🔖 আত্মার_অন্তরালে

✍️ লেখক: [প্রীতি_আক্তার_পিহু]
📖 পর্ব: [০৬ ]
Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।
👉পর্ব ( ০৬ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু
ভার্সিটির ক্লাস শেষে রুহি আগে চলে গিয়েছে কারণ ও পার্লারে যাবে।আনায়ার এসব মোটেও ভালো লাগেনা তাই সে যায়নি। আনায়া একে একে উন্মত্ত হয়ে চিল্লাচ্ছে, "এই বদমাশ অসভ্য ছেলে! সাহস কীভাবে হয় আমার লিলি কে পা দিয়ে লাথি মারার? সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি যেন হতবাক হয়ে পড়ে, নিরীহভাবে বলে, "আপি, বলছি তো, দেখতে পাইনি, মাফ করে দেন প্লিজ!" আনায়া তখন রেগে গড়িয়ে যায়, "তোকে কিভাবে মাফ করে দেবো বল? তুই আমার প্রিয় লিলি কে পাড়িয়ে চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলেছিস! আগে আমার লিলি ফিরিয়ে দে!" ছেলেটি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায় ঘটনা কিছুক্ষণ আগে। সে পকেটে হাত দিয়ে আনমনে হাটছিল হঠাৎ তার তার পায়ের কাছে কিছু একটা ভেঙে যাওয়ার আওয়াজ পাই সে পা টা উঠে দেখে একটা পুতুল হেয়ার ব্যান্ড ভেঙে গিয়েছে। তৎক্ষণিক তার সামনে এসে এই মেয়েটা বকাঝকা করে যাচ্ছে। এই হেয়ার ব্যান্ডের নাম নাকি লিলি। লোকজন দেখতে থাকে, আনায়ার ঝগড়া করে যাচ্ছে ভার্সিটির গেটের সামনে। আর ছেলেটি বাঁচার জন্য সব চেষ্টাই করছে। তবে তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা—হেয়ার ব্যান্ডটা ফিরিয়ে দিতে হবে, নইলে এই ঝগড়া শেষ হবে না। এরই মাঝে, পেছন থেকে গম্ভীর গলার আওয়াজ শোনা যায়, "এখানে কী করছিস তুই?" আনায়া চেনা পরিচিত সেই আওয়াজ শুনে থমকে যায়। তার চোখে কিছুটা ভয় ও অস্থিরতা ফুটে ওঠে। আশেপাশের মানুষের চোখ কেবল তাদের দিকে। । পেছনে ফিরে দেখে ইউভান দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে রাগের ছাপ স্পষ্ট। বিকালের মিষ্টি রোদ ইউভানের চেহারায় পড়ছে চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। আনায়া এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ইউভানের উপস্থিতি এক টুকরো নিঃশব্দ ঝড়। রুদ্ধ রাগী চোখে আনায়ার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে, "কথা বলছিস না কেন, বেয়াদব!" আনায়া হঠাৎ ভয়ে স্নায়ু শিথিল করে ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে বলে, "ইউভান ভাই এই ছেলেটা আমার লিলিকে পা দিয়ে চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলেছে!" ইউভান কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে যায়। সে কিছুতেই এই কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারে না। সেদিকে তাকিয়ে থাকা ছেলেটি একটুও পিছপা না হয়ে বলে, "স্যার দেখুন! অ্যাক্সিডেন্টে তার হেয়ার ব্যান্ডটা ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরেও আপু ঝগড়া করেই যাচ্ছে।" এখন ইউভান পুরোটা বুঝতে পারে, এটি একটি হেয়ার ব্যান্ডের ঘটনা। সে কিছুটা অবাক হয়ে আনায়াকে দেখে এবং গম্ভীর কণ্ঠে বলে, "তুই একটা হেয়ার ব্যান্ডের জন্য এত ঝগড়া করছিস!" আনায়া একটু ক্ষোভ সহকারে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, এটা শুধুমাত্র একটা হেয়ার ব্যান্ড নয়, এটা আমার পছন্দের পুতুল লিলি একে সব সময় আমি আমার মাথায় রাখি। কিন্তু আজকে ভুলবশত সে মাটিতে পড়ে গিয়েছে " ইউভানের এক মুহূর্তের জন্য খুব হাসি পায় কিন্তু সে হাসিটা চেপে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে, " আনু তোর তো একটু বেশি বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে!" আনায়া জেদ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে বলে, "ওকে আমার হেয়ার ব্যান্ড ফিরিয়ে দিতে বলুন। না হলে আমি ওর চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো " ইউভান হতভম্ব হয়ে যায় চোখ বড় বড় করে আরুর দিকে তাকায়। কোন কথা না বলে সে আনায়াকে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়। আনায়া হতভম্ভ হয়ে যায় সে ইউভানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইউভান এক ধমক দিয়ে বলে, "তোর মুখ থেকে আর একটা কথা আমি শুনতে চাই না সেদিনের চরের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে " আনায়ার মন খারাপ হয়ে যায় রেগে ফুলে জানালার দিকে ফিরে বসে। ইউভান কিছুটা থেমে বলে "রুহি কোথায় " আনায়া অন্য দিক ফিরেই গম্ভীর কণ্ঠে বলতে থাকে "জানিনা ও আগে বাসায় চলে গিয়েছে। " আর কোন কথা হয় না চারদিকে নীরবতা গাড়ি চলতে শুরু করে। ______ গাড়ি এসে থামল শপিং মলের সামনে। আনায়া কিছুটা অবাক হয়ে ইউভানের দিকে তাকায়। সে বুঝতে পারে না, ইউভান কী করতে এসেছে এখানে। ইউভান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্তের জন্য আনায়ার দিকে তাকায়। তারপর সরাসরি শপিং মলের দিকে চলে যায়। আনায়া গাড়ির ভিতর বসে থেকে প্রায় কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না, সে বোঝে না কী হচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ইউভান হাতে দুইটা বড় শপিং ব্যাগ নিয়ে আসে। আনায়া কিছুটা অবাক হয়ে শপিং ব্যাগগুলোর দিকে তাকায়, এবং মনে মনে ভাবে, "এটা কি? শপিং করেছে?" ইউভান গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। শপিং ব্যাগগুলো আনায়ার কোলের উপর রাখে। আনায়া এবার আরও অবাক হয়ে যায়। সে ধীরে ধীরে ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলে, "এগুলো কী?" ইউভান গম্ভীর কণ্ঠে, একেবারে সরলভাবে বলে, "খুলে দেখে নে।" আনায়া অস্থিরভাবে শপিং ব্যাগগুলো খুলে ফেললো। মুহূর্তের মধ্যে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারণ, ব্যাগের ভেতর ছিল বিভিন্ন স্টাইলে এবং বিভিন্ন রঙের পুতুল দেওয়া হেয়ার ব্যান্ড। সে লিলির কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যায়। এখন তার মনে হয়, "একটা হারিয়েছি, তবে আরো একশটা পেয়েছি, ক্ষতি কিসের?" তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে একে একে হেয়ার ব্যান্ডগুলো খুলে দেখছিল, আর মাথায় দিয়ে নিজের চেহারা আয়নার দিকে দেখতে থাকে।সে পুরোপুরি মুগ্ধ হয়ে, তার মাথার উপর একটি হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে দেখতে থাকে।ইউভান আড় চোখে আনায়ার কার্যকলাপ দীর্ঘক্ষণ যাবত লক্ষ্য করছে। এই মেয়ের মধ্যে কত পরিমান ছেলেমানুষি সেটা সে খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে। আনায়া মনে মনে ভীষণ খুশি। ঠিক সেই মুহূর্তে, একটি কালো রঙের গাড়ি তাদের গাড়ির পাশ কাটিয়ে দ্রুত স্পিডে চলে যায়। ইউভান এক মুহূর্তের জন্য চমকে যায় এবং গাড়ি সামলাতে একটু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। গাড়িটি সামলে থামানোর পর, আনায়া কিছুটা ঝুঁকে পড়ে। গাড়িটি স্পিডে চলে যাওয়ার পর ইউভান আর দেখতে পায় না। হঠাৎ ইউভানের ফোনে একটি নোটিফিকেশন আসে। সে সেটির দিকে তাকিয়ে কিছুতো চিন্তিত হয়। ইউভান তৎক্ষণিকভাবে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে আনায়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে, "গাড়ি থেকে নাম।" আনায়া কিছুটা হতভম্ভ হয়ে তাকাল। সে বুঝতে পারে না, ইউভান কেন এমন আচরণ করছে।ইউভান খুব জোরে ধমক দিয়ে বলে, "গাড়ি থেকে নামতে বলেছি তোকে।" এ মুহূর্তে, আনায়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে, "কেন ভাইয়া?" ইউভান এবার আরও রেগে গিয়ে সোজা বলে, "এখান থেকে বাসা বেশি দূর না। একা একা চলে যা। আমার কাজ আছে, অন্য কোথাও যেতে হবে।" আনায়া কিছুটা শকড হয়ে যায়। তার মন কাজ করতে শুরু করে। সে জানে না কীভাবে উত্তর দেবে, তবে ইউভানের আচরণ একেবারে বদলে গেছে।আনায়া এবার গাড়ি থেকে নেমে যায়। সবকিছু কেমন অগোছালো অগোছালো লাগছে হঠাৎ এই পরিবর্তন সে বুঝতে পারছে না। ইউভাম আর কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায় উল্টো পথে আনায়া তার দিকে তাকিয়ে রইল ফ্যাল ফ্যাল চোখে।তার মনটা এক মুহূর্তে ভেঙ্গে যায় ইউভান ভাই কিভাবে পারলো তাকে এভাবে মাঝ রাস্তায় ফেলে আসতে। প্রায় বিকাল গড়িয়ে চারদিকে সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। আরু কিছুটা চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে। তার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়ে।উল্টাপাল্টা ভাবনাই মাথায় ঘুরছে। সে জানে ইউভান চাইলে তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারতো, কিন্তু কেন তাকে অমন ছেড়ে চলে যেতে হলো? অষ্টাদশীর মন অভিমানে ভরে যায়। আর কখনো ইউভানের সঙ্গে কথা বলবে না। বদমাশ খাটাস ফকস্টার কোথাকার। ______ চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। আনায়া হেঁটে হেঁটে বাড়ির দিকে চলে আসে। আধাঘণ্টার মধ্যেই সে বাড়ির সামনে পৌঁছায়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার পা দুটো কিছুটা থমকে যায়। অন্যদিন যেখানে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে থাকে, সেখানে আজ কেউ নেই। পুরো বাড়ি যেন স্তব্ধ, নিরব, নিষ্ঠাবতায় ছেয়ে গেছে। তার মন বিভ্রান্ত, সে বুঝতে পারে না, বাসায় কি কিছু হচ্ছে? কেন আজ কেউ নেই? ঠিক তখনই সিঁড়ি বেয়ে আয়ান নেমে আসে। আনায়াকে দেখে সে বলল, "তুই এত দেরি কেন করলি? আনায়া কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে কী বলবে বুঝতে পারে না। ইউভান ভাই তাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেছে, কিন্তু সে কী করবে? কী বলবে? আয়ান তখন বলে, "তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, আমাদের বের হতে হবে," বলে চলে যায়। আনায়া এবার একটু ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, "কই যাব ভাইয়া?" আয়ান, গম্ভীর হয়ে বলে, "আগে রেডি হয়ে নে, তারপর দেখতে পারবি কোথায় যাব।" আনায়া আর কোনো প্রশ্ন করে না।কিছুক্ষণ বাদে, সে উপরে উঠে গিয়ে রেডি হয়ে আসে। নিচে এসে গাড়িতে বসে, আয়ান গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, "যেখানে যাচ্ছি, সেখানে সবাই আছে।" আনায়া আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ বসে থাকে। তার মন খারাপ। ইউভানের বিষয় নিয়ে সে চিন্তিত। কে কোথায় গেছে, সে তাতে কোনো মাথাব্যথা করছে না। গাড়ি এসে থামে একটি কমিউনিকেশন হলের সামনে, যেখানে বড় অনুষ্ঠান চলছে। গাড়ি থামতেই আনায়া একটু অবাক হয়ে দেখে। তার মনে হয়, হয়তো কোনো বিয়ের দাওয়াতে এসেছে। সে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে দেখতে পায়, চারদিকে জমজমাট অবস্থা।লোকজনের হাসাহাসি, কথা বলার আওয়াজ। আনায়া কিছুটা অবাক হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।চারদিকে তাকিয়ে সে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে দেখতে থাকে। তবে, সে কোথাও তাদের পায় না। আনায়া একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখ, তার পরিবারের সকলকে এক এক করে দেখে।তবে রুহিকে খুঁজে পাচ্ছে না সে। কিছুটা চিন্তিতভাবে এক পাশের মেঝে দিয়ে চোখ বোলায়, কিন্তু রুহি কোথাও নেই। সে আরও একটু এগিয়ে যায়। হঠাৎ আনায়া চোখ যায় সিঁড়ি বেয়ে নামা রুহি এবং তার সঙ্গে আসা তানহাকে লক্ষ্য করে। তার চোখ পড়ল তানহার দিকে একটু বেশি সেজে উঠেছে—মেরুন কালারের লেহেঙ্গা। তানহাকে স্টেজে নিয়ে বসানো হলো। আনায়া সেদিকে কিছুটা বিভ্রান্ত নিয়ে তাকিয়ে রইল । তখনই আহসান এবং ইব্রাহিম চৌধুরী যাদের দেখার সাথে সাথেই তানহার মাথায় হাত দিয়ে কিছু কথাবার্তা বলে। তবে, এসব ঘটনা যেন কোনোভাবেই আনায়ার মাথায় ঢুকছে না। আর ঠিক তখনই রুহি তার পাশে এসে, হালকা খোঁচা দেয়। আনায়া রুহির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে "এখানে কি হচ্ছে বলবি আমাকে? " রুহি অবাক বলল, "আজকে ইউভান ভাইয়ের সঙ্গে তানহা আপুর এনগেজমেন্ট।"।" আনায়া যেন তার পায়ের নিচে মাটি সরে যাওয়ার মতো অনুভব করে। এক মুহূর্তে মাথায় বাজ পড়ে, মনে হয় পৃথিবীটা এলোমেলো হয়ে গেছে। চোখে জল চলে আসে, কিন্তু সে সেগুলো সাবধানে মুছে ফেলে, যেন কেউ দেখতে না পায়। হৃদয়টা যেন রক্তাক্ত হয়ে যায়। এত দিন ধরে যে সম্পর্কের অগোছালো দিকগুলো সে ভালোবাসতো, আজ সেগুলো এক মুহূর্তে ভেঙে গেল। এমনি অবস্থায়, রুহি সামনের দিকে তাকিয়ে বলে, "ওই দেখ ইউভান ভাইয়া চলে এসেছে।" আনায়া কাঁপতে কাঁপতে স্টেজের দিকে তাকায়। ইউভান ফরমাল পোশাকে একদম সজ্জিত, কালো প্যান্ট আর সাদা শার্টে সজ্জিত ইউভানের হাসি যেন আরও তীব্রভাবে তার বুকের মধ্যে ধ্বনি তুলতে থাকে। এই হাসি দেখে আনায়ার বুকটা যেন ভেঙে যাচ্ছে, হৃদয় হাহাকার করছে।সে মনে মনে বলতে থাকে "এটাই তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ইউভান ভাইয়া " তখনই সায়মা বেগম স্টেজে উঠে আসে, আনায়া তাদের দেখে নীরব হয়ে থাকে।ইউভান এবং তানহার হাতে আংটি দেওয়া হয় একে অপরকে পড়ানোর জন্য। আনায়া যেন অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে সে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এই দৃশ্য তার পক্ষে দেখা সম্ভব না। প্রথম ভালোবাসা নামক কষ্ট তাকে আছড়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে।সে সবার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। কেউ অনুভব করতে পারল না তার অনুপস্থিতি। সবাই হাসি আনন্দে মেতে আছে। আনায়া গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে, তার চোখ দুটি লাল হয়ে আছে। মনটা একেবারে বিষন্ন। সে গাড়ির স্টার্ট দেয়, কিন্তু যেন গাড়ির গতির সঙ্গে সাথে তার হৃদয়ও আরও ধীরে ধীরে ভারী হয়ে যাচ্ছে। তার চুলগুলো এলোমেলোভাবে কাঁধে ঝুলছে, সোনালী চোখ দুটি কেমন অস্পষ্ট হয়ে গেছে। গাড়ি থামল তাদের বাড়ির সামনে কিন্তু সে গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে অগ্রসর হলো না বরং অন্ধকার বাগানের দিকে হাটতে থাকলো। যে অন্ধকার তার মনের অন্ধকারের থেকে কম। সে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে। চাঁদের হালকা আলোই তার মুখ কিছুটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সে এবার নিচের ঘাস হাত দিয়ে টেনে হিচড়ে ছিড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। চোখের পানির মতো হালকা ছোঁয়াও যেন হারিয়ে যায়, গলা ধরে আসে। তাকে যেন দয়া করে কেউ আলিঙ্গন করতে চায়।প্রথম ভালোবাসা যে ক্ষত দেয়, তা কখনো শুকাতে চায় না। অষ্টাদশীর হৃদয়ে এখনও সেই ব্যথা, সেই বেদনা কেঁদে ওঠে, আর সে হেঁটে চলে যায় এক অজানা পথে, যেখানে আলো নেই, কেবল অন্ধকার। আনায়া কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে, "আমার সঙ্গে এমন কেন করলেন ইউভান ভাইয়া? আপনি যে আমার হৃদয়ের জন্য এক নামহীন হাহাকার!" হঠাৎ আনায়া অনুভব করে তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সে এবার উঠে দাঁড়ায় ধীরে ধীরে পেছনদিকে ফেরে। সঙ্গে সঙ্গে আয়ান কে দেখে কিছুটা অবাক হয়। আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে তার বোনের দিকে একফোঁটা পানি তার বোনের চোখ থেকে পড়ছে, যা সে কখনো দেখেনি। সে আনায়াকে হল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিল তার কিছুটা সন্দেহ হয় এ কারণে সে আরো পেছন পেছন আসে। এসে তার বোনের এই আর্তনাদ দেখে তার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আয়ান এক সেকেন্ডও দেরি না করে আরুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। “কী হয়েছে তোর?” – তার কণ্ঠে বিস্ময় এবং চিন্তা ঝরে পড়ে। আনায়া চুপচাপ থাকে, ঠোঁট কামড়ে আরে, কষ্টের মধ্যে নিজের গলা আটকে রেখেছে। এক সেকেন্ড পর সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমি তাকে মোনাজাতে চেয়েছিলাম ভাইয়া কিন্তু… আল্লাহ আমাকে তাকে দিল না।” আয়ান কিছুটা অবাক হয় তারপরও মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে, “ইউভানকে ভালবাসিস তুই? তোর ভালোবাসাকে অন্তরে বেঁধে রাখ, কেউ জানবে না। তোর এই ভালোবাসা যদি পরিবারের সামনে আসে তাহলে এর ফল তোকে জীবন দিয়ে চুকাতে হবে " আনায়া অবাক হয়ে তার ভাইয়ের দিকে তাকায়, তারপর এক অজানা বিষণ্নতার সঙ্গে বলে, “ভাইয়া আমি জানি তুমি আমার মনের কথা বুঝে যাও না বলার সত্ত্বেও কিন্তু আমি তো তোমার মত শক্ত না।" আয়ান কিছুটা থেমে গম্ভীর কন্ঠে বলে "আমি চাইনা তুই আর নিজের চোখের পানি ফেলিস। আমার বোন কারো সঙ্গে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করুক এটা আমার একটুও পছন্দ না।" আনায়ার কান্না থেমে যায় সবাক চোখে বলে "ঠিক তোমার মত তাই না ভাইয়া যেমন তুমি রুহির সামনে নিজেকে শক্ত রাখার মিথ্যা প্রচেষ্টা করে যাও " আয়ান কিছু বলে না আগেই এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।আনায়াকে ছোট বোনের মত বড় করলেও রুহির সাথে সেই আচরণ কোনদিন করতে পারেনি। রুহির জন্য তার মনে অন্যরকম অনুভূতি যে অনুভূতি গুলো কখনো প্রকাশ করতে পারেনি সে। আনায়া তাচ্ছিল্য হাসে। তারপর আয়ান আনায়ার হাত ধরে টেনে তাকে বাড়ির দিকে নিয়ে চলে। আনায়া কিছু না বলে চুপচাপ থাকে, তার হৃদয়ের ব্যথা যেন সহ্য করা যাচ্ছে না। *** আনায়া গভীর রাতে বিছানায় বসে, অন্ধকার রুমের মধ্যে যেন নিজেই হারিয়ে গেছে। কমিউনিকেশন হল থেকে সবাই চলে গেছে, আর সে এক মুহূর্তের জন্যও নিচে নামেনি, কারণ ইউভানের সামনে যাওয়ার সাহসও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে। না, আর কখনো ইউভানের সঙ্গে দেখা করতে চায় না।ইউভানের উপস্থিতি আর অষ্টাদশীকে ভেঙে ফেলতে পারবে না। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তার হাতে ডায়েরি আসে। সযত্নে হাত দিয়ে ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলি বোলাতে বোলাতে সে একটা পুরনো পৃষ্ঠা খুলে দেখে।প্রতিটা পৃষ্ঠার ভাজে দুইটা করে সূর্যমুখী ফুল। আনায়ার বড্ড হাসি পায় তার জীবনে অবাস্তব কাহিনী গুলোর কথা চিন্তা করে। ইউভান শুধু একটি ধোঁয়াশা, যা কখনো স্পষ্ট হতে পারেনি, আর আজ তার এই কল্পনা শুধু একে একে মিলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে সে গিটার আওয়াজ। আনায়া বিছানা থেকে নামে না তাচ্ছিল্য হাসে। যতই গিটার বাজুক, অষ্টাদশীর মনের বেদনা আজকে ঠান্ডা হবে না। ইউভান তো এখন অন্য কারোর, আর সে আর কখনো তার নয়। চোখ বন্ধ করে কয়েক ফোঁটা পানি তার গালে গড়িয়ে পড়ে। গিটারের আওয়াজ ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। আনায়া বিছানা থেকে এক পা নিচে নামায়। কিন্তু তার পা যেন থেমে যায়, সে নিজেকে ঠেকাতে চায়, কিন্তু গিটার সুরের আওয়াজ তাকে এক অজানা শক্তিতে টানছে। একে একে সে তার পা টেনে নিয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে আসে। শরীরের শক্তি যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়, হাটু গুঁড়িয়ে বসে পড়ে। পর্দার আড়ালে বসে, চোখ বন্ধ করে নেয়। গিটারের আওয়াজ ক্রমশ কমে আসে এবার ভেসে আসে গানের গলা, কিতনি চাহাত হে দিল মে তু জানে না 🎶 ক্যসে দিলকো সমঝায়ে, দিল মানে না🎶 বাতোকো তেরি, হাম ভুলা না সাকে 🎶 হোকে যুদা হাম, না যুদা হো সাকে, দিল মে হে জিন্দা, হাড় ঘারি তু কাহি🎶 হোকে যুদা হাম না যুদা হো সাকে 🎶 আনায়া ঠোঁট কামড়ে কান্নার আওয়াজ দমানোর চেষ্টা করে।ভালোবাসা এত কষ্টের কেন? যখন ভালোবাসা শুধু আঘাত হয়ে ফিরে আসে, হৃদয়কে পোড়াতে পোড়াতে ছারখার করে দেয়। ইউভানের কন্ঠের গান তার হৃদয়কে আরো বেশি ব্যথিত করছে।আনায়া পুরো শরীর অসহায় আসছে যে চাইলেও ওখান থেকে উঠতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে নাই আর মনে মনে বলতে থাকে "সামনের সকালটা আমার জীবনের এক নতুন সকাল ইউভান ভাই। আপনার নেশায় আর আমি আসক্ত হতে দিব না নিজেকে এটা আমার নিজের প্রতি নিজের ওয়াদা থাকলো " ওখানেই ঘুমিয়ে পরে আনায়া।তার শরীর আর তাকে সাই দিচ্ছিল না যে সে উঠে বিছানায় যাবে।তবে তার কিছুক্ষণ বাদেই বেলকনি দিয়ে কেউ একজন প্রবেশ করে। লোকটি আনায়াকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। আরুর বিষন্ন চেহারার দিকে তাকিয়ে লোকটির বুকটা যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। সে কিছুটা ঝুঁকে, তার চোখে এক তীব্র অস্থিরতা ফুটে ওঠে।আনায়ার নিঃশ্বাসের ঘন আওয়াজ লোকটির কানে বাজছে। লোকটি এবার তার মুখ আনায়ার কানের কাছে নিয়েই ফিসফিস কন্ঠে বলে, "তুমি অন্য কারোর নেশায় আমাকে কিভাবে ভুলে যেতে পারলে? আমার নেশা এত তাড়াতাড়ি কেটে গেল তোমার উপর থেকে। যে এই দুই দিনে অন্য কারোর উপর এতটা আসক্ত হয়ে গিয়েছো গোল্ড মেরি?" লোকটি এবার আনায়ার গোলাপি ঠোটের উপর হাত দিয়ে স্লাইড করতে থাকে। তার মুখে হাসি চোখ দুটো খুবই ভয়ংকর। আনায়া ঘুমের মধ্যে সেই পুরনো অনুভূতি টেরপাই। এটা নতুন কিছু না এর আগেও সে গভীর রাতে এরকম অনুভূতি অনুভব করেছে। সে চোখ মেলে তাকাতে চাইলেও পারেনা ঘুমের কাছে হেরে যাই। লোকটি বাঁকা হেসে আবার ফিসফিস কন্ঠে বলে, "অন্য কারোর মায়ায় পড়ার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে জান। বিকজ ইউ আর মাইন অনলি মাইন।" বলেই লোকটি চোখ তুলে তাকায় আনায়ার দিকে। তারপর আনায়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। যেন এখানে এসে অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছে সে আবারো স্পষ্ট কন্ঠে বলে, "ইউ আর মাই অবসেশন গোল্ডমেরি।" কিছু সময় বাদে লোকটি আবার আগের মত বেলকনি টপকে চলে যায়। আনায়া সেরকম অচেতন হয়ে শুয়ে রইল। চলবে,
Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।
👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব
0 মন্তব্যসমূহ