🔖 আত্মার_অন্তরালে

✍️ লেখক: [প্রীতি_আক্তার_পিহু]
📖 পর্ব: [০ ৭ ]
Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।
👉পর্ব ( ০৭ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু
শেষ তিন দিন এক অদ্ভুত স্থবিরতার মধ্যে কেটেছে আনায়ার। আনায়া জানে ইউভান ইচ্ছাকৃতভাবে তার সামনে আসে না আর সে নিজেও এড়িয়ে চলে।কিন্তু তাতে কি আনায়ার কষ্ট এক ইঞ্চি কমেছে? নাহ রাতের অন্ধকার তার কষ্টগুলোর সাক্ষী হয়ে আছে।এখন সকাল আনায়া ভার্সিটি জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে। আগের মতো এখন আর ব্রেকফাস্ট টেবিলে যায় না, কারণ সেখানে ইউভান থাকে। তার সামনে গেলে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত কষ্ট জেগে ওঠে যেন পুরনো ক্ষত নতুন করে খুঁড়ে দেওয়া হয়। তাই দূরত্বটাই সহজ মনে হয় নিরাপদ মনে হয়। কিন্তু রুহি আসছে না। অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে উঠল সে। সে এবার ছাদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। সকালের মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে আছে চারদিকে, হালকা বাতাস বইছে। কিছুটা অবসর ভেবে সে ছাদের দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু হঠাৎ পা থেমে যায় আনায়ার। ছাদের মাঝখানে বসে আছে ইউভান এক কোণায় নিঃশব্দে। তার হাতের ফোনে কিছু একটা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আনায়ার বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্যতা তৈরি হয়। এই তিন দিন সে ইউভানকে ঠিকভাবে দেখেনি, দূর থেকে চোখে পড়লেও তাকিয়ে থাকেনি। কিন্তু আজ কেন যেন ছেলেটিকে অচেনা লাগছে।ইউভানের মুখের গাম্ভীর্য এখনো আগের মতোই।আনায়া এক পা পিছু হটল।নিচে চলে যাবে? পালিয়ে যাবে?না!এই ভয় তাকে দুর্বল করে দেবে। সে যদি সত্যিই ইউভানের সামনে শক্ত থাকতে চায়, তাহলে এই লুকোচুরি বন্ধ করতে হবে। সাহস সঞ্চয় করে সে ধীরে ধীরে ছাদের আরেক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। সকালের নরম আলো তার গায়ের ওপর পড়ে তার চুলগুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। চুলগুলো আজ খোলা, বাতাসে উড়ে এসে তার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। তার পরনে সফট সাদা কুর্তি, নিচে গাঢ় নীল পালাজো। আনায়ার ঠোঁট যেন একসঙ্গে আটকে যাচ্ছে।এত কিছু পেরিয়ে সে আজ এখানে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ইউভান কি তাকিয়ে দেখছে? তার দিকে একটুও খেয়াল করছে?আনায়া ধীরে ধীরে শ্বাস নিল। কিন্তু ছাদে হঠাৎ আনায়া অন্য কারোর উপস্থিতি টের পায়। একটা অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে সে একটু পেছনে ফিরে তাকায়।সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি আটকায় তানহার উপর। এনগেজমেন্ট এর দিন থেকে তানহার সাথে তার দেখা হয়নি। আজ মনে হয় বাড়িতে এসেছে তানহা তার কফির কাপ, আর তার মুখে কিছুটা মিষ্টি হাসি। সে কফিটা এক হাতে এগিয়ে দেয় ইউভানের দিকে, যে তার ফোনে অগণিত তথ্য দেখে যাচ্ছিল, যেন কিছুই টের পাচ্ছেন না। ইউভান একটু নরম স্বরে বলে, "আপনার জন্য কফি এনেছি।" ইউভান মনোযোগ ভাঙে, চোখ কপালে তুলে কফির দিকে তাকায়। আনায়া সেদিকে এক ঝলক নজর দেয়, কিন্তু তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত ঝড় শুরু হয়। কী হচ্ছেটা! একদিন আগেও তো কিছু ছিল না, আজ কেন সব এত অস্বস্তিকর?আনায়া তার বুকের অজানা কষ্ট সযত্নে চেপে রাখে, বাইরে কোনো অশান্তি প্রকাশ হতে দেয় না। তানহা কফির মগটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।ইউভান কফির মগটি তানহার হাত থেকে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, "খেয়ে নেবো, যাও।" তানহার গলা নেমে আসে একটু নিচু কন্ঠে বলে, "ঠান্ডা হয়ে যাবে, এখনই খেয়ে নিন।" ইউভান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে, "আমি আমার সময়ে খেতে পারব, তুমি যাও, আমি কাজ করছি।" তানহা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে যায় যাওয়ার আগে এক নজর আনায়ার দেখে অদ্ভুত নজরে তাকায়।আনায়া এতক্ষণ সব ড্রামা দেখছিল মনে মনে তাচ্ছিল হাসে তারপর ছাদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যখনই পা বাড়াবে হঠাৎই পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর তার নাম ধরে ডাকল— "সানসাইন এদিকে আয়।" তার শরীর মুহূর্তের জন্য থমকে যায়।এই তিন দিন ইউভান তার সামনে আসেনি, কথাও বলেনি। এমনকি তাকে যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু আজ? এই গলার স্বর যেন বুকের গভীরে কোথাও আঘাত হানে।আনায়া চায় না পেছন ফিরতে। কিন্তু তাও যেন বাধ্য হয়।ধীরে ধীরে পেছনের দিকে ঘোরে, চোখ তুলে তাকায়।ইউভান এবার অধৈর্য ভঙ্গিতে আনায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়,হাতে কফির মগ।ইউভান ধমক দিয়ে বলে, "কোন জগতে থাকিস তুই? ডাকলে শুনিস না? বেয়াদব!" আনায়া চোখের পলক ফেলে তাকিয়ে রইল ইউভানের দিকে, যেন বুঝতে চাইছে লোকটা আসলে কী চাইছে। ইউভান এবার কফির মগটা তার হাতে এগিয়ে দিয়ে বলে, "এটা খেয়ে দেখ তো, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।" আনায়া হতভম্ব।এই আচরণ কেমন? কেন তাকে দিয়ে কফিটা খাওয়াতে চাইছে? সে অবাক হয়ে বলে, "ঠিকঠাক থাকবে না তো কি? আপনার হবু বউ আপনাকে বিষ দেবে?" ইউভান শান্ত গলায়, নির্ভরযোগ্য এক নিশ্চিন্ততায় বলে, "দিতেও পারে। আমাকে মেরে ফেলতে চাইতেও পারে। এটা অবিশ্বাসের কিছু না।" আনায়া থ মেরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ইউভান আবার বলে, "তোকে যা বলেছি সেটা করবি, নাকি চড় খাবি?" আনায়া চমকে ওঠে।তার শরীর শক্ত হয়ে আসে, মনের ভেতরে এক ধরনের বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। কিন্তু তাও সে ধীরে ধীরে কফিটা ঠোঁটে লাগায়, এক চুমুক দেয়।কফিটা মোটামুটি ভালোই হয়েছে। সব ঠিকঠাকই আছে।কিন্তু ইউভান এতক্ষণ তাকিয়েই ছিল। এবার সে আনায়ার হাত থেকে মগটা কেড়ে নেয়, ঠিক যেখানে আনায়া চুমুক দিয়েছে সেখানেই ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর কফির স্বাদ নিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে— "নাইস টেস্ট।" আনায়া বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল ।তার বুকের ভেতর কিছু একটা দপদপ করে ওঠে।ইউভান যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে পাশ কাটিয়ে নিচে নেমে যায়।এই কয়েক মিনিটে যা হলো তার কিছুই আনায়া ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। সবকিছু যেন মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে আনায়া এবার নিচে নেমে এলো এবং ড্রয়িং রুম রুহি কে টিভির ধারে বসে থাকতে দেখে যার কারণে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে একটুও দেরি হলো না। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল সে, মনে মনে ভেবেছিল বোনের জন্য একটু অপেক্ষা করাই যায়, কিন্তু রুহির কথাগুলো শুনে তার রাগে মাথা গরম হয়ে গেল। "আজকে আমার ভালো লাগছে না তাই যাব না!" এই কথাটা যেন একটা কাঁটার মতো বিঁধল আনায়ার মনে। এই মেয়ের জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করলাম!আনায়া চিল্লিয়ে বলতে থাকে, "আজকে কলেজে প্রোগ্রাম আছে সেটা তুই জানিস রুটি? " রুহি এবার টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "আমার এসব প্রোগ্রামে ইন্টারেস্ট নাই প্লিজ আলু তুই চলে যা আজকে একা প্লিজ তাছাড়া পিহু তো আসছে সমস্যা কি?" এক মুহূর্ত আনায়া দাঁড়িয়ে না থেকে রিমোটটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল সে লাগবে না তার কাউকে তাছাড়া পরটা মানে পিহুতো আছেই। রুহি হতভম্ব হয়ে ভাঙা রিমোটের দিকে তাকিয়ে রইল। ---- বাইরে আসতেই একটা কালো গাড়ি এসে থামল আনায়ার সামনে। আয়ানের গাড়ি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যাবে, কিন্তু তখনই চোখ আটকে গেল জানালার ওপাশে। গাড়ির মধ্যে তার বাবা আর চাচারা বসে আছে। আয়ানের মুখে একটা তাড়াহুড়োর ভাব, চোখে কিছুটা চাপা ক্লান্তি। "আজকে তুই ইউভানের সঙ্গে চলে যা বোন, আমাদের অনেক তারা আছে। ঠিক আছে। আনায়ার গলা শুকিয়ে এলো। কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু আয়ান আর এক মুহূর্তও দেরি করল না, গাড়ির গতি বাড়িয়ে দ্রুত চলে গেল।আনায়া হতভম্ব দাঁড়িয়ে রইল।মনে মনে বলতে থাকলো ভাইয়া সবকিছু জানার সত্ত্বেও কেন ইউভানের সঙ্গে যেতে বললো তাকে। কিছুক্ষণ বাদে ইউভানের কালো অডি কার এসে থামল তার সামনে।গাড়ির দরজা খুলতেই আনায়ার ভ্রু কুঁচকে গেল। ড্রাইভিং সিটে বসা ইউভান আর পাশে বসে আছে তানহা। মুখে একগাল তৃপ্তির হাসি। আনায়ার মুখ কালো হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। মনে হলো কেউ তার বুকের মধ্যে দপ করে গোলাপি আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তার মেজাজ এমনিতেই ভালো ছিল না, তার ওপর এই দৃশ্য যেন দাহ্য পদার্থের মতো কাজ করল। কোনো কথা না বলে সে গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়ল। ইউভান পেছনের আয়নায় একঝলক তাকালো তার দিকে, ঠোঁটের কোণে একটা সামান্য হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু এদিকে আনায়ার মন একদম অস্থির। তার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এসেছে ঠোঁট আঁটসাঁট হয়ে আছে । তানহা পাশে বসে নিজের ফোন স্ক্রল করছে, মাঝে মাঝে ইউভানের দিকে লাজুক হেসে তাকাচ্ছে। এই দৃশ্য সহ্য করার মতো মানসিকতা এখন আনায়ার নেই। আনায়া গাড়ির জানালার বাইরে হাত অনেকটা বের করে দিয়ে বসেছিল হঠাৎ গাড়ির মধ্যকার নীরবতা ভেঙে ইউভান শুধালো "হাত ভিতরে নে সানসাইন। " আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায় সাথে তানহার ও।আনায়া সঙ্গে সঙ্গে হাতটা ভিতরে নিয়ে নিল।তানহার মুখ থমথমে হয়ে যায় হয়তো তার বিষয়টা খারাপ লেগেছে। কিছুক্ষণ বাদে গাড়ি এসে থামল তানহার বাড়ির সামনে।তানহা সাথে সাথে নেমে যাই।সে ইউভানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইউভান গাড়ি স্টার্ট দেয়। ফলে তানহা কথাগুলো গিলে ফেলে রাগে তার শরীর কাঁপছে। পেছনের সিটে বসে আনায়া এখনও মুখ গোমরা করে আছে। বুকের ভেতর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।প্রায় দশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামল ভার্সিটির সামনে।আনায়া গাড়ি থেকে নেমে ভার্সিটির গেটের দিকে এগোচ্ছিল কিন্তু সেই মুহূর্তে ইউভান তার হাত হ্যচকা টান দিয়ে গাড়ির ভেতর বসিয়ে নেই পুনরায়। ইউভানেের আচরণ এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে আনায়া ঘাবড়ে গেল। বুকের ভেতর ধক করে উঠল।নিজেকে সামলে ধীর স্বরে বলল, “ইউভান ভাই কিছু বলবেন?” ইউভান আনায়ার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বলে উঠে, "এখন এভাবে বের হতে পারবি না তুই সানসাইন।" আনায়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু এক সেকেন্ড পরেই ভিতরের সব রাগ ফেটে পড়ল। তার চোখে আগুন জ্বলে উঠল, গলাটা কিছুটা কেঁপে উঠল, কিন্তু তবুও সে থামল না। “আপনি আমাকে আটকানোর কে হন হ্যাঁ?আমি কোথায় যাব না যাব সেটা আপনার পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?কে আপনি হ্যাঁ? সেদিনের দমিয়ে রাখা রাগ, কষ্ট, অভিমান—সব একসাথে বিস্ফোরিত হলো। তার নিশ্বাস ঘন হয়ে এল, সে আর নিজেকে সামলাতে পারল না। এক ধাক্কায় ইউভানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে উঠল, “উত্তর দিন! আমাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? কোন কারণে? কিসের জন্য? কেন আমাকে সানসাইন এসব নামে ডাকেন? এই নামে ডাকবার কথা তো আপনার হবু বউকে তাই না?আমার জীবনে কেন অধিকার হস্তক্ষেপ করছেন?” কথাগুলো তীরের মতো বিদ্ধ করল ইউভানকে। তার চোখ ধূসর সমুদ্রের মতো হয়ে এল, গভীর, নিরাবেগ। এক মুহূর্তের জন্যও সে চোখ সরাল না, ঠোঁট শক্ত হলো, হাতের মুঠো বাঁধল।আনায়া ক্ষুব্ধ হয়ে দরজা খুলতে গেল, কিন্তু কিছু বোঝার আগেই ইউভান পেছন থেকে ওর কোমর শক্ত করে ধরে টেনে নিল। একটা ধাক্কার মতো টান মুহূর্তের মধ্যে আনায়া ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেল। আনায়ার চোখ বড় বড় করে দেখল সে এখন ইউভানের কোলের উপর বসে আছে।তার নিঃশ্বাস আটকে এল। ইউভানের শক্ত বাহুগুলো তার কোমর ঘিরে আছে শক্তপোক্ত বাঁধনের মতো। আনায়ার হতভম্ব হয়ে উঠতে চাইলে ইউভান তার দুটো হাত এক হাতে মুঠো করে পেছনের দিকে চেপে ধরল। এখন সে পুরোপুরি ইউভানের আয়ত্তে।ইউভান ধীরে ধীরে তার দিকে ঝুঁকল, মুখটা এতটাই কাছে যে তার শ্বাস গায়ে লাগছে।এরপর ফিসফিসিয়ে শুধালো, “তোকে আমি এতটাও সাহস দেই নাই যে আমার মুখের ওপর এভাবে কথা বলবি।” আনায়া ছটফট করতে লাগলো । তার নিশ্বাস দ্রুত হয়ে আসছে। ঠোঁট কাঁপছে। পুরো শরীর কাঁপছে। "ছাড়ুন আমাকে! ছাড়ুন বলছি।" ইউভানের এমন স্পর্শ তারপরও শরীরকে ক্রমগত দুর্বল করে দিচ্ছে। সে ভয় ভয় চোখে ইউভানের দিকে তাকায়।ইউভান এবার আরও কাছে এল।আনায়াকে এক টানে ঘুরিয়ে পেছনদিকে বসিয়ে দিল। আনায়া চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় এখনো ইউভানের একটি হাত তার কোমরের চারদিক থেকে আঁকড়ে ধরা শক্ত করে। হঠাৎ আনায়া তার পিঠে একটি হাতের শীতল স্পর্শ পায়। চমকে উঠল আনায়া।ইউভান ধীরে ধীরে এক হাত দিয়ে ঘাড়ের পেছনে চুল সরিয়ে দেয়।ইউভানের আঙুলের উষ্ণ স্পর্শে আনায়া শিউরে উঠল তার পুরো শরীর রি রি করে উঠল ঠোঁট কেঁপে গেল।ইউভান নিঃশব্দে জামার খোলা জিপটা টেনে উপরে উঠিয়ে দিল। আনায়া চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরল তারমানে তার জামার জিপ খোলা ছিল। যার কারনে ইউভান তাকে যেতে বাধা দিয়েছে। ইউভান আঙুলটা আনায়ার গলার কাছে ছুঁইয়ে দিয়ে বলে, “কি হলো এখন চুপ কেন?এভাবে বাইরে গেলে বুঝি খুব ভালো হতো?সবাই তোর শরীর দেখবে আর আমি চুপচাপ সেটা হতে দিব হুমম? আনায়া চোখ খুলল না, তার ভেতরে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইউভানের হাতের ছোঁয়া এখনও ওর গলায় স্পষ্টভাবে অনুভব করছে।তার বুকের ভেতর দম আটকে আসছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হঠাৎ ইউভানের দৃষ্টি আচমকা আটকে গেল আনায়ার ঘাড়ের একটু নিচে, উষ্ণ ত্বকের ওপর ছোট্ট এক তিলের উপর। তার চোখ সেখানে স্থির হয়ে রইল। ইউভান তার আঙুলগুলো ধীরে ধীরে নামতে লাগল যেন নিজের অজান্তেই আলতো করে স্পর্শ করল সেই তিলটা। আনায়া শিউরে উঠল। পুরো শরীর কেঁপে উঠে এক অজানা অনুভূতিতে। সে এবার নড়ে ওঠে কোন মতে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করে সঙ্গে সঙ্গে ইউভানের কিছুটা নেশাক্ত ঘোর লাগানো কন্ঠে ভেসে আসে আরুর কানে। "উমম ডোন্ট মুভ সানসাইন।" আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায় । শরীরের প্রতিটা রোমকূপ উত্তেজনায় খাড়া হয়ে আছে। ইউভানের স্পর্শে যেন রক্ত গরম হয়ে উঠছে।ইউভান আস্তে আস্তে আঙুলটা সরাল, সেই ছোট্ট বিন্দুটার ওপর স্লাইড করল। ইউভান আনায়ার কোমর আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরল নিজের সাথে সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কায় আনায়া আরও কাছে চলে এল ইউভানের।আনায়া চোখ বন্ধ করে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে, "ইউভান ভাই প্লিজ থামুন "। কিন্তু ইউভান থামল না।সে এবার ধীরে ধীরে মুখ এগিয়ে আনল। নিঃশ্বাসের উষ্ণতা ওর ঘাড়ে পড়ছে।আনায়া চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরল।ইউভান এবার একদম কাছে নিয়ে এল মুখটা, ঘাড়ের ওপর ঠোঁটের স্পর্শ মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে।আনায়া শ্বাস আটকে গেল। আনায়া পুনরায় কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, "ইউভান ভাই প্লিজ " তৎক্ষণিক ইউভান চাপা কন্ঠে আনায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে থাকে, "হুশশশ সানসাইন জানিস তুই আমার জন্য কি? " আনায়া চোখ কাঁপতে থাকে বহু কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে "ক কি"? ইউভান পুনরায় কানের কাছে ফিসফিস কন্ঠে বলতে থাকে, "তুই আমার ড্রাগস যা আমার রক্তে মিশে গেছে।তোকে ছাড়া আমার ধমনিতে রক্ত বইতে চায় না।নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করে না, তুই ছাড়া সবকিছুই নিষ্প্রাণ লাগে।এখন বল আমাকে তুই নামক ড্রাগসের নেশা থেকে কিভাবে বের হব আমি?" আনয়া কাপা কাঁপা কন্ঠে আওড়ায় , " ড্রাগস নেওয়া ছেড়ে দিন তাহলে আর নেশায় আসক্ত হবেন না " ইউভান ঠোঁট কামড়ে হাসল তারপর শুধালো "নেশা একবার ধমনীতে মিশে গেলে তা আর আলাদা করা যায় না সুইটি।শুধু প্রতিনিয়ত নেশা করতে ইচ্ছা হয়।আর আমাকে ড্রাগস নিতে হলে তোকে গভীরভাবে স্পর্শ করতে হবে।প্লিজ বাধা দিস না ড্রাগস না নিলে আমি মরে যাব সানসাইন।" আনায়ার পুরো শরীর পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল। আরেক মুহূর্ত থাকলে নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আনায়ার হৃদয় স্পন্দন যেন কেউ জোরে আটকে ধরেছে। ইউভানের স্পর্শ ক্রমাগত ভারী হয়ে আসছে। হাতের স্পর্শ আরো গাঢ় হয়ে উঠছে। হঠাৎ আনায়ার মাথা বিদ্যুতের বেগে নাড়া দেয়। ধ্যান ভেঙে গেল আনায়ার।তার চোখের সামনে ইউভান এবং তানহার এনগেজমেন্ট এর দৃশ্য ভেসে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে তার মনের আগুন দপ করে জ্বলে ওঠে। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ইউভানকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল, তারপর গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। একবারও পেছনে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করল না, একটাও কথা না বলে সামনে এগিয়ে যেতে থাকল। কিন্তু ইউভান ?ইউভান শুধু চুপচাপ তাকিয়ে রইল। তার হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসছে, যেন নিজেকেই সামলাতে কষ্ট হচ্ছে।চোখ বন্ধ করে গাঢ় কন্ঠে শুধালো, " তুই আমার জন্য একটি বিষাক্ত ফল সুইটি তাও আমি সেটি খেতে চাই।আমি ছেড়ে দিয়েছি বলেই তুই যেতে পেরেছিস এখন কারণ তোকে পুরোপুরি দাবিয়ে নেওয়ার জন্য আমার একটা স্পর্শ যথেষ্ট।" ------- "এই তিন দিন ভার্সিটি আসিস নি কেন আনায়া?" পিহু প্রশ্ন করল আনায়াকে।আনায়া কি উত্তর দিবে ভেবে পাইনা।পরিস্থিতি সামলাতে কোনমতে বলে, "এই তিনদিন শরীরটা খারাপ ছিল যার কারণে আসতে পারিনি।যাইহোক বাদ দে তোর কীহ অবস্থা হুম?তোর এই স্বপ্নের পুরুষ কি সত্যি সত্যি বাস্তবে এসেছে পিহু?নাকি সেদিন শুধু মজা করেছিলি।" পিহু মুচকি হাসে।সে কী বলবে?ইউভান স্যারের কথা বললে আনায়ার কেমন রিঅ্যাকশন হবে সেটা চিন্তা করে পিহু। এই তিন দিন নতুন নতুন ভাবে পিহু ইউভানের প্রেমে পড়েছে তাও চেহারা না দেখে।পিহু বিষয়টা চাপিয়ে বলে উঠে, " আজেবাজে কথা বলছিস তুই হ্যাঁ?সে এখনো আপডেট হয়নি।আপডেট হয়ে গেলে তোদেরকে জানাবো চিন্তা নেই।" আনায়া উচ্চস্বরে হাসে।ঠিক সেই মুহূর্তে পিহুর চোখ যায় ইউভানের দিকে।সাথে সাথে তার হৃদস্পন্দন জোরে চলতে শুরু করে।পিহু আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, " শুন আমার একটা কাজ আছে তুই প্রোগ্রামের ওখানে যে টুকটাক কাজ করতে লাগ। আমি কিছুক্ষণ পর আসছি হ্যাঁ।" আনায়া মাথা নাড়ায়। পিহু আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইউভানের পিছু নেয়।ভার্সিটির করিডোর পেরিয়ে লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে আসে। লাইব্রেরির সামনে এসে পিহু থামে একটু দূর থেকে ইউভানকে দেখে। পিহু লাইব্রেরীর ভেতরে ঢুকে বইয়ের ডেক্সের আড়ালে দাঁড়ায়। ইউভান মনোযোগ সহকারে বই দেখছে আর পিহু ইউভান কে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে।তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে এই দেখার মাঝে অন্যরকম মুগ্ধতা আছে। হঠাৎ লাইব্রেরির লাইট বন্ধ হয়ে যায়। পুরো লাইব্রেরি যেন মুহূর্তের জন্য শূন্যতায় ঢেকে যায়। অন্ধকারে পিহুর শ্বাস ভারী হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর লাইট আবার জ্বলে ওঠে, কিন্তু পিহু যখন চোখের সামনে তাকায়, দেখে ইউভান সেখানে নেই। তার বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।তার চোখ ইউভানকে খুঁজতে থাকে।ঠিক তখনই, পিহু অনুভব করে তার ঠিক পেছনে কারও উপস্থিতি।সে ধীরে ধীরে পেছনে ঘুরতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে চোখ আটকায়।মুহূর্তের স্পন্দন থেমে যায় তার নিজেকে সামলাতে না পেরে ধপ করে নিচে পড়ে যাই।ইউভান সরু চোখে তাকিয়ে রইল তার দিকে।পিহু ঘাবড়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে, "আপনি এখানে স্যার।কিছু বলবেন?" ইউভান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে, "আগুনের থেকে মোমকে সবসময় দূরে থাকতে হয় তা না হলে সেটি গলে নিঃশেষ হয়ে যায়।আর এত নড়বড়ে হলে তো সহজে কেউ এসে ভেঙ্গে দিয়ে যাবে আপনাকে নিজেকে শক্ত করা উচিত মিস।" পিহু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। ইউভান ধীরে ধীরে তার হাতের কনিষ্ঠা আঙুলটা একটু উঁচিয়ে পিহুর দিকে বাড়িয়ে দিল,মুহূর্তে পিহুর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নামে।তার মাথায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয় চোখের সামনে ঝাপসা কিছু স্মৃতি মনে পড়ে। পরমুহূর্তে ইউভান ধীরকন্ঠে শুধালো, " ছোট্ট মাথায় এতটা প্রেসার দেওয়ার প্রয়োজন নাই মিস। সময় হলে ঘোলাটে জিনিসগুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে।আপাতত উঠে দাঁড়ান আপনাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারি না আমি।" পিহু কোন কথার উত্তর দিতে পারেনা তার মাথায় ইউভানের কোন কথা ঢুকে না। সে চুপচাপ ইউভানের কনিষ্ঠা আঙ্গুল আঁকড়ে ধরে উঠে দাঁড়য়।আঙুলের আলতো স্পর্শে পিহু অনুভব করলে কোন এক অদৃশ্য টান।ইউভান এবার কোন কথা দেয় না করে পেছন ফিরে লাইব্রেরির দরজার দিকে এগোই। ঠিক সেই মুহূর্তে পিহু নরম কন্ঠে শুধালো, " আমরা কী পরিচিত আগে থেকে?" ইউভান থেমে দাঁড়ায় পিছন ফিরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে পিহুর উপর। তারপর বাঁকা হেসে শুধায়, "হয়তো বা!" চোখ বড় বড় হয়ে যায় পিহুর।ইউভান চলে যায়। পিহুর মাথায় তীব্র যন্ত্রণা করছে। ইউভানের সাথে তার পরিচয় কিভাবে হতে পারে? সে তো এই প্রথম ইউভানকে স্পর্শ করেছে কিন্তু কেন যেন তার মনে হচ্ছে এই স্পর্শের আগেও হয়েছে কোথায় কিভাবে সেটা স্পষ্ট না।পিহু নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে তবুও বার বার শুধু ওই ইউভানের কনিষ্ঠা আঙুল বাড়ানোর দৃশ্যটা ভাসছে চোখের সামনে।যেন মনে হচ্ছে ঘটনাটা এর আগেও হয়েছে তার সাথে। ------ আনায়া ভার্সিটির ক্যাম্পাসে ব্যানার ঠিক করছে। চারদিকে সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছে, কেউ স্টেজের দিকটা দেখছে কেউ আবার কেউ মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম পরীক্ষা করছে। আনায়া সেই ধরে উল্টোপাল্টা কাজ করছে। হাত দিয়ে ব্যানারের দড়ি ঠিক করতে গিয়ে বারবার তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এক আপু মজা করে বলল, "কি রে? কোথায় হারিয়ে গেছিস? প্রেমে পড়েছিস নাকি?" আনায়া তাড়াতাড়ি হাসি দিয়ে বলল, "না না আপু, আজ আসলে শরীরটা একটু খারাপ তাই গোলমাল হয়ে যাচ্ছে সবকিছু "। সে কাউকে কিভাবে বোঝাবে যে তার পুরো মনটাই এখন ইউভানের জালে বন্দি হয়ে আছে। আনায়া ইউভানের চিন্তা কিছুক্ষণের জন্য বাদ দিয়ে কাজে মনোযোগ হয়।কিন্তু আনায়া কাজ করতে গিয়ে বাধলে আরেকটা বিপত্তি।হাত থেকে রক্ত পড়ছে তার।সুমন নামক ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে দ্রুত আনায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আসলে, কাজের মধ্যে হঠাৎ কিছু কাচের টুকরা তার হাতে গিয়ে বিঁধে গিয়েছিল।সরি আপু, আমি দেখতে পাইনি, আমার জন্য তোমার হাতটা কেটে গেল।" আনায়া হাসিমুখে বলল, "ইটস ওকে ভাইয়া।" সুমন পরে তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "হাই, আমি সুমন, তোমার নামটা জানতে পারি?" আনায় কিছুটা দ্বিধাবোধ করলেও হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্তর দিল, "আমার নাম আনায়া।" সুমন মৃদু হাসি দিয়ে বলল, নামটা ঠিক তোমার মতোই কিউট" আনায়া তার হাত ছাড়িয়ে নিতে যাচ্ছিল, কিন্তু তখনই তার চোখ আটকায় সোজা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির উপর। তার শরীর কেঁপে ওঠে, ভয় ও আতঙ্কে সে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। ইউভান দাঁড়িয়ে আছে চোখে তীব্র রাগ। আনায়া হাতটা ছাড়িয়ে ইউভানের দিকে এগিয়ে আসে কিছু বলার আগেই ইউভান তার হাত ধরে চেপে ধরে সেখান থেকে নিয়ে আসে। চারপাশের সবাই একে একে তাকিয়ে দেখে। তারা কেউ এটাই বুঝতে পারছে না ইউভান স্যারের সাথে এই মেয়েটার কি সম্পর্ক। সবাই নানা গুঞ্জন উঠাতে থাকে। অপরদিকে ইউভান টানতে টানতে ভার্সিটির বাইরে নিয়ে গাড়িতে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আনায় কিছুই বুঝতে না পেরে মাথায় আঘাত পায়।আনায়া অবাকের প্রশ্ন করে, "কি করছেন ইউভান ভাই?ছাড়ো না আমাকে যেতে দিন।" কিন্তু ইউভানের কানে কোন কথা পৌছায় না। সে গাড়িতে উঠে বসে, তারপর গাড়িটি ফুল স্পিডে চালাতে থাকে। এত দ্রুত যে চারপাশে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়, গাড়ির হেডলাইটের আলো মুছতে থাকে। আনায়া ভয় পেয়ে বলে, "ইউভান ভাই প্লিজ থামুন, আমার ভয় করছে।" ইউভান কোনো কথা না বলেই গাড়ি চালাতে থাকে, তার চোখে আগুনের মতো ঝলকানি। আনায়া আবার ভয় পেয়ে বলে, "প্লিজ আমার কথাটা শুনুন আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। " ইউভান দাঁতে দাঁত চেপে, চাপা কণ্ঠে বলে, "অন্য ছেলের হাত ধরার সময় মনে ছিল না, এর শাস্তি তোকে তো পেতেই হবে আনু।" আনায় তখন একেবারে হতভম্ব হয়ে যায়, ছোটাছুটি করতে চেষ্টা করে, কিন্তু ইউভানের বাহু এতটাই শক্ত ছিল যে সে নড়তে পারছিল না। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গাড়ি থেমে যায়, সামনে ছিল ঘন জঙ্গল।ইউভান গাড়ি থেকে নেমে যায়। আনায়া বুঝতে পারছে না ইউভান এখন তার সঙ্গে কি করবে। আনায়ার ভয়ে বুক ধুকপুক করছে। সে ভিতু চোখে ইউভানের দিকে তাকায়। ইউভানের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে এমন অবস্থা। ইউভান এবার আনায়ার হাত জোড়ে চেপে ধরে গাড়ি থেকে টেনে বের করে। আনায়া কিছুটা আর্তনাদ করে ওঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। হঠাৎ টের পাই যে কেউ তাকে টেনে হিঁচড়ে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে যাচ্ছে সে ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে ইউভানের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে মুখ থেকে একটা কথা বের হচ্ছে না।তাও নিজেকে সামলিয়ে এবার ভয়ে ভয়ে বলতে থাকে, _"ইউভান ভাই কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? প্লিজ ছাড়ুন আমার খুব লাগছে হাতে।" ইউভানের কোন পরিবর্তন দেখা গেল না সে হাত আরো জোরে চেপে ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে, _"তোকে জঙ্গলে মাটি চাপা দিতে নিয়ে যাচ্ছি। যেন কখনো কোন ছেলের সঙ্গে কথা বলার আগেও বুক কাঁপে " আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলার আগে বুক না কাপলেও ইউভানের এমন কথায় তার পুরো শরীর ঠিকই কেপে গিয়েছে।আনায়ার হাত পা কেমন যেন কাপছে এর আগেও ইউভানের হাতে মার খেয়েছে কিন্তু কখনো এতটা ভয় লাগেনি। তার চোখ যায় ইউভানের ঘাড়ের দিকে নীল শিরা গুলো ভাসমান। চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। আনায়া কিছুক্ষণের জন্য চোখ স্থির হয়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে রাগ কেউ রাগ করলেও বুঝি কাউকে এত বেশি সুন্দর লাগে কিন্তু এ ভাবনা বেশিক্ষণ স্থির হয় না হঠাৎ ইউভান আনায়ার হাত হেচকা টান দিয়ে সামনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে। আনায়া তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। এতটা জোরে আঘাত লেগেছে। যে সে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। গাছের একটি শক্ত অংশে তার মাথায় কিছুটা বাড়ি লেগেছে।আনায়া ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দেয়।তার চুলগুলো সম্পূর্ণ তার চোখমুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সে এবার ভয় ভয় চোখের সামনে থাকার ইউভানের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে তার কলিজা কেঁপে ওঠে। ইউভানের মুখ অন্ধকারের থেকেও ভয়ঙ্কর লাগছে। চারদিকের জঙ্গলে নিস্তব্ধতা চারপাশে ছেয়ে আছে। ইউভান এবার হাটু গেড়ে বসে আনায়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে গর্জে ওঠে, "এবার বল তোকে কি শাস্তি দেওয়া যায়। তোর সাহস কি করে হয় অন্য একটা ছেলের হাত ধরার। এসব নষ্টামি করার জন্য তুই ভার্সিটি আসিস? " আনায়া চোখ বন্ধ করে ভয় ভয় বলতে থাকে, _"না ইউভান ভাই প্লিজ আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে " এমন কথা যেন ইউভানের মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে যায় সে তার হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করে। ফল স্বরূপ আনায়া ব্যথায় আরও বেশি আর্তনাদ করে ওঠে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, _"আমাকে বোকা পেয়েছিস তুই? তুই কখন কি করিস সেসব কিছু আমি জানিনা। এত বড় স্পর্ধা আমি তোকে দিইনি যে তুই অন্য ছেলেদের সংস্পর্শে যাবি? আনায়া কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। সে সাহস করে চোখ মেলে তাকায়। এরপর সাহসা কণ্ঠে বলতে থাকে, _"আপনি কেন এত অধিকারবোধ দেখাতে আসছেন ইউভান ভাইয়া? আপনার কি আমি কার সঙ্গে কথা বলি বা না বলি । আপনি তো ঠিকই মেয়েদেরকে স্পর্শ করে।তানহা আপুকে....... " আর কিছু বলতে পারে না আনায়া তার আগে সজোড়ে একটি থাপ্পর খায় গালে। সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার মাথাটা কিছুটা কাত হয়ে যায় পাথর হয়ে বসে থাকে। হাতের পাঁচটা আঙ্গুল ফর্সা গালে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ইউভান এবার আনায়ার বাহুদ্বয় চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলতে থাকে,,, _"কলিজা কাঁপে না হ্যাঁ এসব বলতে? অনেক বড় কলিজা হয়ে গিয়েছে তাই না তোর? কোন চোখ দিয়ে দেখেছিস। আমি অন্য মেয়েকে স্পর্শ করেছি। বল উত্তর দে নাহলে তোকে আমি এখানেই পুতে রাখবো আজকে আনু।আমার পুরো জীবনের মা ব্যতীত তুই দ্বিতীয় এবং শেষ নারী যাকে আমি স্বইচ্ছায় স্পর্শ করেছি।" আনায়া অবাক হয়ে তাকায়। দ্বিতীয় ও শেষ নারী মানে কথার অর্থ বুঝতে পারেনা।প্রথম নারী কি তাহলে তানহা আপু?সে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে আওড়ায়, " তাহলে প্রথম নারী কি তানহা আপু?" ইউভান কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।তার ভেতরটা অস্থির হয়ে ওঠে।সে আনায়ার দিকে তাকিয়ে শুধালো, "নাহহহ আমি তানহাকে স্পর্শ করেনি।কে প্রথম সেটা তো জানার দরকার নাই তবে তুই দ্বিতীয় এবং শেষ এটা জেনে রাখ বুঝলি?" আনায়ার রাগে অন্তর জ্বলে যায় সে দ্বিতীয় মানে কি? সে কেন দ্বিতীয় হতে যাবে। তার মনে বড্ড কৌতুহল জাগে প্রথম নারী কে সেটা জানার জন্য।সে এবার ইউভানকে দুই হাত দিয়ে জোরে ধাক্কা মেরে চেচিয়ে বলে, "ঠিক আছে আপনার প্রথম নারী কে সেটা আমি জানলাম না।তাহলে শুনে রাখুন মিস্টার ইউভান আপনার কোন অধিকার নাই এটা জানার যে আমাকে কোন ছেলে স্পর্শ করল।কারণ জীবনটা সম্পন্ন আমার বুঝেছেন আপনি?" ইউভান বাঁকা হাসে।এক হাত বাড়িয়ে আনায়ার ঘাড় আকড়ে ধরে নিজের দিকে এগিয়ে আনে।আনায়া দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু সহ্য করে। তখনই ইউভান হুইস্কির কন্ঠে বলে, "জীবনটা তোর হলেও আত্মাটা আমার সানসাইন।তোকে কে স্পর্শ করবে সম্পূর্ণটা দেখার দায়িত্ব শুধুমাত্র আমার।আমি ব্যতীত অন্য কেউ তোকে স্পর্শ করতে চাইলে তাকে দুনিয়া থেকে নিঃশেষ করে ফেলব।আর এখন তো তোকে শাস্তি পেতেই হবে যেন দ্বিতীয়বার এই ভুল না হয়।" আনায়া ঘাবড়ে তাকায় ইউভানের পানে।হঠাৎ সে হাতের কাছে কিছু একটা অনুভব করে। সে তাকাতে যাবে তার আগেই তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকে হাতে। চিৎকার দিয়ে বলে, _" আহহহহহহহহহহ।" ইউভান এক দৃষ্টিতে আনায়া ব্যথাতুর চোখের দিকে তাকাই। জঙ্গলে ভেজা মাটি রক্ত রক্ত হয়ে গিয়েছে। আনায়া এবার হাত-পা ছুটতে থাকে।ইউভান এখনো কাঁচের টুকরা আনায়ার হাতে জোরে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।আনায়া আর সহ্য করতে পারে না তার ভেতরটা আগুন জ্বলছে।সে শক্ত চোখে ইউভানের কঠোর মুখশ্রী দিকে তাকিয়ে গর্জে ওঠে, "আপনি এভাবে আমার আকাশে অন্ধকার ছড়াতে পারেন না বুঝেছেন? আপনি যদি কালো মেঘ হয়ে আমাকে অন্ধকারে ঢেকে দিতে চান তাহলে আমি সেই মেঘকে ছিঁড়ে দিয়ে আকাশে সূর্য তুলব।আপনার অস্তিত্ব আমার আকাশ থেকে মুছে ফেলবো ইউভান ভাই। ইউভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।আনায়া মুহূর্তে কাচটা উল্টে ইউভানের হাতে চেপে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে ইউভানের হাত ভেদ করে রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। রক্তের লাল রঙ মিশে গেল মাটির সাথে, দুজনের রক্ত একসাথে মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য সৃষ্টি করল।আনায়ার চোখে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু ইউভানের মুখে কোনো পরিবর্তন হলো না। সে আগের মতো এক দৃষ্টিতে আনায়ার পানে চেয়ে রইলো যেন কিছুই ঘটছে না।আনায়ার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে তার ক্ষতবিক্ষত হাতে তাকাল, এবং তীব্র বেদনায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল। কিন্তু ইউভান আরো জোরে তার দুটি হাত চেপে ধরে ফলে আঘাতের গভীরতা আরও বাড়ল। আনায়া এবার ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, " কী করছেন রক্ত পড়ছে ছাড়ুন হাত। পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি।" ইউভান বাঁকা হেসে আনায়ার গালের সাথে নিজের গাল মিশিয়ে নেশালু কন্ঠে বলে, "সমস্যা কি? দুইজন না হয় একসাথে পুড়লাম।" আনায়া অবাক হয়ে তাকায়। সেটাই বুঝতে পারিনা একটা মানুষ এতটা নির্দয় কিভাবে হতে পারে। আনায়ার এখন নিজের ব্যথা অনুভব হচ্ছে না বড় ইউভানের রক্ত দেখে তার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠছে। সে আর সহ্য করতে পারে না জোরে ডুকরে কান্না করে দেয়। এই কান্নার আওয়াজ যেন রুদ্ধের কানে তীরের মতো বাজে। সে এক হাতে আনায়ার গাল জোরে চেপে ধরে পুনরায় বলতে থাকে,, "এসব ন্যাকা কান্না করবি না আমার সাথে বুঝলি? তোর এই কান্না আমার মন গলাতে পারবেনা। অন্য ছেলের হাত ধরার সময় মনে ছিল না এর ফল কতটা খারাপ হতে পারে?" আনায়ার সমস্ত শরীর ব্যথায় অবশ হয়ে যাচ্ছে শরীরে এক ফোটা জোর পাচ্ছে না । তারপরও সে কোনমতে নিজেকে সামলে বলতে থাকে, _"ক্ষমা করে দিন প্লিজ ইউভান ভাইয়া " ইউভান এবার কিছুটা ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলতে থাকে, _"এই সায়ন চৌধুরী ইউভানের ডিকশনারিতে ক্ষমা বলে কোন শব্দ নাই " আনায় ধরফরিয়ে ওঠে চোখ বড় বড় হয়ে যায়।এদিকে দুজনের হাত দিয়েই রক্ত পড়ছে।আনায়া হেরে যায় সে নিজেকে আর শক্ত প্রমাণিত করতে পারে না। ঢুলে পরে ইউভানের বুকে।কোথায় যাবে সে? সেই ঘুরেফিরে তার পথ ইউভানের কাছে এসেই থামে।সে ইউভানকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে উল্টে। ইউভানের লাল রক্ত দেখে তার ভেতরের কার আত্মা কেঁপে উঠছে। চলবে,
Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।
👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব
0 মন্তব্যসমূহ