রাতটা যেন অন্যরকম। এত বড় বাড়ির সব ঘর অন্ধকারে ডুবে আছে, শুধু তার রুমের ল্যাম্পটা জ্বলছে। সে একবার বিছানায় এদিক-ওদিক গড়ায়, একবার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তাকায়। কিন্তু কিছুতেই যেন শান্তি মিলছে না। হঠাৎ তার মনে পড়ে, ইউভানের কথা। ইউভানের কণ্ঠ। সেই কণ্ঠের গান। সে দ্রুত বেলকনিতে এসে উঁকি দেয়, আকাশটা মেঘে ঢাকা, ইউভানের কোনও চিহ্ন নেই। কেন জানি তার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। মনে হলো, আজ যদি ইউভান গান না গায়, এই রাতটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।অষ্টাদশীর কোমল হৃদয়টা ভারি হয়ে আসে। ঠিক তখনই আনায়ার চোখ চলে যায় বাগানের দিকে। দূরে, সুইমিং পুলের পাশের লনে একটা আবছা ছায়া দেখতে পায়। প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। মনে হয়, এত রাতে বাগানে কে থাকতে পারে? কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারে, ভয়ের কিছু নেই। তার কানে ভেসে আসে এক অপার্থিব সুর। গিটারের টুনটুন আওয়াজ যেন রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে আনায়ার বুকের গভীরে ঢুকে পড়ে। আনায়ার মুখে মুহূর্তই হাসি ফুটে ওঠে। সে বুঝতে পারে ইউভান বাগানে আছে। আর দেরি না করে আনায়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। তার হৃদয় ধুকপুক করছে।আনায়া ভাবতেও পারিনি ইউভানকে এত রাতে গিটার বাজাতে দেখবে সে। সে এক দৌড়ে সুইমিং পুলের কাছে চলে আসে। সেখানে পৌঁছে তার চোখে পড়ে, সুইমিং পুলের লাল, নীল আর সবুজ বাতিতে ইউভানের মুখের দিকে। ইউভান তখনও গিটারের তারে আঙুল চালিয়ে যাচ্ছে। আনায়ার বুকের ভেতরটা আনন্দে টগবগ করছে। এত কাছ থেকে ইউভানকে দেখে তার মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।ইউভান এবার চোখ তুলে আনায়ার দিকে তাকায়। সেই শীতল, অথচ গভীর দৃষ্টি। আবায়ার সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সে ইউভানের এর কাছে এগিয়ে আসে। নিজের অজান্তেই হাঁটু গেড়ে ইউভানের পাশে বসে পড়ে। ইউভান আনায়ার মুখশ্রীর পানে তাকিয়ে শুধালো, “তুই তো ঘুমিয়ে ছিলি না? এত রাতে এখানে কেন এলি?” আনায়া তড়িৎ বেগে বলে ওঠে, "আপনার জন্য।" ইউভান নিঃশব্দে হেসে হুইস্কির কন্ঠে শুধালো, "আপনি গভীর সমুদ্রে পা দিচ্ছেন ম্যাডাম।যখন তখন ডুবে যেতে পারেন কিন্তু সাবধান।তখন চাইলেও কিনারায় ফিরতে পারবেন না।" আনায়া এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তার দৃষ্টি হৃদয় মাথা সব কিছু কেমন শিথিল হয়ে রয়েছে।আনায়া মিষ্টি কন্ঠে জবাব দিল, " আমি তো কবেই ডুবে গিয়েছি ইউভান ভাই।তবে কেনারায় ফেরার বিন্দু পরিমান ইচ্ছা আমার নাই।সারা জীবন না হয় সমুদ্রের অতলেই থেকে যাব।" ইউভান এবার কিছুটা ঝুকে আনায়ার দিকে।তারপর নেশাক্ত কন্ঠে আওড়ায়, "ভেবেচিন্তে বলছিস তো সানসাইন?সমুদ্রের অতলে কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর অন্ধকারে তোর সাথে যা কিছু তা হয়ে যেতে পারে।সামলাতে পারবি তো তখন?নাকি পালিয়ে যাবি কোনটা হুম?" আনায়া গভীর কন্ঠে উত্তর দেয়,

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

"থেকে যাব! " ইউভান তাচ্ছিল্য হাসে। তার কাছে এসব কথা মজা ছাড়া কিছুই লাগছে না। যে মেয়ে একদিন আগেও ইউভানের সাথে আগুনে পুড়তে নাকোচ করলো।সেই মেয়ে আজ ইউভানের সাথে সমুদ্রের অতলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে থাকতে রাজি হয়ে গেল?ইউভান সোজা হয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শুধালো, "নিজের লক্ষ্য স্থির কর আনু।মন দু’দিকে টানলে গন্তব্য হারিয়ে ফেলবি কারণ অস্থির হৃদয়ে সঠিক গন্তব্য লেখা থাকে না। আর আমি অতটা সহজ নয় যতটা সহজ ভাবে তুই নিচ্ছিস।" আনায়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।তারে ছোট্ট মাথা ইউভানের কোন কথার অর্থ বুঝতে পারেনা।ইউভান যে সহজ না সেটা আনায়া খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।সে প্রশ্নাতক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে, "আপনি বড্ড জটিল অংক ইউভান ভাই যার সমাধান করতে আমি ব্যর্থ।আমি সত্যি বুঝতে পারি না আপনাকে আর না আপনার চাওয়াকে।আপনি কী চান ইউভান ভাই?" ইউভান সঙ্গে সঙ্গে চোখ রাখে আনায়ার উপর।ইউভানের মনে মনে বড্ড হাসি পায় এই প্রথম কেউ জিজ্ঞাসা করল যে সে কি চায়?ইউভান অন্যদিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে। তার চাওয়া পৃথিবীতে কেউ পূরণ করতে পারবে না একমাত্র সে ছাড়া। কারণ সে যা চায় সেটা জোর করে হলেও নিজের করে পাই। আনায়া পুনরায় কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই ইউভান আবার গিটারের তারে আঙুল বুলিয়ে সুর তুলতে থাকে।আনায়া থেমে যায় সঙ্গে সঙ্গে।ইউভান অষ্টাদশীর চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট নাড়িয়ে গানের সুর তোলে, চলো বলে ফেলি, কত কথা কলি 🎶 জন্মেছে বলতে তোমায়, তোমাকে চাই, 🎶 ঝলসানো রাতে,এই পোড়া বরাতে! 🎶 তুমি আমার অন্ধকার, আর রোশনাই🎶🎶 কার্নিশে আলতা মাখানো,দিনের ঢোলে পড়ে রাতে,🎶 তারপরে রাত্রি জাগানো, বাকিটা তোমারিতো হাতে 🎶 জেগে জেগে আমি শুধু ঘুমিয়ে পড়তে চাই🎶 থেকে থেকে সেই মেঘেতে যায় বেড়াতে যায় 🎶 তোমাকে পাই................🎶 গানের প্রতিটা কলি আনায়ার হৃদয়ে এসে তীব্র গতিতে বাড়ি দেয়। গানের সুরে মিশে থাকা আবেগ তার হৃদয়কে কাঁপিয়ে তুলছে।কেন যেন আনায়ার মনে হলো এই সুরের প্রতিটি শব্দ শুধু তার জন্যই বাজছে। এই রাত, এই সুর, আর এই চাঁদের আলোয় শুধু তুই মানব-মানবের হৃদয়ের অব্যক্ত অনুভূতির কথা জানান দিচ্ছে। আনায়া আর বসে থাকতে পারে না সে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। ইউভানে চোখের দিকে তাকাতে তার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।আর কোনো বুলি না আওড়িয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে আনায়া। ইউভান সেদিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। -------- -------- --------- সকাল বেলা, আনায়া ফুরফুরে মনে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নামে। তখনই তার চোখ যায় ডাইনিং টেবিলে বসা ইউভানের দিকে সঙ্গে সঙ্গে পা থেমে যায়।কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। ইউভানের পরনে ডিপ ব্লু ফিটেড শার্ট, শার্টের হাতার বোতাম খোলা। প্যান্ট কালো, একদম স্ট্রেট কাট,চুলগুলো আরও বেশি নজড়কারা।ইউভানের এমন কিলার লুকে এক ঝলকেই অষ্টদশীর হৃদয়ে ভূমিকম্প হতে শুরু করে। কিন্তু এক নজরেই তার ভালো মুড একেবারে তেতো হয়ে যায়। ইউভানের পাশের চেয়ার খালি থাকার কথা, অথচ সেখানে তানহা বসে আছে।আনায়া চুপচাপ টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, চোখ সরু করে একবার তানহার দিকে তাকায়। তারপর মনে মনে বিড়বিড় করে, “ইউভান ভাইয়ার পাশে তো শুধু আমি বসব। অন্য কেউ কেন?” অন্যদিন হলে হয়তো ঝগড়া করত, কিন্তু আজ কিছু না বলে পেছন ফিরেই চলে যেতে লাগল। কিন্তু হঠাৎই পেছন থেকে একটা ভারী নরম গলা ভেসে আসে "কোথায় যাচ্ছিস তুই আনু? ব্রেকফাস্ট না করে?” ইউভানের কণ্ঠ শুনেই আনায়ার পা থমকে যায়। কিন্তু মুখটা গোমড়া করেই সে পেছন ফিরে তাকায়। চোখ নামিয়ে ধীর গলায় বলে, “বসার জায়গা তো নাই।” ইউভান এবার পাশে তাকায়, ঠিক তার ডান দিকে তানহা বসে আছে। কিন্তু সে কিছু বলে না, শুধু এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। আনায়া চোখের ভাষা বুঝতে পারেনি, কিন্তু তানহার মুখের রাগ একেবারে স্পষ্ট! আনায়া আর কিছু না বলে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। একটু পরেই সে অবাক হয়ে যায় ইউভান নিজেই খাবারের দুটো প্লেট নিয়ে পাশে এসে বসেছে।আনায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ইউভান ভাই আসলেই তার জন্য উঠে এসেছে?শরীরের ভেতর একটা হালকা শিহরণ খেলে গেল।ইউভান এবার শীতল দৃষ্টিতে আনায়ার দিকে তাকালো সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার বুক কেঁপে ওঠে সে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। আনায়া মনে মনে বলতে থাকে, "উফ্ আনু তুই তো মরে যাবি ইউভান ভাইয়ের প্রেমে। নিজেকে সামলা আনু।" এদিকে তানহার চোখে তখন আগুন জ্বলছে, কিন্তু পরিবারের অন্যরা যেন ব্যাপারটা লক্ষই করল না। ইউভান চুপচাপ একটা পাউরুটিতে জ্যাম লাগিয়ে আনায়ার প্লেটের সামনে রাখল। আনায়া তো তখন পুরো প্রেমের জোয়ারে ভাসছে! এমনিতেও জ্যাম-পাউরুটি তার ফেভারিট, তার ওপর যদি ইউভান ভাইয়ের হাতের স্পর্শ থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! দুই সেকেন্ডের মধ্যেই প্রথম টুকরাটা শেষ করে ফেলল। ইউভান এবার একের পর এক পাঁচটা পাউরুটিতে জ্যাম লাগিয়ে আনায়ার সামনে রাখে। কিন্তু সেগুলো শেষ করতেও আনায়ার পাঁচ সেকেন্ডের বেশি লাগেনি।ব্রেকফাস্ট শেষে আনায়া রুহির জন্য যেন অপেক্ষা করছে। তখনই ইকবল চৌধুরী ইউভানের সামনে এসে বলতে থাকলেন, “তোমার কোনো চেনা-পরিচিত ছেলে থাকলে একটু কথা বলিও তো বাবা বিয়ের জন্য।” ইউভান কফি খাচ্ছিল, হাত থামিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কার জন্য ছোট চাচ্চু?” ইকবাল স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললেন, “কার জন্য আবার? আমাদের তানহার জন্য।” তাৎক্ষণিক আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল! তানহার জন্য?মানে, তানহার সাথে ইউভান ভাইয়ার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছিল, তাই না? তার মানে ইউভান ভাইয়ার সাথে তানহার বিয়ে হবে না?ও মাই গড! একটার পর একটা গুড নিউজ।তার মুখে আপনা-আপনি হাসি ফুটে উঠল। এমন এক হাসি যা ঠোঁট থেকে সরানোই সম্ভব না। পাশেই সাইমা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন এমন কথা শুনে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তানহার কথা সেটা স্বামীকে বলতে ভুলে গিয়েছে। অপরদিকে তানহা রাগে ফুঁসছে।সে তো ইউভানকে বিয়ে করতে চাইছিল সেখানে তো উল্টো হচ্ছে। এরই মধ্যে ইউভান গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে, “ঠিক আছে, আমি কথা বলে জানাবো।” ইকবাল চৌধুরী মাথা নাড়াই। ঠিক তখনই রুহি চলে এলো, আনায়া ও রুহি একসাথে বাড়ি থেকে বের হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।গাড়িতে বসে আনায়ার মনটা যেন একেবারে ফুরফুরে হয়ে গেল এটা ভেবে যে ইউভান এখন শুধুমাত্র তার। ঠিক তৎক্ষণিক, আনায়ার নাকে ভেসে আসলো ম্যান্ডারিন ফলের পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণ। সেই ঘ্রাণে যেন অষ্টাদশীর পুরো পৃথিবী থমকে গেল। আর ইউভানের উপস্থিতিই স্পষ্ট হলো।বুঝতে বাকি রইলো না এটা ইউভানের পারফিউমের ঘ্রাণ।ইউভান গাড়ি স্টার্ট দেয়। আনায়া চোখ বন্ধ করে সে পারফিউমের ঘ্রাণ অনুভব করতে থাকে। তৎখান মনে মনে বলে উঠে, "ইউভান ভাই আপনার এই পারফিউমের সুবাস আমার হৃদয়ের কম্পন কেনো তোলে?" তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে ইউভানের দিকে তাকাল। এবার চোখ নামিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। এই বিষয়টা রুহি খেয়াল করে সে আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "কিরে তুই এত হাসছিস কেন? " আনায়ার ধ্যান ভাঙে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইউভান গভীর কণ্ঠে বলে উঠল, “মনে রং লেগেছে তাই।” আনায়া ফ্রিজ হয়ে গেল!সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। মুখ আপনা-আপনি হাঁ হয়ে গেল।রুহি তখন উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল, “কিরে আলু, তোর মনে আবার কি রং লাগলো? লাল, নীল, নাকি সবুজ?” আনায়া রাগী চোখে রুহির দিকে তাকায়। তারপর কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে, “অসভ্য! বদমাশ! বুইরা ফকস্টার কোথাকার! হুহুহু... রং লেগেছে ঠিকই বলতে পারলি, কিন্তু এটা বলতে পারলি না যে কার রং লেগেছে! হুহুহু! কী লাভ প্রফেসর হয়ে যেখানে নিজের ছাত্রীকে বোঝার একটুও ক্ষমতা নেই।” গাড়ি জানালা দিয়ে বাতাস এসে গালে লাগছে। আনায়া চোখ বন্ধ করল।তার হৃদয়ে সত্যিই রং লেগেছে।কিন্তু সে কি কখনও বুঝতে দেবে?কলেজের সামনে গাড়ি এসে থামল। আনায়া আর রুহি ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে ভার্সিটির গেটের ভেতরে প্রবেশ করে। ইউভান মুখে মাস্ক পড়ে নিয়ে গাড়ি এক জায়গায় পার্ক করে। ----- ----- "কী হলো সুন্দরী রাজি হয়ে যাও? ভার্সিটি টপবয় তোমাকে প্রপোজাল দিচ্ছে আর তুমি নাকি তাকে রিজেক্ট করছো?তুমি জানো এর ফল কি হতে পারে? চিন্তা নেই রাজিবের সাথে ১৫ দিন আর আমার সাথে ১৫ দিন কাটাবা মাসে ওকে বেবি।ডিল কনফার্ম।" পুরো শরীর ঘৃণায় জ্বলে উঠলো পিহুর সামনে থাকা ছেলেগুলোর কথা শুনে। মাত্র ভার্সিটিতে এসে এসব ঝামেলা শুরু হয়ে গেল।রাজিব আর তার গ্যাংরা মিলে প্রায় উত্তপ্ত করতে থাকে তাকে। কিন্তু পিহু কখনো শেষ হবে পাত্তা দেয় না।পিহু এবার বিরক্ত নিয়ে বলে ওঠে, "আমাকে যেতে দিন ভাইয়া দয়া করে। আমার ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।" সামনে থাকা ছেলেগুলো উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করে। পিহু আর সহ্য করতে না পেরে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজিব পিহুর ওড়নার আচলটা মুঠো করে ধরে।পিহু সঙ্গে সঙ্গে থেমে দাঁড়ায়। তার সমস্ত শরীর গুলিয়ে আসে।চোখ টলমল করে পানিতে।তখনই রাজিব বলে উঠে, "কোথায় যাচ্ছো বেবি? চলো আজ তোমাকে লং ড্রাইভে নিয়ে যাব।একদিন ক্লাস না করলে কিছুই হবে না। তুমি বরং আমাদের সাথে এনজয় করো লেটস গো বেবি।" পিহু রাগে সজোরে থাপ্পর মারে রাজিবের গালে। সঙ্গে সঙ্গে রাজীবের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সে তেড়ে এসে পিহুকে আঘাত করতে যাবে তার আগে একজোড়া শক্ত হাত থামিয়ে দেয় রাজিবকে।পিহু তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।ঠিক সেই মুহূর্তে ভারী পুরুষলী কন্ঠ তার কানে ভেসে আসে, " সাহস কি করে হয় ভার্সিটিতে এসে মেয়েদের উত্তপ্ত করার? এতো ভারী কন্ঠের আওয়াজ শুনে পিহু হৃদয় থমকে যায়। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় কাঙ্খিত পুরুষটির দিকে।তৎক্ষণ মনে হল কেউ তার হৃদপিণ্ড জোরে চেপে ধরেছে।অচেনা পুরুষটি মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ তার মুখে মাস্ক পরা তবে গাঢ় কন্ঠ এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ঘায়েল করে পিহুকে। ইউভানকে চিনতে পেরে ছেলেগুলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "সরি স্যার আর এমন হবে না। এবার মত মাফ করে দিন।" ইউভান গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠান্ডা কন্ঠে বলে, "নেক্সট টাইম যেন তোমাদের কোন মেয়ের আশেপাশে যেন না দেখি মাইন্ড ইট।" ছেলেগুলো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আর এক সেকেন্ড না দাঁড়িয়ে ওখান থেকে চলে যায়। ইউভান এবার চোখ রাখে পিহুর দিকে।এরপর দৃঢ় কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে, " আর ইউ ওকে?" পিহু কথা বলতেই যেন ভুলে যায়। অবাক চোখে তাকাই ইউভানের গাড়ো নীল চোখের দিকে।তার হৃদয় স্পন্দন থেমে যায়। তাও নিজেকে কোনমতে সামলে উত্তর দেয়, " থ্যাংকস আমাকে সাহায্য করার জন্য।" ইউভান মাথা নারায়। "নেক্সট কোন প্রবলেম হলে আমাকে বলতে পারেন।" এটুকু বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করে ইউভান। আর পিহু সে তো এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ইউভানের যাওয়ার দিকে।কেমন যেন তার কল্পনা পুরুষ হুট করে এসে তার মনের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করল।পিহু মুচকি হাসে এরপর ক্লাসরুমের দিকে যায়। ---- ক্লাসরুমে রুহি আর আনায়া বসে গল্প করছে। ঠিক তখনই পিহু এসে তাদের মাঝে ব্যাগটা রাখে। আনায়া পিহুকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, " তুই আশ্রম থেকে কবে আসলি?আর আমাদেরকে একবার জানালিও না। তুই এতটা স্বার্থপর কবে হয়ে গেলি পরটা।" পিহু মুচকি হেসে বলে, "তোদেরকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো না বলে চলে এসেছি।" রুহি সন্দেহজনক ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল, "সারপ্রাইজ? আমি তো ভেবেছি বিয়ে করে ফেলেছিস।" পিহু গম্ভীর মুখে বসে বলল, "হুম… মনে হয় আমার জামাই সত্যি সত্যিই চলে এসেছে!" আনায়া আর রুহি একসঙ্গে চিৎকার করল, "কি? কই? কই??" পিহু কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসল।তার ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত। আজ হঠাৎ ইউভানকে দেখে তার মনে হলো যে তার হৃদয়কেও জোরে বাড়ি মেরেছে।প্রথম দেখায় প্রথম ভালোবাসা। পিহু নিঃশব্দে হাসলো। আনায়া অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো, "দেখ তুই যদি এখন তোর মনগড়া কাহিনী বলিস। তাহলে আমি আর রুটি মিলে তোকে উগান্ডা পাঠানোর দায়িত্ব নিব বলে রাখলাম।আগে বল তাকে দেখতে কেমন? " পিহু ঠোঁট চেপে হেসে বলল, "সমস্যা নেই তোদেরকেও সাথে করে নিয়ে যাব।আর আমি তাকে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাইনি শুধু চোখ দুটোই দেখেছি।" রুহি সঙ্গে সঙ্গে বলল, "ওরে বাবা আমার মনে হয় তুই যাকে পছন্দ করেছি সে কোন ভুত। তোর প্রেমিক আত্মা আই রোজগার করে তো? না হলে দেখ একদিকে তোর ভালোবাসা, অন্যদিকে সংসারের হিসাব। সে কি বাসা ভাড়া দিতে পারবে? বিদ্যুৎ বিল দিবে কে?" আনায়া উচ্চস্বরে হাসতে থাকে এরপর মাথা নেড়ে বলল, "তাহলে আমাদেরকে তো X-ray Vision মেশিন দিয়ে তোর হবু বরকে দেখতে হবে।কারণ খালি চোখে তো আর আত্মাকে দেখা যায় না।" পিহু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। এদেরকে কিছু বোঝানো আর গাধাকে বোঝানো সমান কথা। আনায়া আর রুহি তার কলেজ ফ্রেন্ড।পিহু কিছুদিনের জন্য অনাথ আশ্রমে গিয়েছিল বেড়াতে। যেখানে সে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে তার পরিবার বলতে কেউ নাই।তার বাবা মার পরিচয় সে আজ অবধি জানে না। ছোটবেলা থেকে নিজেকে এতিম বলেই দাবি করে এসেছে সে।তবে এত দুঃখের মাঝেও সে তার ভালোবাসা জীবনসঙ্গির অপেক্ষায় আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্লাসে প্রবেশ করে রোহান ও তার গ্যাং। রোহানের মাথায় আজ ক্যাপ পড়া। সে আজ সম্পূর্ণ শান্ত কোন মেয়েকে আর আজ উত্তপ্ত করছে না। হয়তো কালকের শাস্তির ভয়ে।রোহান আনায়ার বেঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল রুহি বাঁকা হেসে নিজের পা টা বাড়িয়ে দেয়।এই ছেলেকে তার দুই চোখে দেখতে ইচ্ছা করে না। রোহান রুহির পায়ে বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পরে। সাথে সাথে রোহানের মাথার ক্যাপটা খুলে যায়।সবার চোখ চলে যায় রোহানের ন্যাড়া মাথার দিকে। উচ্চস্বরে হাসতে থাকে এক মুহূর্তে সবাই। রোহানের মাথায় একটা চুলও নাই। আনায়া নিজেকে আটকে রাখতে পারল না হাসতে হাসতে পিহুর গায়ে ঢলে পড়ে। রোহান অপমানে লজ্জায় উঠে দাঁড়ায় ক্যাপটা পুনরায় মাথায় দেয়। তখনই রুহি বলে উঠে, "আরে এখন ক্যাপ মাথায় দিয়ে লাভ কি? সবাই তো দেখে ফেলেছে তোমার তোমার ছাদ ফাকা হিহি।" রুহির কথা শুনে পুরো ক্লাস জুড়ে হাসির রোল পড়ে যায়। রোহান আর এক সেকেন্ড ক্লাসে দাঁড়াতে পারে না রাগী চোখে একবার রুহির দিকে তাকিয়ে হনহ নিয়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।আনায়া হাসতে হাসতে বলে, "বেচারা চুল গুলোর উপর কত ঝর না বয়ে গেল ইশশ।সেদিন জুতার নিচে চুল গুলো চাপা পরলো কিন্তু আজ সেই চুলগুলো নাই।" বলেই আবারো হাসতে থাকে আনায়া। তার সাথে তাল মিলিয়ে রুহি আর পিহু ও হেসে গড়াগড়ি খায়।রোহান রাগে দুঃখে ক্যাম্পাস দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।তার সাথে গত রাতে ভয়ংকর একটি ঘটনা ঘটে। কেউ একজন মাঝরাতে এসে তার হাত পা বেঁধে তার চুলগুলো কেটে নিয়ে চলে যায়। আর সে কিছুই করতে পারে না। সকালে তার বাবা মা দরজা ভেঙে এসে তার হাত-পা খুলে দেয়। রোহান এসব বিষয় নিয়ে একেবার ভেঙ্গে পড়েছে।সেই পথ দিয়েই ইউভান যাচ্ছিল ক্লাস রুমের দিকে।রোহানকে দেখে ইউভান কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়ায়। এরপর কিছু একটা ভেবে মাস্কের আড়ালে মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনদিকে ঠেলে দেয়।ইউভান রোহানের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে শুধালো, "আমি ব্যতীত তোর দৃষ্টিতে অন্য কিছু আটকালে সেটাকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলব আমি সোলবিট। ইউ বিলং টু মি। নট টু দ্য ওয়ার্ল্ড, নট টু ফেইট জাস্ট মি।" চলবে,


👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ