Golper Alo - ভালোবাসার গল্পের জগৎ 👉পর্ব ( ০৪ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

Header Ads Widget

👉পর্ব ( ০৪ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

🔖 আত্মার_অন্তরালে

গল্পের ছবি

✍️ লেখক: [প্রীতি_আক্তার_পিহু]

📖 পর্ব: [০৪ ]

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।


👉পর্ব ( ০৪ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু

আনায়া এক সেকেন্ডও বিলম্ব না করে সে দরজাটা ধাক্কা দেয়, এবং সাথে সাথেই দরজাটি খুলে যায়। সেই মুহূর্তে, আনায়ার পা যেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলে সে রুমে প্রবেশ করে। রুমের ভেতর বেলকনি থেকে ইউভান আসে, এক হাতে গিটার ধরে, অন্য হাতে রক্তাক্ত হয়ে। ইউভান কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয় আনায়াকে এখানে দেখে। আনায়া এবং ইউভান একেবারে সামনাসামনি।সে ইউভানের রক্তাক্ত হাত, কাঁপা কাঁপা হাতে ধরে ফেলে। ইউভান তার দিকে এক অদ্ভুত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আনায়ার ঠোঁট কাঁপতে থাকে, চোখের পাপড়ি ভিজে আসে।তার কণ্ঠে ভয়ে ভরা শব্দ বের হয়, "রক্ত ইউভান ভাই রক্ত পড়ছে আপনার হাত থেকে, প্লিজ রক্ত বন্ধ করুন।" সে তৎক্ষণাত চারপাশে তাকিয়ে কিছু একটা চোখ দিয়ে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ, ইউভান আনায়ার হাত নিজের হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, "তুই এত রাতে এখানে কি করছিস আনু? আনায়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, "আপনার হাতে রক্ত, আমি ব্যান্ডেজ করে দিয়ে চলে যাচ্ছি।" কিন্তু ইউভান তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালো "মলম দিয়ে ক্ষত ঢাকা যায়, কিন্তু কখনো সারানো যায় না।আমি আগুন বুঝলি? তুই এখান থেকে বেড়িয়ে ।" কিন্তু আনায়া কিছুতেই তার কথা শোনে না। সে দ্রুত বেডের পাশে থাকা ড্রয়ার থেকে মলম নিয়ে, ইউভানের হাত ধরে তা লাগানোর জন্য এগিয়ে আসে। সেই মুহূর্তে ইউভান তীব্র রাগের সাথে ঠাসসসসস করে একটি চড় বসিয়ে দেয় আনায়ার গালে। আনায়া কিছুক্ষণের জন্য হতভম্ব হয়, তার হাত থেকে মলম নিচে পড়ে যায়। সে অদ্ভুতভাবে ইউভানের দিকে তাকায়। অষ্টাদশীর হৃদয়ের বেদনা, সেই ভাঙা টুকরো যেন কোথাও গিয়ে হারিয়ে গেছে, তার কষ্টের ভার কি ইউভান বহন করতে পারবে?ইউভান তখন আনায়ার বাহুদ্বয় চেপে ধরে, তার কণ্ঠে এক তীব্র রাগ প্রকাশ পায়, "বলেছিলাম না আমি আগুন তোর মলম আমাকে ছুঁতে পারবে না এটা এমন এক আগুন, যা সবকিছু ভস্ম করে দেয়।আর তুই কাছাকাছি আসলে আমার আগুনের শিখায় ছারখার হয়ে যাবি।" আনায়া চুপ হয়ে যায়, তার চোখে আরেক ধরণের অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে।ইউভান হাত তার বাহুতে আরও জোরে চেপে ধরে। আনায়া শরীরের প্রতিটি কোণে এক অদ্ভুত যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে।সে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। ইউভান পুনরায় হুংকার ছেড়ে বলে, "তুই কি আমার আগুনের শিখায় পুড়ে ছারখার হতে চাস হ্যাঁ? একটিবার বল তাপ সহ্য করতে পারবি তো তুই?রাজি আছিস পুড়ে ছারখার হওয়ার জন্য? চুপ করে থাকিস না উত্তর দে আনু?" আনায়া আর সহ্য করতে পারে না। সে তীব্র ব্যথায় কাঁপছে, শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে ইউভানকে ধাক্কা মারে। তার কন্ঠ রুক্ষ হয়ে ওঠে, "আপনার আগুনের শিখা যত তীব্র হোক, আমাকে আর কাঁপাবে না।আপনি পুড়ে ছারখার হয়ে যান কিন্তু আপনার আগুনের শিখায় আমি নিজেকে পুড়তে দিব না বুঝেছেন আপনি?" আনায়ার গলা ভয়ংকর ভাবে কাঁপছে তারপরও সে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে থাকে, "এই আনায়া চৌধুরী কখনো আপনার দহনে মলম লাগাতে আসবে না মিস্টার সায়ন চৌধুরী ইউভান মাইন্ড ইট।" ইউভান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আর কিছু বলতে পারে না আনায়া এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দরজা দিয়ে হাটু গেড়ে বসে পরে। অষ্টাদশীর হৃদয় যে শেষ হয়ে গেছে তার কষ্ট গুড়িয়ে ছড়িয়ে গেছে।ইউভান তাচ্ছিল্য হেসে দেয়ালে রক্তাক্ত হাত দিয়ে কয়েকবার জোরে ঘুসি মারে।সঙ্গে সঙ্গে ক্ষত হাত আরো বেশি যখন সৃষ্টি হয়। দেয়ালে রক্তের দাগ বসে যায়। সে এবার একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ধোয়া উপরের দিকে ছেড়ে দেয়। তারপর সোফায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আওড়ায়, "একবার বলেই দেখতিস সোলবিট, যে তুই আমার আগুনে পুড়তে চাস। সঙ্গে সঙ্গে তোকে অনুরক্ত আলিঙ্গনে টেনে নিতাম আমার উত্তপ্ত হৃদয়ের অনির্বাণ শিখার মাঝে।" ইউভান পুনরায় সিগারেটের ধোয়া টানতে থাকে।ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে, তার চোখ রক্তিম হয়ে আছে। সে কেবল নিজেকে আরো ধ্বংস করতে চায়, যেন সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও তার কাছে কিছুই অতিরিক্ত হবে না। তার এক হাতে এখনো রক্ত ঝরছে আর অন্য হাত ব্যান্ডেজ করা। * আনায়া তার শরীরটা নিয়ে কাচুমাচু হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তার মনে অবিরাম বিক্ষোভ আর দুঃখ ছড়িয়ে পড়ছে। অষ্টাদশীর হৃদয়ের গোধূলি আলো এখন নিঃশব্দ, কষ্ট আর বেদনায় ভরা, যখন সেই ভালোবাসা ভেঙে ছারখার হয়ে গেছে।আনায়া ফুপিয়ে কান্না করে ওঠে। তার বুকের ভেতরটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইউভান সেই পুরুষ যার জন্য আনায়া চোখের পানি ফেলছে প্রথম। আনায়া কান্না জড়িত কন্ঠে শুধালো, "ভালোবাসা কেবল দুঃখ আর যন্ত্রণার পথ আর আমি সেই পথটুকু শেষ করতে পারলাম না প্রথম ধাপেই হেরে গেলাম। তবে ভালোবাসা বুঝি এত কষ্টের হয়? বাসলাম না আপনাকে ভালো। আমি কী মরে যাব নাকি? এই আনায়া এত নড়বড়ে না ইউভান ভাই যে আপনার দেওয়া এক আঘাতে ভেঙ্গে যাবে।" চোখ বন্ধ করে নেই আনায়া।রাগ আর অভিমান নিয়ে ঘুমের দেশে যাত্রা করে, তার হৃদয়ের ছারখার হয়ে যাওয়া আর কোন শব্দ শোনা গেল না। গভীর নিতাই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মুহূর্তেই। - - - একটি দুর্বিষহ রাতের পর আনায়া যখন ঘুম থেকে উঠল, তখন সে বুঝতেই পারল আজকের সকালটি কতটা আলাদা। রাতের অতিরিক্ত কান্নায় তার শরীরে, মনে অদ্ভুত ক্লান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। মাথায় তীব্র যন্ত্রণা, যেন কোনো ভারী বোঝা চেপে বসেছে। সে চোখ খুলে বিছানায় বসে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। আনায়া একটানে উঠে দাঁড়ায় কষ্টের মধ্যে নিজেকে ফ্রেশ করে নিচে নামে। নিচে নামতেই তার চোখে পড়ল ড্রয়িং রুমে কয়েকটি চেনা মুখাবয়ব উপর । আনায়ার কাজিনরা এসে পৌঁছেছে, তানহার মা হায়না এবং তার ছোট মামা খলিল আর তার মেয়ে তনি। এটা অবশ্যই তানহার মায়ের ও নানু বাড়ি।কারণ সায়মা বেগমের আপন খালাতো ভাই হল আহসান এবং ইকবাল চৌধুরী।চৌধুরী পরিবারের নিয়ম এটা যে তাদের বিয়ে হলে কাজিনদের ভেতরই হয়। ইউভানের মা নুরজাহান বেগম এবাড়ির মেয়ে অর্থাৎ আহসান এবং ইকবাল চৌধুরী চাচাতো বোন ছিল। তাদের সবারই পারিবারিক নিয়মেই বিয়ে হয়। খুবই অদ্ভুত নিয়ম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সেই খালাতো চাচাতো মামাতো ফুফাতো বোনের সাথেই বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেয়। এই যেমন বাড়ির বড় মেয়ে সারাহ এর বিয়ে ঠিক করে তারই মামাতো ভাই সাদনান এর সাথে।সাদনান এর পরিবারের সাথে অবশ্য আনায়ার তেমন সম্পর্ক নাই বললেও চলে। অজানা কারণে আনায়ার বড় মামা তাকে সহ্য করতে পারে না। এমনকি আনায়া কখনো তার নানু বাড়ি যাই নি। শুধু এটুকু শুনেছে তার বড় মামা আলাদা থাকে সবার থেকে এবং রাজনীতি করে। তার আরও একটা ছেলে ও আছে তবে তার নাম আনায়া জানে না। মামাতো ভাই বোনের মধ্যে সে শুধু সাদনান আর তনি কে চিনে।এই দুজনের সাথেই তার খুবই ভাব। তবে আনায়া বেশিক্ষণ মাথা ঘামালো না এসব নিয়ে। সে বাসা থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে পা বাড়ায়। এই একমাত্র স্থানে সে এক টুকরো সুখ খুঁজে পায়।এক নিঃশ্বাসে সে ফুল গাছের কাছে আসে।গত রাত্রির বেদনা এক ঝাঁকিতর ঝাঁকিতর করতে থাকল মুহূর্তেই তার চোখে পানি চলে আসে।আনায়া চাইলেও নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। হঠাৎ আনায়ার মনে হলো কেউ একজন তাকে দেখছে খুবই গভীরভাবে। সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ বেলকনির দিকে আটকায় এবং তার চোখের দৃষ্টি সোজা মিললো ইউভানের সঙ্গে। ইউভানের দৃষ্টি ঠিক তার ওপর নিক্ষেপ করা।আনায়া মুহূর্তেই শিউরে উঠলো। ইউভানের এই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অষ্টাদশীর সত্তাকে প্রভাবিত করছে। আনায়া তৎখান চোখ ফিরিয়ে আনল।এক মুহূর্ত সেখানে না দাড়িয়ে দ্রুত বাসার ভেতরে চলে এলো।আনায়ার চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্ঠি করে নেয় তারপর নিজেকে নিজে বুঝ দিয়ে বলে, "নিজেকে সামলা আনায়া নিজের দুর্বলতা আর যাই হোক কখনো ইউভান ভাইয়ের সামনে প্রকাশ করবি না কারণ তুই স্ট্রং মেয়ে।" ইউভান এক হাতে কফির মগ ধরে চোখে একটি মৃদু হাসি নিয়ে বলে, "আমি এক জটিল নদী, আমাকে বোঝা এতটাও সহজ না । আমার আত্মার অন্তরালের স্পন্দন বুঝতে চাইলে আপনার অন্ধকারকে আলিঙ্গন করতে হবে ম্যাডাম।" হঠাৎ ইউভান ফোনে কারোর কল আসে। সে কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটি পুরুষলি কণ্ঠ ভেসে আসে,, " আমার লাভবাড কেমন আছে ব্রো?" ইউভান মুচকি হেসে উত্তর দেয়, " তুই বরং এসেই দেখে যা কেমন আছে।" অপর পাশ থেকে পুনরায় ভেসে আসে কণ্ঠ, " আসব খুব শীঘ্রই। সবার সঙ্গে অনেক হিসাব বাকি রেডি থাকিস ব্রো।তুইও কিন্তু ছাড় পাবি না।টেক কেয়ার।" ইউভান বাঁকা হাসে। অপর পাশ থেকে ফোন কলটি কেটে যায়।ইউভান পুনরায় কফি মগের চুমুক বসায় তখনই তার নাক মুখ কুচকে আসে কারণ কফিটা পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। এদিকে আনায়া ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কানে তার মামুনের রুম থেকে আসা কিছু শব্দ ভেসে আসে। সে অবচেতনভাবেই থমকে দাঁড়ায়।অপর পাশ থেকে ভেসে আসা তানহার মা অর্থাৎ তার খালামনির কণ্ঠ স্পষ্ট শুনতে পায় আনায়া, "আপা ইউভানের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চাই। তাছাড়া তানহাকে আপনারা চেনেন জানেন। নিজেদের মধ্যে বিয়েটা হলে মেয়েটাকে তো আপনারা দেখেশুনে রাখতেও পারবেন।" এই কথাগুলো যেন বিদ্যুৎবেগে এসে আঘাত করল আনায়ার হৃদয়ে। সে স্তব্ধ হয়ে গেল, তার মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ইউভান তার প্রথম ভালোবাসার পুরুষ যার জন্য আনায়া বারবার দুর্বল হয়ে পড়ছে।আর তার বিয়ে? আনায়ার চোখ থেকে নীরবে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল, যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। আনায়া আর কোন কথা শুনতে পারলো না এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের রুমে ফিরে এলো। দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তার বুক ভেঙে কান্না শুরু হলো, যেন সেই কান্নায় তার সমস্ত ব্যথা উজাড় করে দিচ্ছে। নিজের দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে বলতে লাগল, "আমার কেন এত কষ্ট হচ্ছে? ইউভান ভাই আপনার দহনে আমি পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? কেন আমার হৃদয় এমনভাবে জ্বলে যাচ্ছে? কেন আমার পৃথিবীটা এভাবে অন্ধকার হয়ে গেল? আমি কি কিছুই না... আমি কি আপনার জন্য কোনো মূল্য রাখি না?" আনায়া এবার নিজের চুল নিজের ছিড়তে থাকে। সে তো এতটা দুর্বল না।ইউভান তার জীবনে এসে সমস্ত কিছু উলটপালট করে দিয়েছে।তার মতো শক্ত আর তাকে দুর্বল করে দিয়েছে। অষ্টাদশীর হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার প্রথম রঙ আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে। এদিকে সায়মা বেগম তানহার মাকে বলতে থাকে,, "একেবারে মনের কথা বলেছিস তুই। আমিও চাই যেন তানহা আমার বাড়ি বউ হয়। তাকে একেবারে মেয়ের মত করে রাখবো আমরা। আমি আজ বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখব সে আমার বিশ্বাস সে মানা করবে না।যেহেতু তানহা আমাদের নিজেদের পরিবারের মেয়ে।" তনহার মা মনে মনে হাসে। সে তো এটাই চাইছিল তার মেয়েকে এই বাড়িতে বিয়ে দিতে। কারণ সেই বাড়ির বউ হতে চেয়েছিল কিন্তু পারি নাই। তার বদলে তাদের নানা সায়মা বেগমকে পছন্দ করে ইকবাল চৌধুরীর জন্য। সেদিন থেকেই হায়নার মনে মনে যেত যে করে হোক সে তার উত্তরাধিকারীকে এই বাড়িতে বিয়ে দিবে। আর আজ সে সময় হয়ে এসেছে। ** দুপুরের গরমটা ঘরের ভেতরে যেন আরো জেঁকে বসেছে। আনায়া দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে রুমে। বাইরে থেকে মামনি দু’বার দরজায় উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে “কী হয়েছে?” কিন্তু আনায়া কোনো উত্তর দেয়নি। দরজা বন্ধ। হঠাৎ দরজায় নক করে রুহি। আনায়া প্রথমে সাড়া দেয় না, কিন্তু একসময় ধীরে ধীরে দরজাটা খুলে। রুহি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে খাবারের ট্রে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই রুহি রুমে ঢুকে পড়ে। দরজা লাগিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। মুখে দুষ্টামি মাখা গলা, “তুই কি ছ্যাঁকা খেয়েছিস আলু ? আমার আবার তোকে খাওয়ানোর কষ্ট করতে হচ্ছে! পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে তোর জন্য খাবার আনলাম, আর তুই এখান বসে নাটক করছিস!” আনায়া একদম চুপ। রুহি খেয়াল করে তার আলুর মুখটা গম্ভীর, যেন মেঘে ঢাকা। রুহি কিছুক্ষণ দেখে থেকে অবাক হয়ে বলে, “তোর মুড অফ কেন? কি হয়েছে? আমাকে বলবি তুই?” আনায়া সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়, “আমার কিছু হয়নি।” রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে, “তাহলে খেয়ে নে। খালি পেটে এমন মুড খারাপ রাখলে চলবে না। বিকালে রেডি হতে হবে। আমরা সবাই বাইরে যাচ্ছি—তানহা, তনি, আয়ান ভাইয়া, সারহ আপু, সাদনান ভাইয়া... আর ইউভান ভাইয়াও । এত বছর পর বাসায় ফিরেছে। আমরা সবাই মিলে বের হব। তুইও তো রেডি হবি, তাই না?” ইউভানের নাম শুনে হঠাৎ আনায়া চোখ তুলে তাকায়। রুহি খেয়াল করল কিন্তু কিছু বলল না। নিজের মতো করে বলে চলল, “তুই যদি এখন না খাস, তোর শরীর আরও খারাপ হবে। আচ্ছা, তুই কি সত্যিই অসুস্থ?” আনায়া বিরক্ত মুখে বলল, “না , শরীরটা একটু ভালো লাগছে না। তোরা যা, আমি যাব না।” রুহি আর কিছু না বলে তার কপালে হাত রাখে, গলায় হাত দিয়ে দেখে—জ্বর তো নেই! চিন্তিত হয়ে বলে, “তুই মিথ্যে বলছিস? কিছু হয়েছে তোর, বল তো। আমি বুঝতে পারছি না।” আনায়া কিছু বলল না। এবার রুহি উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে খাবারের ট্রেটা নিয়ে আসে। আনায়াকে কড়া গলায় বলল, “তুই যদি খেতে না চাস আলু , তোকে আমি সত্যিই চান্দে পাঠিয়ে দেব। আর তখন খাবারের মুখ দেখতে পাবি না!” আনায়া খাবারের দিকে তাকায়, তারপর রুহির দিকে। এই মেয়েটাকে সবসময় রাগানোর জন্য আলু আলু বলতে থাকে। যেন তার কথাগুলো অদ্ভুতভাবে মনে লাগল। আর কিছু না বলে, চুপচাপ খেতে শুরু করল। বিকাল পাঁচটায়, আনায়া নিজের ঘরে বসে আছে একেবারেই যেতে না চাওয়ার মুডে। কিন্তু বাসার সবাই যেন আজ তাকে ছেড়ে কথা বলার পাত্র নয়। রুহি এসে একরকম জোর করেই তাকে রেডি হতে বাধ্য করল। আনায়া বাধ্য হয়ে কালো গোলকাটা সলিড জামা পড়েছে, যার নিচে লাল পাড়ের কাজ করা। তার সঙ্গে লাল হালকা জর্জেট ওড়না। একদম সাদামাটা সাজ। চোখে সামান্য কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। পেছনে লম্বা চুলগুলো এলিয়ে দিয়েছে।আনায়া দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াল গোমড়া মুখে। গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই সে গেটের কাছে গেল। সবার মধ্যে যেন একমাত্র সে-ই যেতে চাচ্ছে না, আর বাকিরা সব হাসি-মজা নিয়ে ব্যস্ত। দুটি গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। প্রথম গাড়িতে বসেছে আয়ান, সারাহ, সাদনান, আর তনি। দ্বিতীয় গাড়ির যাত্রী রুহি আনায়া, তানহা, আর... ইউভান। আনায়া গাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে । সে ঠিক জানত না কোন গাড়িতে বসবে। যা সামনে পেল, তাতেই উঠে গিয়ে সামনের সিটে জানালার পাশে বসে পড়ল।গাড়ির ভেতর ঠান্ডা হাওয়া চলছে। জানালার বাইরের শীতল বাতাস আর ভেতরের এসি মিশে একটা অদ্ভুত আরামদায়ক অনুভূতি দিচ্ছিল। হঠাৎ, আনায়ার নাকে এক মিষ্টি ম্যান্ডারিন ফলের সুগন্ধ এসে লাগে। এটা পারফিউমের ঘ্রাণ। আনায়া ধীরে ধীরে পাশের সিটের দিকে চোখ ফিরিয়ে অবাক হয়ে গেল। পাশে বসে আছে ইউভান । কালো শার্টের ওপর বেইজ রঙের হালকা জ্যাকেট পরা, চোখে হালকা সানগ্লাস তোলা এবং মুখে কালো মাস্ক। ড্রাইভিং সিটে বসে স্টিয়ারিং ধরছেন একাগ্রভাবে। আনায়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলল, কিন্তু ঠিক তখনই গাড়ি চলতে শুরু করল। তার কথা যেন আটকে গেল কণ্ঠনালীতেই। নিজেকে সামলে নিল সে। মুখটা জানালার দিকে ফিরিয়ে চুপচাপ বসে রইল পারলে এখন সে গাড়ি থেকে নেমে যেত। গাড়ি চলছে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো। জানালার বাইরে একের পর এক গাছপালা পেছনে ছুটে যাচ্ছিল। সূর্যের আলো পড়ে ছায়াগুলো খেলছিল রাস্তায়। ইউভান তখনো স্টিয়ারিং ধরেই বসে আছে। মাঝেমধ্যে সামনের আয়নার দিকে চোখ রাখছে।অবশেষে গাড়ি থামল। একটা বিশাল রিসোর্টের সামনে সবাই এসে পৌঁছাল। চারদিকে উঁচু উঁচু গাছ, ছোট্ট লেক, আর রিসোর্টের কাঠের কাজ করা বিল্ডিংগুলো যেন একেবারে অন্যরকম অনুভূতি দিচ্ছিল। লাল আর সোনালি রঙের ফেয়ারি লাইটগুলো চারদিকে আলোর ছটা দিচ্ছিল। আনায়া গাড়ি থেকে নামতেই চোখ আটকালো সামনের দৃশ্যের ওপর। রুহি এসে পাশে দাঁড়াল, “কী ভাবছিস? এত সুন্দর জায়গায় এসেছি, মুখ গোমড়া করে থাকলে তোর খবর আছে আলু ” আনায়া কিছু বলল না। শুধু মৃদু হাসল। হয়তো এই দিনটা তার জন্য অন্যরকম কিছু নিয়ে এসেছে।চারদিকে গভীর নীরবতা। বাতাসে হালকা শীতের আমেজ। লেকের পানি সূর্যের আলোর ঝিলিক গায়ে মেখে চিকচিক করছে। আনায়া নিরবদৃষ্টিতে লেকের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। তার সারা শরীর অবসন্ন, মনে যেন ঝড়। অনেক দূরে তার কাজিনরা হৈ-হুল্লোড় করছে, কিন্তু আনায়ার কাছে সেইসব আওয়াজ এখন অস্পষ্ট। তবে এই শান্ত সময় খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎ করেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলো লেকের অন্য পাশে। কয়েকজন বখাটে ছেলে এক মেয়ে এবং তার সঙ্গীদের ঘিরে ফেলেছে। মেয়েটি সাহস করে তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছেলেগুলো মেয়েটিকে হেনস্থা করতে শুরু করে। আশপাশের মানুষজন জড়ো হলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। কারণ সবাই জানে, ছেলেগুলো এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী। আনায়া হতবাক। ভিড়ের মধ্যে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে তার। পরিস্থিতি দেখে তার মন আরও খারাপ হয়ে যায়। সে একবার চারদিকে তাকিয়ে সাহায্যের জন্য পরিচিত কাউকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কেউ নেই। হঠাৎ মেয়েটির এক চড় খাওয়ার শব্দ তার মনটাকে চঞ্চল করে তোলে। ভিড় ঠেলে সে লেকের পানির খুব কাছাকাছি চলে আসে।ঠিক সেই মুহূর্তে আনায়া হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে যাবে। হঠাৎ তার কোমরে শক্ত একটি হাতের স্পর্শ। সারা শরীর যেন কেঁপে উঠল। ইউভান তার হাত ধরে টেনে তুলে দাঁড় করায়।আনায়া ইউভান কে দেখে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে ইউভান ধমক দিয়ে বলে উঠে, “এখানে কি করছিস বেয়াদপ? ঝামেলায় যাবার এত শখ কেন?” আনায়া মাথা নিচু করে ইউভানের কথায়।ইউভান সচারাচর বাইরে এলে মাস্ক পড়েই থাকে যেন তাকে কেউ চিনতে না পারে। আনায়া চোখ তুলে কিছু বলতে পারল না কিছু । ভিড়ের মধ্যে মেয়েটি আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য আকুল হয়ে সে ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ইউভান ওদের কিছু বলুন। দেখুন মেয়েটা কত অসহায়। প্লিজ...” ইউভান তার হাত শক্ত করে ধরে বলল, “আমার দায়িত্ব নেই কারো সাহায্য করার।" বলেই আনায়ার হাত শক্ত করে ধরে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। কিন্তু এই কথায় আনায়া ইউভানের কঠিন মনোভাব দেখে চমকে ওঠে । তার চোখে পানি চলে আসছে। “আপনার মতো পাষণ্ড মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে আমার ভুল হয়েছে,” বলে আনায়া রাগি কণ্ঠে তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ইউভান একবার হাতের দিকে তাকায় একবার আনায়ার মুখের দিকে। সে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই আনায়া ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে এলো যখন একটি ছেলে ওই মেয়েটিকে আবার চড় মারতে যাবে তৎক্ষণ সে ছেলেটির হাত ধরে ফেলে আনায়া। “তোর সাহস তো কম না। একটা মেয়ে কি মানুষ না? বাবা-মা শেখায়নি কারো সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হয়?” ছেলেগুলো এবার ক্ষিপ্ত হয়ে আনায়া দিকে এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে একজন একটি লম্বা হকি স্টিক তুলে নেয়। লাঠিটি যখনই আনায়ার দিকে নামাতে যাবে, তখনই একটি শক্ত হাত সেটি থামিয়ে দেয়।আনায়া চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখল, ইউভানকে। তার চোখ রাগে জ্বলছে। “তোর সমস্যা কি?” ছেলেগুলো রাগী কন্ঠে বলল। কিন্তু ইউভান নিশ্চুপ। একটি ছেলে ইউভানের দিকে তেড়ে এসে বলল, “তুই আমাদের কাজের মাঝে কেন?” ইউভান কোনো কথা না বলে তার হাতে থাকা লাঠি নিজের দিকে টেনে নিয়ে ছেলেটিকে এক ঘুষি দিল। তাকে দেখে সবাই প্রথমে ভয় পেলেও নিজেদের প্রভাব দেখাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ইউভানের চোখে তখন কেবল আগুন।প্রথম ছেলেটি, যে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করতে চেয়েছে ইউভান তার হাত থেকে লাঠিটা এমনভাবে টেনে নিল যেন সেটা কোনো খেলনা। তারপর সেই লাঠি দিয়েই ছেলেটার পায়ে এমন এক আঘাত করল যে সে মাটিতে পড়ে গেল। তার গোঙানোর শব্দ চারপাশে প্রতিধ্বনিত হলো।ইউভানের কপাল ভেজা ঘামে চিকচিক করছে। গালের পাশ দিয়ে ঘামের বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। তার চোখ রক্তচক্ষুর মতো লাল হয়ে উঠেছে।গলার শিরাগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।এরপর আরেক ছেলে ইউভানের দিকে তেড়ে এসে তার মুখে ঘুষি মারার চেষ্টা করল। কিন্তু ইউভান এতটাই দ্রুত যে তার ঘুষি মাঝপথে সে ছেলেটার কব্জি চেপে ধরল। এমন শক্তভাবে চেপে ধরল যে ছেলেটা ব্যথায় চিৎকার করে উঠল। সে কোনো কথা না বলে তার মুখে একটা ঘুষি মারল। এত জোরে মারল যে ছেলেটার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করল।ইউভান কিছুটাই কোথায় কোথায় বলল,, "আমার জিনিসকে স্পর্শ করার আগে মনে রাখিস । তুই একটা সিংহের গুহায় হাত বাড়াচ্ছিস। আর সিংহ কখনো ছাড় দেয় না। সাহস কি করে হয় ওকে আঘাত করাতে চাওয়ার? জানের ভয় নেই তোদের?" আনায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। ইউভানের বলার প্রতিটা কথা তার বুকে তীব্রভাবে লাগে। অনুভব করে সে ইউভান খুবই কাছের কেউ। তার মুখে আপনা আপনি একটি হাসি ফুটে ওঠে। বাকি ছেলেগুলো ভয়ে পেছাতে লাগল, কিন্তু ইউভান তাদের ছাড়ার পাত্র নয়। সে দ্রুতগতিতে এগিয়ে এক ছেলের শার্টের কলার চেপে ধরে তাকে টেনে নিজের সামনে নিয়ে এলো। তারপর তার পেটে একের পর এক ঘুষি মারতে শুরু করল। ছেলেটা মাটিতে পড়ে গিয়ে কেঁদে ফেলল। সেই লাঠি দিয়ে অন্য ছেলেটিকে পেটাতে লাগলো এর মধ্যে একটি ছেলে বলে,, "তুই ভুল জিনিসে হাত দিয়েছিস তোকে আমরা পরে দেখে নিব।তোর সব থেকে প্রিয় জিনিস কলঙ্কিত করে দিব"। তৎক্ষণিক ইউভান ছেলেটির মুখ বরাবর একটি লাথি মারে তারপর উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকে,, "যা আমার, তা আমারই। যদি কেউ সেটা ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাদের কাছে শুধু ধ্বংসের ইতিহাস রেখে যাব মনে রাখিস। দ্বিতীয় বার ওর দিকে তাকানোর জন্য সুযোগও তোরা পাবি না।" এদিকে ভিড় আরও জমতে লাগল। আনায়া এক ধ্যনে ইউভানের ভয়ংকর রূপের দিকে তাকিয়ে রইল। রুদ্ধের শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা, আর হাতের মুঠো এত শক্ত যে আঙুলের ফাঁক গলে এক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ঘাড়ের শিরা গুলো ভাসমান।মাস্কের আড়ালে মুখয়াব বোঝা যাচ্ছে না স্পষ্ট ভাবে। এক মুহূর্তের জন্য আনায়ার হৃদস্পন্দন থেমে যায় এই ভয়ঙ্কর রূপের প্রতি তার ভালোলাগা সৃষ্টি হয়। ছেলেগুলো পালাতে শুরু করল। এদিকে মেয়েটির বান্ধবীরা এসে তাকে নিয়ে গেল। ইউভান এবার আনায়ার দিকে ফিরল। তার চোখে আগুনের মতো রাগ। সে আনায়ার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। আনায়ার ধ্যন ভাঙ্গে ব্যথায় কুকড়ে উঠল।ইউভান অনেক জোরে তার হাত চেপে ধরেছে। “ইউভান ভাই ছাড়ুন আমার লাগছে খুব?” কিন্তু ইউভান এর কানে কথা গেল না সে আরও শক্ত করে হাত চেপে ধরে টেনে হিচড়ে ভিড়ের মধ্য থেকে টেনে বের করে আনে। চারপাশের কোলাহল পেরিয়ে তাকে নির্জন জায়গায়, লম্বা গাছের ছায়ায় নিয়ে আসে। ইউভানের শক্ত মুঠোয় আরুর হাত এতটাই চেপে ধরা যে রক্ত জমাট বাঁধার মতো অনুভূতি হতে থাকে। ব্যথায় আনায়া মুখ বিকৃত করে ইউভানের দিকে তাকায়।ইউভান কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে মুখে মাস্ক টেনে খুলে ফেলে। আনায়া আঁতকে উঠল ইউভানের রাগে রক্তিম চেহারা দেখে। সে কিছু বলতেই যাবে আকস্মিক ইউভান কোন কথা না বলে আনায়ার গালে সজোরে একটা থাপ্পর দিল। ধপ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আনায়া। আশেপাশে কেউ নেই-সব কিছু একেবারে নীরব। আনায়ার ফর্সা গালে ইউভানের আঘাতের দাগ লালচে হয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হতভম্ব আনায়া একদম থ হয়ে যায়। তার শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে। ইউভানের এই রূপ সে আগে কখনো দেখেনি। ইউভান এবার হেঁটে কাছে হাটু গেড়ে বসে আনায়ার চুলের গোছা মুঠো করে ধরে এতটাই শক্ত করে টানে যে আনায়া চিৎকার করে ওঠে।ইউভান চাপা গলায়, ঠান্ডা অথচ তীব্র কণ্ঠে বলে, "কলিজা টা টেনে ছিড়ে দিয়ে এখন হ্যাঁ?তোকে কতবার বলেছি? আমার কথার অবাধ্য হবি না। কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস না! ওই ছেলেগুলোর সঙ্গে কথা বলতে গেলি? যদি সেখানে তোকে কেউ একটু আঘাত করতো? তখন তোকে আমি নিজেই জানে মেরে ফেলতাম!" আনায়া ব্যথায় কুঁকড়ে যায়, তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, "ইউভান ভাই... ছেড়ে দিন... প্লিজ। আমার লাগছে..." কিন্তু ইউভানের মুখে কোনো মায়ার ছাপ নেই। এবার সে আনায়াকে দাঁড় করায়, দুই বাহু চেপে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে, "দুইদিন তোর সাথে নরম ভাবে কথা বললাম, তুই মনে করলি আমি ভালো? মনে রাখিস, আমি মোটেও ভালো না।" আনায়ার শরীর থর থর করে কাঁপতে থাকে রাগে সে এবার দুই হাত দিয়ে ইউভানকে ধাক্কা মেরে বলে, "সাহস হয় কি করে আমাকে মারার হ্যাঁ?আমাকে কি নরম ভেবেছেন যে কিছু বলবো না? শুনুন মিস্টার আমার জীবনে কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটা আমার মোটেও পছন্দ না। আর আপনি.... আর কিছু বলতে পারেনা আনায়া তার আগেই ইউভান তার গাল চেপে ধরে বলে, " শুধু তোর জীবনে কেন তোর স্পন্দনে ও আমার অধিকার থাকবে শুধু বুঝলি?আমার ধৈর্য সীমাহীন কিন্তু তুই যদি সেই সীমা পেরোতে চাস তাহলে আমি বিধ্বংসী রূপের মোকাবেলা করতে হবে তোকে আনু।আমি কি করতে পারি তার কোন ধারণাও নেই তোর।" "আ আপনি চান টা কী হ্যাঁ? ওরা আমাকে আঘাত করতে চাইলো বলে আপনি তাদের মারলেন। আর এখন আপনি আমাকে আঘাত করছেন?তাহলে তখন ওদের আটকালেন কেন ইউভান ভাই? সেই আমাকে তো ব্যথাই পেতে হচ্ছে তাই না?" ইউভান এবার এক হাত দিয়ে আনায়ার কোমর শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাছে টেনে নেয়।আনায়ার স্তব্ধ হয়ে যায় শীতল স্পর্শে ।এই স্পর্শ সে আগেও পেয়েছে ড্যাব ড্যাব করে তাকায় ইউভানের পানে।তৎখান ইউভান হুইস্কির কন্ঠে শুধায়, " তোকে আঘাত করার অধিকার একমাত্র আমার। আমি ছাড়া তোকে কেউ কাঁদাতে পারবেনা।আর না আমি ছাড়া কেউ তোকে হাসাতে পারবে।আমি ব্যতীত কোন তৃতীয় ব্যক্তি অথবা জিনিসের জন্য যদি তোকে কাঁদতে বা হাসতে দেখি তাহলে মনে রাখিস ঐ তৃতীয় সত্তাকে আমি পৃথিবী থেকে মুছে ফেলব।" শিউরে ওঠে আনায়া ইউভানের বলা প্রতিটা কথায়। আনায়ার গলা থেকে কোন স্বর বের হয় না।তার দুনিয়া উল্টে পাল্টে যাচ্ছে। ইউভানের একেক সময় একেক আচরণ নিতে পারছে না সে।আনায়া চোখ তুলে কাঁপা কাঁপা গলায় শুধালো,

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

"আমি আপনার জন্য না কাঁদবো আর না হাসবো বুঝলেন।" ইউভান সরু দৃষ্টিতে তাকাই অষ্টদশীর মুখোশ্রীর পানে এরপর ধীরে ধীরে চিবুকটা তুলে ঠান্ডা শীতল কন্ঠে বলে উঠে, " কারণ-অকারণে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, বারবার, সহস্রবার তুই হাসবি-কাঁদবি তাও শুধু আমার জন্য।কারণ অনুভূতি তোর হলেও,মালিকানা কিন্তু আমার হাতে সুইটি।" আনায়া শ্বাস নিতে ভুলে যায়।এতো অধিকার তার উপর আজ অব্দি কেউ খাটায় নি।এই তীব্র অধিকারটা কে আনায়া কিরূপভাবে নিবে?দমকা হাওয়া বয়ে যায় তার পুরো শরীর জুড়ে। ইউভান আনায়াকে ছেড়ে দূরে দাঁড়ায়। আনায়া ছাড়া পেয়ে মুহূর্তে ওখানে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় না দ্রুত ওয়াশরুমে চলে আসে রিসোর্টের। ইউভান ঘাড় কাত করে আনায়ার যার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপ হাসি দেয়। অপরদিকে আনায়া তাড়াতাড়ি চোখ-মুখে পানি ছিটাতে লাগল। তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে, যেন ভিতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয় সে।আনায়ার খুব রাগ করা উচিত কিন্তু তার সেরকম রাগ পাচ্ছে না। ইউভানের এই তীব্র অধিকারবোধ তার ওপর ভীষণভাবে প্রভাব ফেলছে।আনায়া তার ভাঙা কণ্ঠে আওরায়, "আপনি এমন কেন ইউভান ভাই? আপনার এই নিষ্ঠুর রূপটা মেনে নিতে পারছি না।আপনার এই নিষ্ঠুরতা আমার হৃদয়ের প্রতিটি কোণ ধ্বংস করে দিচ্ছে।ভালোবাসা যদি এমন হয়, তবে আমি এই ভালোবাসার আগুনে পুড়ে ছাই হতে চাই না।আপনি নিজে আপনার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু আপনি আবার নিজেই আমার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে আসছে আপনি চান টা ইউভান ভাই?কেন এত অধিকার আমার উপর আপনার?" প্রশ্নের উত্তরগুলো অজানাই রয়ে গেল। আনায়া আয়নার দিকে তাকাতেই সে গালে স্পষ্ট চড়ের দাগ দেখতে পেল। দাগটা ঢাকার জন্য সে চুলটা একপাশে সরিয়ে আনার চেষ্টা করল। নিজেকে শক্ত করার জন্য সে গভীর একটা শ্বাস নিল। নিজের মুখে জোর করে একটা স্বাভাবিক ভাব আনতে চেষ্টা করে।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সে এমনভাবে হাঁটছে, যেন কিছুই হয়নি। *** রুহি একটু ক্ষুব্ধ সুরে, চিৎকার করে উঠল, “তোর কি হয়েছে? তুই কি আমাকে বলবি না? মানে পুরো রিসোর্ট খুঁজে তোকে পাই না, আর তুই একা এখানে মরার মতো কেন দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে কি ভুতে ধরেছে?” আনায়া কোনো উত্তর দিল না। তার মুখে কোনো অনুভূতি নেই, চোখ দুটো যেন কোনো অতল গভীরে তাকিয়ে আছে। রুহি হতাশ হয়ে আনায়ার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু আনায়ার শরীরে কোনো সাড়া নেই, যেন সে পুরোপুরি রোবট হয়ে গেছে।রুহি তাকে নিয়ে এলো একটি পুরনো, ভাঙাচোরা ঘরের সামনে। ঘরটি হোস্ট হাউসের মতো, তবে তার চারপাশের পরিবেশ বেশ ভৌতিক। গা ছমছমে অন্ধকার, আর পুরনো কাঠের গন্ধ যেন শ্বাসরোধ করে। রুহি বলল, “সবাই ভেতরে গেছে। ইউভান ভাইয়া আমাকে তোকে ডেকে আনতে পাঠিয়েছে।” ইউভানের নাম শোনা মাত্রই আনায়ার মুখে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা গেল। তার চোখগুলো বড় হয়ে গেল, যেন কোনো এক চাপা অনুভূতির বিস্ফোরণ ঘটল তার মধ্যে। সে মনে মনে বলল, “ইউভান ভাই আমাকে ডেকেছে... কিন্তু কেন? আমি থাকি আর না থাকি, তাতে কার কী যায় আসে?” রুহি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে এক গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এল। কণ্ঠটি দৃঢ় ও কর্তৃত্বপূর্ণ। “আমার অঢেল সময় নেই তোদের নিয়ে রাত পর্যন্ত এখানে থাকার। যতটুকু ঘুরতে চাস, তাড়াতাড়ি ঘুরে নে। বাসায় ফিরতে হবে।” আনায়া জানে কে কথা বলছে, কিন্তু সে পেছন ফিরে তাকাল না। রুহি তার হাত ধরে আবারও টানল। কিন্তু আনায়া চুপচাপ, তার মুখ থেকে একটি শব্দও বের হলো না। ইউভান পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পরল। হোস্ট হাউজের ভেতরটা যেন একটা শীতল শ্মশান। চারিদিকে কেমন একটা গা ছমছমে অনুভূতি। দেয়ালের গায়ে পুরনো ধূলোমাখা পেইন্টগুলো খসে পড়ছে, আর ফাটলগুলো দিয়ে মাঝে মাঝে সাপের মতো লতানো শেকড় বের হয়ে এসেছে। আনায়া ধীরে ধীরে এগোচ্ছে । রুহি আয়ানদের সাথে সামনে হেঁটে চলে গেছে। আনায়ার আস্তে হাঁটার কারণে একা পড়ে গিয়েছে। হঠাৎ এক জায়গায় এসে তার পা পড়ে একটা কঙ্কালের উপর। চমকে উঠে পেছন হটতেই কঙ্কালটা হঠাৎ হাত বাড়িয়ে দেয়। তার হাতটা যেন মোমের মতো, জড়ানো একটা ধুলোর আবরণে। আনায়া বুঝতে পারল না এটা তার কল্পনা নাকি বাস্তব। আতঙ্কে তার মুখ থেকে একটা ছোট্ট চিৎকার বেরিয়ে আসে।ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা শক্ত হাত তাকে ধরে সামনে টেনে নেয়। হাতটা ঠান্ডা বরফের মতো। আনায়া সেখানেই জমে যায়। মাথাটা ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে সেই হাতের দিকে তাকায়। হঠাৎ তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইউভান যার চোখে হিংস্র দৃষ্টি।আনায়ার রাগ হয় সে মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইউভান ঠাণ্ডা গলায় বলল, "তোর মুখ থেকে যদি আরেকটা শব্দ বের হয়, তাহলে তোকে এই জায়গায় ফেলে রেখে চলে যাব আমি।" আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেল সে কথাটা গিলে ফেলে মনে মনে বলতে থাকলো "কত বড় বদমাশ ফকস্টার আমাকে মেরে আবার আমাকে হুমকি দেয় হুহু৷ এত কিসের অধিকার আপনার আমার উপর হুমম।" এ দৃশ্য দূর থেকে দেখছিল তানহা। তার পুরো শরীর শক্ত হয়ে আসে। তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। সে কণ্ঠ নীচু করে বিড়বিড় করে বলল, আচ্ছা, তাই বলো! কোনো মেয়ে যদি তোমাকে ছোঁয়, তাহলে তোমার গা খসে পড়ে যায়? অথচ আনায়া ছুঁলেই কিছু হয় না। কী এমন রহস্য লুকিয়ে রেখেছো, ইউভান?"তার চোখের রাগ জল জল করছে। * আনায়া এক কোণে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে একটি রক্তের লেকের কাছে আসলে এটি রক্ত না তরল জাতীয় কিছু একটা। তাকে এখানে দাঁড় করিয়ে ইউভান বলেছিল, "তুই এখান থেকে এক পা ও নড়বি না।" বাকিরা হোস্ট হাউজে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছে। কিন্তু আনায়ার ভেতরে রাগ চেপে আছে। ইউভান দূরে ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত আছে। সে চিৎকার করে রাগ প্রকাশ করতে চাইছে কিন্তু জানত,ইউভান থাকলে সেটা সম্ভব নয়।ঠিক তখনই তানহার ঠান্ডা কণ্ঠ শোনা গেল। "তুই কী দেখিয়ে ইউভানকে বশ করলি? নিজের সাদা ধবধবে রূপ দেখাচ্ছিস!" আনায়া চমকে ঘুরে তাকাল। তার পুরো শরীর ঘিনঘিন করে উঠল। সে রাগে তানহার দিকে তাকিয়ে বলল, "তোমার মন-মানসিকতা ঠিক করো, তানহা আপু। আমাকে নিয়ে এসব নোংরা কথা বলার সাহস দেখিও না!" তানহা ঠান্ডা গলায় বলল, "তুই আগে ভদ্রতা শিখ। বড়দের সঙ্গে কেমন কথা বলতে হয়, জানিস না!" আনায়া ঠাণ্ডা অথচ দৃঢ় গলায় জবাব দিল, "আপনাকেই ভদ্রতা শেখা দরকার। ছোটদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটা জানেন না!" তানহার রাগ এবার চরমে পৌঁছাল। সে আনায়ার সামনে এসে দাঁড়াল, যেন আর এক মুহূর্ত সহ্য করতে পারবে না।আনায়া ঘুরে অন্যদিকে যেতে চাইল, কিন্তু তানহা পেছন থেকে তার পায়ে পা লাগিয়ে দেয়। ফলে আনায়া পিছলে পড়ে যায় সেই লালচে তরল লেকের ভেতরে। লেকের পদার্থটা এতটাই পিচ্ছিল ছিল যে সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বারবার পড়ে যাচ্ছিল। তানহা এবার নিজেও ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যায় লেকের ভেতর। কিন্তু সে তার অবস্থান নিয়ে চিন্তিত না হয়ে বারবার আনায়া কে ফেলে দিতে থাকে। আনায়া যতবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ততবার তানহা তাকে ফেলে দেয় আনায়া বিষয়টা বুঝতে পারে কিন্তু তাও চুপ করে যায়। ঠিক তখনই ইউভান সেখানে এসে উপস্থিত হয়। আনায়া আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তানহা আবার তার হাত ধরে টেনে ফেলে দেয়।আনায়া মাথা গিয়ে মাটিতে লাগে। যন্ত্রণায় সে চিৎকার করে ওঠে। ইউভান এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিল, কিন্তু এবার তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তার গলায় বজ্রকণ্ঠে ধমক শোনা গেল, "স্টপ ইট!" ইউভানের কণ্ঠ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে আশপাশের সবাই থেমে তাকাল। তানহা মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। আনায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তখনই সেখানে রুহিও উপস্থিত হলো। ইউভান তানহার দিকে একবারও না তাকিয়ে সোজা লেকের ভেতরে পা দিল। তানহা ইউভানকে দেখে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু ইউভান তানহাকে উপেক্ষা করে আনায়াকে কোল তুলে সবাইকে অবাক করে লেক থেকে বেরিয়ে এলো।রুহি অবাক চোখে সবকিছু দেখছে। আশেপাশে থাকা সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল।আনায়া তো সম্পূর্ণ ভেবাচেকা খেয়ে তাকায়। ইউভান ধীরে ধীরে হোস্ট হাউজের দরজার দিকে এগিয়ে এল। আনায়া তার কোলেই আছে, পুরো শরীরে লাল তরল মাখা।আনায়া এবার কাঁপা গলায় বলল, "আপনি কী করছেন? সবাই দেখছে!" ইউভান শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় উত্তর দিল, "সবার দেখার মতো কোনো কাজ এখনো করি নাই এখনো। আমি নির্লজ্জ না, যা করার রুমের ভেতরেই করব।" আনায়ার কান গরম হয়ে ওঠে লজ্জায়।ইচ্ছে করছে ইউভানের চুল এক একটা করে ছিড়তে।একটা মানুষ কত বড় নির্লজ্জ হলে এসব কথা বলে।আনায়া চুপ থাকে কারণ সে ইউভানের উপর রাগ করেছে।তাকে থাপ্পড় মেরে এসব আদিখ্যাতা দেখিয়ে মন গলাতে পারবেনা আনায়ার। চলবে,


👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ