Golper Alo - ভালোবাসার গল্পের জগৎ 🔖পর্ব: [১ম} আত্মার_অন্তরাল একটি অসাধরণ রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo , এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প

Header Ads Widget

🔖পর্ব: [১ম} আত্মার_অন্তরাল একটি অসাধরণ রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo , এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প

🔖আত্মার_অন্তরালে

গল্পের ছবি

✍️ লেখক: লেখিকা_প্রীতি_আক্তার_পিহু

📖 পর্ব: [১ম]

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।


🔖আত্মার_অন্তরাল একটি অসাধরণ রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু

প্৩০ বছর পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পা রাখল চৌধুরী পরিবারের বড় ছেলে, #সায়ন_চৌধুরী_ইউভান। তার হাতে একটি কালো টলি ব্যাগ।তার বয়স ৩০ বছর কিন্তু তার সঙ্গে পরিবারের কখনো স্বশরীরে দেখা হয়নি। জন্মের ১০ দিনের পর তার বাবা তাকে মামা মামীর হাতে তুলে দেয়। তখন তারা তাকে নিয়ে আমেরিকায় চলে আসে। আশেপাশে কয় জন সিকিউরিটি গার্ড সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য। তার পরনে কালো স্লিম-ফিট ডিস্ট্রেসড জিন্স আর হালকা শাইনি টেক্সচারের লেদার জ্যাকেট, যার ভেতর সাদা গ্রাফিক টি-শার্ট। জ্যাকেটের হাতা একটু গুটানো, তার নিচে দেখা যাচ্ছে ব্রেসলেট আর রিং। এক হাতে কালো বেল্টের দামি ঘড়ি পড়া। ইউভান এর মুখাবয়ব একেবারে শার্প মসৃণ চিবুক, খাড়া নাক, আর হালকা চাপ দাড়ি। উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট, আর তার শরীরের গঠন অ্যাথলেটিক পেশিবহুল বুক, প্রশস্ত কাঁধ। উজ্জ্বল হলুদ বর্ণ গায়ের রং,গাঢ় গ্রে ব্লু চোখের মনি, চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত লম্বা যা হালকা ওয়েভি আর ব্যাক-সুইপড স্টাইলে সেট করা।ইউভানের বাঁ হাতে জুড়ে Burning Raven আকৃতি ট্যাটু করা। বিদেশে বড় হয়েছে বিদেশি কালচারে এগুলা করা তার। সে এগোতে থাকে সামনে। এরই মধ্যে দুটি যুবক দ্রুত এগিয়ে এলো ইউভানের দিকে। একজনের নাম আয়ান যে তারই জমজ ভাই। ইব্রাহিম চৌধুরীর তার ছোট চাচার তিন মেয়ে বড় মেয়ের নাম সারাহ আর ছোট দুটোর মেয়ের একজনের নাম #আনায়া_চৌধুরী ।আরেকজনের নাম রুহি। আরেকজন সাদনান সারাহ এর হবু স্বামী। ইউভানের বাবার নাম আহসান চৌধুরী। আয়ান, কাছে এসে ইউভান কে জড়িয়ে ধরল। উত্তেজিত স্বরে বলল, "আজকের মতো খুশি আমি আর কখনো হইনি! তোর জন্য বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে ভাইয়া ।" ইউভান মৃদু হাসল কিন্তু কোন কথার উত্তর দিল না সে সব সময় গম্ভীর চুপচাপ থাকে।আয়ান আর তার সম্পর্ক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাছাড়া পরিবারের কারো সঙ্গে তার আগে কখনো দেখা হয়নি। ঠিক তখনই সাদনান এগিয়ে এসে ইউভান জড়িয়ে ধরে ঠাট্টার সুরে বলল, "কেমন আছো, শালাবাবু?" ইউভান মুচকি হেসে শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিল, "এই তো, ভালো।" আয়ান তখন তাড়া দিয়ে বলল, "যাক, অনেক কথা হয়েছে। চল এখন বাসায় যাই। সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।" কিন্তু ইউভান হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, "আমি ভার্সিটি যাব।নবীন বরণ উৎসবে আমার অ্যাটেন্ড করতে হবে।এখন আমার পক্ষে বাসায় যাওয়া সম্ভব না।" আয়ান ও সাদনান একে অপরের দিকে তাকাল। আয়ানের চোখে চিন্তার ছাপ। সে একটু শান্ত হয়ে বলল, "দেখ, আমি বুঝতে পারছি। এত বছর পর পরিবেশ আর পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর। যা কিছু হয়েছে, তুই তো সব জানিস।মামনি তোর জন্য অপেক্ষা করছে। অন্তত মামনির কথা ভেবে বাসায় চল।একটিবার তাকে দেখবি প্লিজ।" ইউভান চুপ করে রইল তার চোখে শুধু শূন্যতা। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর সে ধীরে জবাব দেয়, "আমি জানি মামনি অপেক্ষা করছে, কিন্তু... আমার জন্য ওই বাড়িটা এখনও অচেনা।" সাদনান হালকা গলায় বলল, "তুমি না গেলে মামনি ভীষণ কষ্ট পাবেন। কারো জন্য না হলেও মামণির জন্য অন্তত বাসায় দেখা করে তারপরে তুমি ভার্সিটি যাও।" আয়ান কিছু একটু ভেবে বলতে থাকলো, "চল, তুই যতক্ষণ থাকতে চাইবি ততক্ষণ থাকবি, পরে তোর ভার্সিটি যাবার ব্যবস্থা করব। কিন্তু আগে চল বাসায়। মামনিকে তুই খালি একবার দেখে যা।" ইউভান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আশেপাশে গুঞ্জন শুরু হয়। এতক্ষণে তারা বুঝতেই পারছে না মিডিয়া কীভাবে চলে এলো। ইউভান দ্রুত মুখে মাস্ক পরে নেয়, কিন্তু এতেও লাভ হয় না।মেয়েরা একের পর এক গুঞ্জন তুলতে থাকে— "ওই তো! ওটাই না রকস্টার ইউভান? এক এক করে ফ্যানরা অটোগ্রাফির জন্য ভিড় জমাতে শুরু করে। আয়ান, সাদনান কোনমতে ভীর ঠেলে সামনে এগোই। এক মুহূর্তের মধ্যে চারদিক থেকে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলতে শুরু করে। এদিকে উন্মাদনার মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইউভানকে ছুঁয়ে দেখার জন্য। ইউভান মুখ শক্ত করে বিরক্ত চোখে তার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াস এর দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, "ইফ ইউ ইভেন ফা*ক দিস আপ, তোমার বডি কেউ খুঁজে পাবে না এমনকি পুলিশ ও না।" পিয়াস ভয়ে কাঁপতে থাকে দ্রুত সিকিউরিটি টিম বাড়িয়ে দেয়। ইউভান মুহূর্তে দেরি না করে গাড়ির ভেতরে উঠে বসে, আয়ান,সাদনান তার পাশে বসে দরজা লক করে।বাইরে তখনও মিডিয়া আর ফ্যানদের চিৎকার চলছে,তারা একটা অটোগ্রাফির জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। আয়ান এবার বিরক্তি নিয়ে ইউভান এর দিকে চেয়ে বলে, "তুই কি পাগল হয়েছিস ভাই? তুমি নিজে এত বড় সিঙ্গার তাহলে কিভাবে ভার্সিটিতে ক্লাস নিবি?ওরা যদি তোকে চিনে ফেলে চারদিকে মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়ে যাবে যে রকস্টার ইউভান ভার্সিটির প্রফেসর?" ইউভান বাঁকা হাসে।এরপর মিনমিনিয়ে নিয়ে বলে ওঠে, " কেউ আমাকে চিনবেই না।কেউ জানবে না আমার আসল পরিচয়।" "এভাবে কতদিন পরিচয় গোপন রাখবি তুই?গান গাওয়া তো তুই ছেড়ে দিবি না তাহলে দুই জায়গায় কিভাবে ম্যানেজ করবি?এদিকে পাপা তোকে বিজনেস নিয়ে প্রেসার দিবে তখন কি করবি?" ইউভান চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

"কারো জন্য আমি নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে পারব না।আমার কাছে সম্পর্ক কোন মূল্য রাখে নি আর না রাখবে।আমি আমার মর্জি মতোই চলবো।" আয়ান কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় সাদনান এর ইশারায়। গাড়িতে বসে ইউভান জানালার বাইরে চারদিক চোখ বুলালো। সবকিছুই তার অপরিচিত তার অপরিচিত হওয়ার কারণ আছে। কারণ এই ৩০ বছর একটিবারও তার বাংলাদেশে আসা পড়েনি। তার পরিবারের সঙ্গে শুধু ফোনেই যোগাযোগ হয়েছে তার।তার জন্মের পাঁচ দিনে পরপরই তার মামনি প্যারালাইজড হয়ে যাই। যার কারণে বাধ্য হয়ে একপ্রকার আহসান চৌধুরী তাকে তার মামা মামীর হাতে তুলে দেয়।যে বয়সে তার খেলেদুলে বেড়ানোর কথা সে বয়সে সে তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছে। ছোটবেলা থেকে গানের প্রতি তার অন্যরকম একটি নেশা ছিল আর এই গানটিকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছে সে।তবে এখানে ভার্সিটিতে জয়েন করার অন্য একটি কারণ আছে। ----------------------- একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে অষ্টাদশী কন্যা তার সম্পূর্ণ মনোযোগ ডায়েরিতে । তার কালো আর লম্বা চুল ঘাসের উপর মৃদু ছড়িয়ে আছে।সে ডায়েরির ভাঁজে শুকানোর সূর্যমুখী ফুল গুলো মনোযোগ সহকারে দেখছে। তার গায়ের রঙ ছিল অতিরিক্ত সাদা। তার পরনে একটি হালকা গোলাপি রঙের লম্বা গাউন। তার চোখের পাপড়ি গুলো ঘন এবং টানা, সরু নাক, এবং পাতলা ঠোঁট, অতিরিক্ত ফর্সা শরীর একসাথে মিশে ভুবনময়ি থেকে কোন অংশ কম লাগে না। অষ্টাদশীর সবথেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল তার চোখের সোনালী মনি তার চোখের মধ্যে যেন সারা পৃথিবীর গল্প লুকিয়ে আছে। অষ্টাদশীর ধ্যন ভাঙ্গে চিৎকারের আওয়াজে চমকে উঠে ডায়েরিটা বন্ধ করে সামনের দিকে তাকায়। সামনে মাজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুহি। রুহি রেগে বলে উঠে, " তুই আবার তোর সেই প্রেমিক ভূতের দেওয়ার সূর্যমুখী ফুলগুলো নিয়ে গবেষণা করছিস?তোর উকিল না হয়ে সাইন্টিস হওয়া উচিত আনায়া ।" আনায়া বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে উঠে দাঁড়াল। তার দীর্ঘ চুলগুলো এতক্ষণ ঘাসের ওপর ছড়িয়ে ছিল। সে উঠে দাঁড়াতেই চুলের শেষাংশ হাঁটুর নিচে নেমে এল। কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলল, "তোর কেন বারবার মনে হয় সে ভূত?যদি ভূতি হত তাহলে রাত্রে সূর্যমুখী ফুল দুটোকে এনে রেখে যায় আমার ঘরে? রুহি এবার আরও বিরক্তি নিয়ে বলল, "গত পাঁচ বছর ধরে তুই একই কথা শুনিয়ে যাচ্ছিস।আমি বারবার বলেছি এই বিষয়ে বাসায় কথা বল কিন্তু তুই মোটেও রাজি না। আমার মনে হয় তুই ওই ভূতের প্রেমে পড়েছিস আলু।" আনায়া মুখ কিছুটা শক্ত হয়ে আসে। তবুও সে শান্ত গলায় বলে, "আমার মন এতটাও সস্তা না যে যাকে তাকে দিয়ে দিব হুহু।এই অরু কখোনো কোন ছেলের প্রেমে পড়েনি আর পড়বেও না। আমার যার তার উপর ফিলিংস আসে না। তাই তুই বাজে কথা বলা বন্ধ কর।" রুহি এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে, "তোর মত নিরামিষকে প্রেম ভালোবাসা বোঝানো আর গাধাকে ঘোড়া বানানো মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। যাইহোক আজকে ভার্সিটিতে নবীন বরণ উৎসব আর মাত্র আধা ঘন্টা সময় আমাদের হাতে। তুই এখনো রেডি হোস নাই আলুর বাচ্চা। আনায়ার চোখ বড় হয়ে যায় এবার বুঝতে পেরে তড়িৎ বেগে রুহির হাত ধরে বলে, "তুই আগে থেকে বলবি না যে ভার্সিটি জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে!" বলেই রুহির হাত ধরে দৌড়াতে থাকে। রুহি দৌড়াতে দৌড়াতে আনায়ার পেছন পেছন গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, "আমি তো সেই জন্যই ডাকতে এসেছিলাম!" আনায়া এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসল। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ কারও সঙ্গে ধাক্কা খায়। ধাক্কায় কিছুটা পিছলে যেতে থাকলে রুহি তৎক্ষণাৎ তাকে হাত ধরে সামলে নেয়। সামনের দিকে তাকিয়ে আনায়ার চোখে বিরক্তির ছাপ। কারণ, সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েপরনে জিন্সের প্যান্ট আর ছোট্ট টপস, যার সঙ্গে আনায়ার কোনোদিনই বনিবনা হয়নি। মেয়েটি আর কেউ নয়, বরং তার মায়ের বোনের মেয়ে তানহা।এরই মধ্যে সাইমা বেগম, আনায়ার মা রান্নাঘর থেকে হুংকার ছাড়লেন, "আস্তে মা! তোরা দু’জনে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিস কেন? তোরা কি এখনো কলেজের জন্য রেডি হোসনি? আমি টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে অপেক্ষা করছি, আর তোরা এদিকে ছোটাছুটি করছিস। তোরা কখন বড় হবি, বল তো!" আনায়া আর রুহি একে অপরের দিকে তাকিয়ে যেন দোষ স্বীকার করে নিল। তখনই তানহা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল, "ওদের বয়স তো আর কম হয়নি খালামণি। তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও। পড়াশোনার ইচ্ছা যদি না থাকে, তবে আর সময় নষ্ট করে লাভ কী!" তানহার এই কথা শুনে আনায়ার চোখ শক্ত হয়। সে রাগে গলা চড়িয়ে বলল, "বিয়ে মনে হয় তোমারই করতে ইচ্ছা হচ্ছে, তানহা আপু। নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারছ না, তাই আমাদের কথা বলে চালাচ্ছো।" তানহার চোখ রাগে জ্বলতে লাগল। সে কিছু বলবে, এমন সময় পেছন থেকে আহসান চৌধুরী গম্ভীর গলায় বললেন, "মামনিরা, তোমরা উপরে যাও। আমি গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো, কলেজের জন্য দেরি হচ্ছে।" আনায়া আর রুহি এবার সত্যি ভদ্র মেয়ের মতো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। কারণ তারা দুজনেই জানে, ইব্রাহিম বা আহসান চৌধুরীর কথার অবাধ্য হওয়ার সাহস তাদের নেই। তবে কিছুদূর যেতেই দুজনে পেছন ফিরে দেখে, বড় বাবা কাছাকাছি আছে কিনা। যখন নিশ্চিত হয়, তিনি নেই, তখন দু’জনেই লাফিয়ে ছুটতে থাকে, একে অপরের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে করতে। কেউ একদিকে, কেউ আরেকদিকে রুমে ঢুকে গেল। নিচ থেকে দাঁড়িয়ে এসব সাইমা বেগম দেখে মুচকি হাসে। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় তাড়াতাড়ি নুরজাহান বেগমের রুমের দিকে পা বাড়াই । ইউভানের আর আয়ানের মা নুরজাহান বেগম যে আজ প্লিজ কথায় ধরে প্যারালাইজড।নুরজাহান বেগম বিছানায় শুয়ে আছে। সাইমা বেগম ধীরে ধীরে বিছানার পাশে বসে বলতে থাকে, " ইউভান আসছে ভাবি। কত বছর পরে ছেলেটা কত বড় হয়ে গিয়েছে।কত রাগ অভিমান করেছে আমাদের উপর তাই না?ওকে কেন বাইরে পাঠিয়ে দিল ভাই?আয়ানকে পারলে ওকে কি পারতাম না বড় করতে?" দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সে।আয়ান আর ইউভান জমজ তবে আয়ানকে জন্ম থেকে সে নিজের হাতেই বড় করেছে। নুরজাহান বেগমের চোখের কোনা থেকে এক ফোঁটা পানি পড়ে। সাইমা বেগমের কোন কথা বাড়ায় না চুপচাপ ঘুম থেকে বেরিয়ে আসে। আনায়া রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। তার পরনে পিংক কালারের একটি কুরতি, ঘাড়ে সাদা ওড়না ঝুলছে। চুলগুলো একপাশে বেনী করে রাখা, তবে বেনীর শেষ অংশ হাটু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে কারণ তার চুল ছিল অত্যন্ত লম্বা। আনায়া একবার খাবারের টেবিলের দিকে এগুলো। তার এখন খাবার খাওয়ার মোটেও মুড নাই তাই চুপি চুপি এক দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এল। গাড়িতে এসে বসতেই রুহি অবাক হয়ে বলল, "তুই আবার কোথা থেকে চুরি-ডাকাতি করতে আসলি?" আনায়া হাপাতে হাপাতে বলল, "একটা মিশন কমপ্লিট করে আসছি।" "কি মিশন?" "খাবার না খাওয়ার মিশন।" রুহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "এই মেয়ে কোনোদিন ভালো হবে না। আনায়া উচ্চস্বরে হেসে বলতে থাকে, কাকে কি বলেছিস, তুই তো নিজেই না খেয়ে চলে আসছিস। দুজনেই এক গোয়ালের গরু।" গাড়ির সামনে ড্রাইভারের সিটে বসা আহসান চৌধুরী হালকা হেসে পেছনে তাকালেন। আনায়া আর রুহি পেছনের সিটে বসে নিজেদের কথায় ব্যস্ত। গাড়ি চলতে শুরু করল। আনায়া জানালাটা খুলে দিল। ঠাণ্ডা বাতাস তার মুখে লাগছে।গাড়ি যখনই বড় গেট দিয়ে বের হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই অপর পাশ থেকে আরেকটি গাড়ি ঢুকছে। দুই গাড়ি ক্রসিং হওয়ার মুহূর্তে অরু ফোন টিপছিল। এমন সময় জানালা দিয়ে হাওয়ায় তার ওড়নাটা উড়ে বেরিয়ে গেল। আনায়া তা টের পেয়ে তৎক্ষণাৎ জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখল। বাড়ির ভেতরে ঢোকা গাড়ির একটি হাত জানালা থেকে বেরিয়ে এসেছে, সেই হাতে তার ওড়নাটা ধরা।আনায়া দৃষ্টি আটকে গেল সেই হাতের দিকে। খুব ভালোমতো লক্ষ্য করল পুরুষালী হাতটির আঙুল থেকে কবজির নিচ পর্যন্ত ট্যাটু করা।আনায়ার নাক মুখ কুঁচকে এলো। তার এসব মোটেও পছন্দ না। আনায়া চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু তার আগেই তাদের গাড়ি অনেকটা দূরে চলে গেল। রুহি বিরক্ত হয়ে বলল,

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

"একটা ওড়নাও তোর দ্বারা সামলানো হয় না।" আনায়া কিছু বলল না। চুপচাপ চুলের বেনী খুলে দুই পাশে ছেড়ে দিল। সে জানালার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে ভাবতে থাকল, "ওটা কে হতে পারে? হাতে ট্যাটু করা বাসায় কি নতুন কেউ এসেছে?ধুর আমার ওড়নাটা কোন খারাপ লোকের হাতে গেল কে জানে।" আয়ানদের গাড়ি এসে থামল বিশাল এক ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। বিশালাকার সাদা পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা পুরো বাড়ি, যার উপরে একদিকে সোনালী রঙের কারুকাজ করা লোহার নকশা। গাড়ি থামার পর ইউভান ধীর গতিতে গাড়ি থেকে নামল। তার হাতে ছিল সাদা ওড়নাটা, যা কিছুক্ষণ আগে তার দিকে উড়ে এসেছিল। ইউভান ওড়নাটা হাতে পেঁচিয়ে একবার গভীরভাবে তাকাল, কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না কোথা থেকে এসেছে। ইউভান একটু দাঁড়িয়ে পুরো বাড়িটা একবার দেখল। তারপর ওড়নাটা হাতে শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে এগলো। বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই সাইমা বেগম দৌড়ে এলো। চোখ আটকে গেল ইউভান দিকে, যেন বহুদিনের অপেক্ষার পর তারা একটি চেনা মুখের দেখা পেলেন। সায়মা বেগম এক সেকেন্ড দেরি না করে ইউভানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। ইউভান মৃদু হেসে বলল, "আমি তো এসেছি ছোট মামনি। তোমার চোখে পানি দেখতে চাই না। এসব কান্নাকাটির গল্প ক্লোজ করো।" সাইমা বেগম চোখ মুছে বলে ওঠে, "চল তোর মামনি তোর জন্য অপেক্ষা করছে দেখা করে আসবি।" ইউভানের মুখয়াব বদলে গেল। বুকের ভেতর অজানা ব্যথা বাড়ি দিচ্ছে বার বার।তাও নিজেকে সামলে নুরজাহান বেগমের রুমের দিকে পা বাড়াই।পেছনে আয়ান আর সাদনান ও আসে।ইউভান ধীর পায়ে তার মায়ের পাশে এসে বসলো। সে বরাবরই খুবই শক্ত মনের মানুষ।নুরজাহান বেগম চোখ তুলে তাকালো তার ছেলের দিকে।এর আগে অনেকবার ফোনে দেখেছে তবে সামনাসামনি ৩০ বছর পর দেখে মায়ের অনুভূতি জেগে ওঠে তার মধ্যে। চোখ থেকে অঝোর পানি পড়তে থাকে। ইউভান নুরজাহান বেগমের চোখে পানি মুছে বলে ওঠে, "চোখের পানি কেন মামনি?আমি তো চলে এসেছি খুশি হওনি বুঝি তুমি?" নুরজাহান বেগম মাথা নাড়ায় মানে সে খুশি হয়েছে। ইউভান ইশারা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে, "তাহলে? এখন থেকে কোন কান্নাকাটি না সব সময় আমি আমার মামনিকে হাসিখুশি দেখতে চাই হুমম?" নুরজাহান বেগম মুচকি হাসলেন। তার ইচ্ছে হলে অনেক কিছু বলার কিন্তু কিছুই বলতে পারল না। ইউভান উঠে দাঁড়ায়। "আমাকে ভার্সিটির প্রোগ্রামে এটেন্ড করতে হবে। আসতে আসতে লেট হবে অনেক।" সাইমা বেগম অবাক হয়ে বলে, "এসব কি বলছো বাবা? মাত্রই আসলে আর এখনই বের হয়ে যাবে? কিছু খেয়ে তো নাও।আর তোমার বাবা আর চাচ্চুরা বাসায় ফিরুক তাদের সঙ্গে কথা বলে না হয় যাও।" "নাহ ছোট মামনি এমনি অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে।পাপা আর চাচ্চুর সাথে রাত্রে কথা বলা যাবে। এখন আমার হাতে সময় নাই বের হলাম।" সায়মা আর কথা বাড়ায় না। ইউভান বাসা থেকে বের হতেই যাবে তার আগে পেছন থেকে আয়ান ডেকে ওঠে। "আরে ভাই তুই গলায় এটা কী ঝুলিয়ে রেখেছিস?এটা আবার কোথায় পেলি তুই?" ইউভান এবার চোখ তুলে তার ঘাড়ে ঝোলানো সাদা ওড়নাটার দিকে তাকায়।সাদনান সেদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। ইউভান কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে, "তেমন কিছু না আসার পথে কোথা থেকে যেন উড়ে এসেছে।" আয়ান তৎক্ষণ ওসব কিছু বাদ দিয়ে শুধালো, " আচ্ছা ঠিক আছে তোর তো ফিরতে ফিরতে রাত হবে। আনায়া আর রুহি তো ওই ভার্সিটিতেই পড়ে পারলে ওদের গাড়িতে উঠিয়ে দিস।" ইউভান ব্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, "বনুকে তো চিনলাম তবে এই আনায়া টা কে?আর আমি নিজের আসল পরিচয় যাচ্ছেনা ভার্সিটিতে। তাই তুই বিকালে এসে ওদের নিয়ে যাস।" " ছোট চাচ্চুর মেয়ে আনায়া। তোর সাথে এখন অব্দি কখনো কথা হয়নি তো তাই চিনিস না। সমস্যা নাই পরিচয় করিয়ে দিব।প্যারা নেওয়া লাগবে না আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।" ইউভান আর কথা বাড়ায় না।এ বাড়ির সবার সাথে তার কথা হলেও এক দুইজনের সঙ্গে কখনোই কথা হয়নি। তার মধ্যে আনায়া একজন। বাইরে তার জন্য দাঁড়িয়েছিল কালো রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। সাথে সাথে সে মাস্ক পড়ে নেই। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াস এসে দরজা খুলে দিতেই ইউভান গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি চলতে শুরু করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। । ভার্সিটির ক্যাম্পাস আজ একদম অন্যরকম।ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই রঙিন শাড়ি, ভারী গয়না আর গাঢ় মেকআপে সেজে উঠেছে।তবু এত মানুষের ভিড়ে আনায়া আর রুহি দুজনেই সিম্পিল পোশাক পড়ে এসেছে। আনায়া এর কোনো বাড়তি অলংকার নেই, মেকআপ নেই, তবুও তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য নজড় কাড়া বিশেষ করে তার চোখের রঙ এতটাই সোনালী বর্ণের যে দূর থেকে দেখলে মনে হবে লেন্স পরেছে। রুহি পাশে হালকা গোলাপি রঙের ড্রেস পরে আছে।তখনই রুহি ফিসফিস করে বলে ওঠে "দেখলি? সবাই আমাদের দিকেই তাকাচ্ছে। সব রূপসীদের ভিড়ে আমরা দুই ভিনগ্রহের প্রাণী। " আনায়া একপাশে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, "তাকাবেই তো সাজগোজ না করেও যদি নজর কাড়তে পারি, তাহলে সমস্যা কোথায়? আর আমার আনকমন জিনিসই সব থেকে বেশি পছন্দ।" হঠাৎ করেই ভার্সিটির প্রবেশদ্বারে একে একে তিনটা গাড়ি প্রবেশ করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো ক্যাম্পাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।সবাই গেটের দিকে বের করতে থাকে।অনেক সিনিয়ররা বলাবলি করছে নবীন বরণ উৎসবের চিপ গেস্ট প্লাস নিউ ইংলিশ প্রফেসর এসেছে।সবাই এমন ভাবে বের করেছে যেন কোন সেলিব্রেটি এসেছে তা দেখে আনায়া একটু ভিড় থেলে সামনে এসে দাঁড়ায়।কয়েকটা সিনিয়ররা হাতে ফুলে তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বাগতম করার জন্য। তখনই প্রথম গাড়ি থেকে বের হয় দুজন সিকিউরিটি গার্ড, তারপর মাঝের গাড়ির দরজা খুলে দেই তারা সাথে সাথে কাঙ্খিত মানুষ নেমে আসে গাড়ি থেকে। আনায়া ব্যক্তিটিকে দেখে থমকে দাঁড়ায়। আশেপাশের সবাই বলাবলি করছে কী হ্যান্ডসাম। আর কী আউটফিট। ইউভান মুখ মাস্ক দ্বারা আবৃত তাই তাকে কেউ দেখছে না কিন্তু তার বাইরের আউটফিট থেকে সবাই ফিদা। আনায়া ভ্রু কুচকে ইউভানের উপর থেকে নিচ অব্দি একবার দেখে নিল। ভিরের মধ্যে ঠিকঠাক মতো দেখতে পারছে না।তার সাথে কোন ইন্টারেস্ট নাই দেখার। তাই ওখানে আর না দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই তখনই এক সিনিয়র ভাই ডেকে বলে ওঠে, " তুমি প্রথম বর্ষের ছাত্রী না আপু?" আনায়া পেছন থেকে ফিরে মাথা নাড়ায়। ততক্ষণ সিনিয়র ভাইটি তার দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলে, " তাহলে ভালোই হলো একটা উপকার করে দাও আপু ইউভান স্যরকে এই ফুলে তোড়াটা তুমি গিয়ে দিয়ে আসো।আমার অনেক কাজ অনুযায়ী দেখতে হবে।" বলেই গোলাপ ফুলের তোড়াটা আনায়ার হাতে চলে যাই। আনায়ার শুধু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।তবে এটুকু বুঝতে পারছে নতুন ইংলিশ প্রফেসর এর নাম ইউভান। এখন কীভাবে কী করবে কিছু বুঝতে পারে না।ফুলের তোড়াটা আনায়ার হাতে থাকায় বাকি স্যারেরা তাকে এগিয়ে যেতে বলে। সে কোন উপায় না পেয়ে ইউভানের দিকে এগোতে থাকে তার মাথা নিচু করা। ইউভান একবার চোখ তুলে তাকায় আনায়ার পানে তৎক্ষণ চোখ সরায় সঙ্গে সঙ্গে।আনায়া ইউভানের দিকে না তাকিয়ে ফুলের তোড়াটা তার সামনে এগিয়ে ধরে। কিন্তু ঠিক তখনই ইউভান সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে ফুলে তোড়াটা নিতে গিয়েও থেমে যায়। পাশে দাঁড়ানো তার অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াসকে ইশারা দিয়ে ফুলটা নিতে বলে। পিয়াস আদেশ পেয়ে মুহূর্তে দেরি না করে আনায়ার হাত থেকে ফুলে তোড়াটা নেই। সাথে সাথে আনায়া চোখ তুলে তাকায় সামনে থাকা ব্যক্তির পানে।তার চোখমুখ শক্ত হয়ে যায় এভাবে তাকে অপমান করার মানে কি? কিন্তু সেই মুহূর্তে আনায়ার দৃষ্টির শীতল হয়ে আসে সামনে থাকা পুরুষকে দেখে। একেবারে সামনাসামনি ইউভানকে দেখে তার বুকের ভেতরটা শিতল হয়ে আসে। আনায়ার দৃষ্টি আটকে ইউভানের চোখের দিকে ডিপ গ্রে ব্লু মনির রং। আনায়ার দৃষ্টি সরে না সেই চোখের দিক থেকে আর ওই পুরুষলির চোখ ঠিক তার চোখের দিকেই তাকিয়ে আছে। আর তাকিয়ে থাকতে পারেনা আনায়া তার রক্ত উথাল পাথাল করছে। এই প্রথম কোন পুরুষ তার হৃদস্পন্দন নারিয়ে দিলো।আনায়া কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল তার হাত থেকে ফুল না নেওয়ার কারণে। কিন্তু তার গলা থেকে কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না এখন। ইউভান নির্ভীক ভঙ্গিতে আনায়া পাশ কাটিয়ে চলে যায়।আর বেচারা আনায়া এখনো রোবটের মত হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই রুহি এসে আনায়াকে খোঁচা মেরে বলে, " আরে ইউভান স্যার কে তুই জানিস আনায়া?" আনায়া একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুহির দিকে তাকায়।এমনিতেও ইউভান ঘোড়ার ছাতার জন্য তার কলিজা বুক ফুসফুস কেমন কেমন করছে।আর লোকটার নাম বারবার তার সামনে নিচ্ছে এই মেয়ে।আনায়া রুহির কোন কথা না শুনে হনহনিয়ে হাটা দিল।রুহি কথা বলতে গিয়েও গিলে ফেলল।কিছু বুঝতে না পেরে সেও আনায়ার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করে। ------------------ একটি গাছের ছাউনিতে পিয়াস বসে তার রক্তাক্ত হাতে পানি ঢালছে এবং যেই হাত দিয়ে পানি ঢালছে সেই হাতও রক্তাক্ত। দুই হাতে অজস্র রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।দেখে মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে হাতের উপর কেউ নির্মমভাবে আঘাত করেছে। ওই পথ দিয়ে রুহি যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ তার চোখ আটকায় পিয়াসের দিকে।পিয়াসের রক্তাক্ত হাত দেখে রুহি তাড়াতাড়ি তার দিকে ছুটে আসে। "আরেহ ভাইয়া আপনার হাতে এত রক্ত কেন কি হয়েছে?অনেক রক্ত কিভাবে কাটল আপনার হাত?" সঙ্গে সঙ্গে পিয়াস উঠে দাঁড়ায়। কোন কথার উত্তর না দিয়ে হনহনিয়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। রুহি একহাতে মাথা চুলকায়।কি হলো কিছুই বুঝতে পারে না। "আজব লোক তো।মাথায় নিশ্চয়ই কোন প্রবলেম আছে।" মনে মনে আওড়াতে থাকে রুহি। অডিটোরিয়ামের বিশাল মঞ্চের সামনে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। মাইক্রোফোনে এক একজন সিনিয়র বক্তৃতা দিচ্ছে।কিন্তু আনায়া এসব থেকে দূরে অন্য জগতে আছে। সে পুরো ভার্সিটি কয়েকবার চক্কর লাগিয়েছে রুহির জন্য। মেয়েটা গেল কোথায়?তারা এখন বাসায় ফিরবে অথচ রুহিকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। সে দোতলা বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যেতে গিয়েই একটা চিন্তা মাথায় এলো। রুহি কি উপরের ক্লাসরুমগুলোর কোনো একটাতে বসে আছে?একটা পুরনো ভবনের করিডোর ধরে সে এগিয়ে এলো।ভবনের ভেতরটা তুলনামূলক ফাঁকা, নিস্তব্ধ। ক্লাসরুমগুলোতে কেউ নেই। হঠাৎ পুরো ক্যাম্পাস এক মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠে লোডশেডিং।সব আলো নিভে যাই সম্পূর্ণ অন্ধকার নেমে এলো।আনায়া দুই চোখ সঙ্গে সঙ্গে খিচে বন্ধ করে।কোথায় ফেঁসে গেল সে? একটা পাখি কুলিও নাই এখানে। চারপাশ নিস্তব্ধ অন্ধকার। আনায়া বরাবরই অন্ধকার খুব ভয় পায় সে এবার হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে।এক পা এগানোর সাহস পাচ্ছে না। এখন আর সহ্য করতে না পেরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।সে কিভাবে বের হবে এখন? ঠিক তখনই অন্ধকারের কেউ মুখ দিয়ে সুর তোলে( 'Love with Criminal)' এর ভয়ংকর সুরে আনায়া হীমশিতল যায়।গানের সুরটা এতটাই ভয়ঙ্কর যে আনায়া কান্না ভুলে যায়। ঠিক তখনই আনায়া কাঁধে কারোর শীতল স্পর্শ অনুভব করে। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। "ক কে এখানে?" কিন্তু কোন কথার আওয়াজ আসেনা অপর পাশ থেকে। এতে আনায়া আরো বেশি ভয় আরষ্ট হয়।বুকের ভেতর ধুকধুকানি বাড়তে লাগলো।এক মুহূর্ত পরেই পেছন থেকে কেউ শক্ত হাতে তার কব্জি ধরে ফেলে।সেই স্পর্শ এতটাই দৃঢ় ছিল যে শরীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও শিউরে উঠে ।ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে তার পেছনে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়।আনায়ার নিশ্বাস আটকে আসে, "কে আপনি ছেড়ে দিন আমাকে।" তখনই পেছনে থাকা ব্যক্তিটি পাশ থেকে ফিসফিসানির আওয়াজ শোনা যায় "হুশশশশশ ডোন্ট মুভ।" আনায়ার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।পুরুষলি কণ্ঠস্বর বুঝি এতটা গাঢ় হয়?আনায়ার ধুকপুকানি বেড়ে যায় এত গাঢ় কণ্ঠস্বর শুনে।সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে অন্ধকারের মধ্যে তাকে নিয়ে সামনে এগুলো। আনায়া চোখে যে বন্ধ করে ধীরে এগোতে থাকে।অতিরিক্ত ভয়ে কেঁদে ফেলে বলে, "আ আ আমি ভ ভয় পাচ্ছি।" তখনই সেই অন্ধকারের মধ্যে গাঢ় পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসে। "আমি আছি তো।" আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না আনায়া ঢলে পড়লো পেছনের দিকে। দুটি শক্ত হাত অন্ধকারে তার কোমর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।মুহূর্তেই কেঁপে ওঠে সে তার শরীরে এখন পুরুষলির হাতের ঠান্ডা স্পর্শ। " এভাবে কাঁপছেন কেন ম্যাডাম?" ঠান্ডা কন্ঠে ব্যক্তিটি বলে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে অষ্টাদশী ঘায়েল হয়ে পরে এক পুরুষের কন্ঠের আওয়াজে?অপরিচিত পুরুষের শরীর থেকে এক সুবাস ভেসে এলো তার নাকে ম্যান্ডারিন ফলের ঘ্রাণ।একটু হালকা, মিষ্টি ও সতেজ।গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো মুহূর্তেই।ব্যক্তিটি ধীরে ধীরে তাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, আনায়া অনুভব করছে যতই চেষ্টা করুক, এই মুহূর্তে তার শরীর পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে নেই।সিঁড়ির কাছাকাছি আসতেই সামনে কিছুটা ম্লান হলুদ আলো দেখা গেলো। করিডোরের এক কোণে একটা পুরনো টিউবলাইট টিমটিম করে জ্বলছিলো।আনায়ার চোখ জল জল হয়ে ওঠে কিন্তু ধীরে ধীরে তার শরীর থেকে সে স্পর্শটা গায়েব হতে থাকে। সে অবাক হয়ে লোকটার দিকে ঘুরতে গিয়েই পেছনে তাকালো কিন্তু কেউ নেই।পুরো করিডোর ফাঁকা। আশেপাশে কোনো মানুষের ছায়াও নেই।তার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।এইমাত্র তো সে এখানে ছিলো।এটা কী আনায়ার ভ্রম তাহলে? সে আরেকবার চারপাশে তাকালো।কিন্তু কেউ নেই। কিন্তু তার নাকে এখনো ম্যান্ডারিন ফলের মিষ্টি ঘ্রাণ লেগে আছে।আনায়া আর এক মুহূর্তো সেখানে দাঁড়ায় না তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে। তখনই তাকে খুঁজতে খুঁজতে রুহি ও সামনে এসে পড়ল। রুহি আনায়াকে এভাবে বিচলিত দেখে প্রশ্ন করে, "কি হয়েছে তোর এভাবে পাগলের মত ছুটছিস কেন?" আনায়া আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলে, "আমাদের এখনই বাসায় যেতে হবে। আমার শরীর ভালো লাগছে না। আর প্লিজ কোন প্রশ্ন করিস না বাসায় গিয়ে সবটা বলছি।" তাড়াতাড়ি রুহির হাত ধরে টেনে ভার্সিটির বাইরে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে। তাদের আরো কিছুক্ষণ সময় এখানে থাকার কথা ছিল।কিন্তু রুহি আর কোন কথা বাড়ায় না।তাদের গাড়ি চলতে শুরু করে আনায়ার আত্মা কাঁপছে কানে বাজছে সে ভয়ংকর সুর। বাসায় এসে আনায়া কারো সঙ্গে একটা কথা বলেনি। চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে লাইট বন্ধ করে।সে আজকে খাওয়া-দাওয়া করবে না। আপাতত সে একা থাকতে চাই, চোখ বন্ধ করে ভার্সিটিতে হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা চিন্তা করতে থাকে। মনে একটাই প্রশ্ন রয়ে যায় কে হতে পারে ব্যক্তিটি? -------- রাত একটার পরে চৌধুরী ম্যানসনে প্রবেশ করে ইউভান। আহসান এবং ইকবাল চৌধুরী ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে।এত বছর পর বাবা চাচাদের সামনাসামনি দেখে তার অনুভূতি অন্যরকম।আহসান চৌধুরী উঠে দাঁড়ায়। ইউভান ধীর পায়ে তাদের সামনে আসে।নীরবতা ভেদ করে আহসান গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,, "আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছায় নিজের কাজ বেছে নিয়েছো। ভালো কথা, তবে বাসায় ফিরে যাওয়া সেটা আমরা মেনে নিতে পারব না,” ইউভান কোন প্রতিক্রিয়া করল না সে নিশ্চুপ রইল। এরপর ইব্রাহিম ইউভানকে জড়িয়ে ধরে, “কেমন আছো বাবা?” ইউভান মুচকি হাসে, “এইতো ভালো চাচ্চু,” আর তারপর কোনো কথাই না বলে উপরে চলে যেতে থাকে।কিন্তু তখনই পিছন থেকে আহসান গম্ভীর কণ্ঠে পুনরায় বলে ওঠে ," "তুমি এত রাতে এসেছো কিছু খাবে না?” ইউভান নিরাসক্তভাবে বলে , “আমি রাতে খাই না পাপা।” এই ছোট্ট বাক্যটা যেন বড় একটা ক্ষতের মতো তাকে ছুঁয়ে যায়। আহসানের বুক ধপ করে ওঠে।রৌদ্র সবাইকে এক কথায় এড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ইকবাল চৌধুরী নিরবই থাকেন। ---------------------- গভীর রাতে আনায়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ তার মনে হল কোথাও দূরে একটি গিটারের সুর বাজছে। সে অবচেতনভাবে শোনে আর তখনই তার কানে পৌঁছায় একটি পুরুষ কণ্ঠ। আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে, তা বুঝে উঠতে সে তৎক্ষণাত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আওয়াজটা আরও স্পষ্ট হয়ে আসে, এবং তা বেলকনি থেকে আসছিল। সে দ্রুত পা বাড়িয়ে বেলকনির দিকে এগোয়।গিয়ে দেখতে পায় তার রুমের অপর পাশে বেলকনির সাইডে, চেয়ারে বসে এক ব্যক্তির গিটার বাজানোর দৃশ্য।ব্যক্তিটির পিছনের ঘাড় অব্দি ওয়েভি চুলগুলো নজর কাড়ে তার। আনায়া এটাই বুঝতে পারে না বাসায় নতুন কে এসেছে?তখন এই চেনা পুরুষের কন্ঠস্বরের কয়েকটা গানের লাইন তার কানে ভেসে আসে, কতদিন🎶 ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায় ক্লান্তিহীন, 🎶 তুমি ছিলে আমার কল্পনায় 🎶 সেই ছবি উঠলো ভেসে চোখর'ই পাতায়🎶 আমি শুধু চেয়েছি তোমায়🎶 টালমাটাল🎶 মনটা কিছু তোমায় বলতে চায় বেশামাল, 🎶 ভাবনা গুলো তোমায় ছুঁতে চায়🎶 আমি শুধু চেয়েছি তোমায় 🎶 আমি শুধু চেয়েছি তোমায়🎶 গানটি শেষ হতেই হঠাৎ আনায়ার মন ফিরে আসে। তার হৃদয় স্পন্দন উথাল পাথাল করছে।এই কন্ঠ সে আগেও শুনেছে।হ্যাঁ এটাই তো সে চেনা গাঢ় পুরুষলী কন্ঠ যা শুনে অষ্টাদশীর হৃদয় স্পন্দন থেমে গিয়েছিল। আনায়া উতলা হয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তিকে দেখার চেষ্টা করি কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়।আনায়া ব্যাকুল হয়ে পরছে নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। অপরদিকে ইউভান গিটারটি রেখে সেই সাদা ওড়নাটির দিকে চোখ তুলে তাকাই।ওড়নাটি তুলে নাকের কাছে ধরে চোখ বন্ধ করে নেই। চলবে,
🔖আত্মার_অন্তরাল একটি অসাধরণ রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু


👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ