Golper Alo - ভালোবাসার গল্পের জগৎ 👉পর্ব (১ ০ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

Header Ads Widget

👉পর্ব (১ ০ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।

🔖 আত্মার_অন্তরালে

আত্মার অন্তরালে গল্পের প্রচ্ছদ ছবি - প্রীতি আক্তার পিহু

✍️ লেখক: [প্রীতি_আক্তার_পিহু]

📖 পর্ব: [১০]

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।


👉পর্ব (১ ০ ) আত্মার_অন্তরাল রোমান্টিক গল্প । লেখক _প্রীতি_আক্তার_পিহু

আনায়ার আর সাহস হয় না সেখামে দাড়ানোর তাই সে তাড়াতাড়ি ইউভানের পাশ কাটিয়ে পা বাড়ায়।সেই মুহূর্ত ইউভান ঠান্ডা কণ্ঠে শুধালো, " পালিয়ে যাচ্ছিস?" আনায়া থেমে দাড়ায়।লজ্জায় গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে শুকনো কয়েকটা ঢুক গিলে বলে, "আমি কেন পালাবো?অনেক রাত হয়ে গিয়েছে পাশে কাউকে না জানিয়ে এসেছি তাই বাসায় ফিরতে হবে।" ইউভান এবার পেছন দিক ফিরে বলে, "একা একা বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নাই।আমার গাড়িতে উঠে বস আমি কিছু কাজ কমপ্লিট করে আসছি।" "নাহ তার কোন প্রয়োজন নাই আমি একা যেতে পারবো ইউভান ভাই।" ইউভান শক্ত চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, "তোর কাছে অনুমতি চাইনি আমি আনু।যেটা বলছি সেটা কর বিনাবাক্য । তোকে অন্যভাবে কথা শোনাতে বাধ্য করিস না আমায়।" আনায়া রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস নাই। এই লোকটা তাকে হুমকি দেওয়া ছাড়া কিছু করতে পারে না।আনায়া পেছন থেকে রুহি ডেকে ওঠে, "আলু তুই এখানে কীভাবে এলি?তুই তো বাসায় ছিলি তাহলে এখানে কি করছিস?" আনায়া ঘাবড়ে পেছন ফিরে রুহির দিকে তাকায়। তার মাথার ভেতর দ্রুত একটা বাহানা খুঁজতে থাকে। ইউভানের সাথে দেখা করতে এসেছে, এটা তো আর সরাসরি বলতে পারবে না। গলার ভেতর যেন শব্দ আটকে যাচ্ছে। আনায়া কোনোমতে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে, "আমি... আমি তো আসলে..." ঠিক তখনই পেছন থেকে তানহা হেঁটে আসে আর আনায়াকে দেখে একেবারে থ হয়ে যায়। অদ্ভুত কণ্ঠে বলে, "আনায়া? তুই এখানে?" তানহার চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ। এই জায়গায় আনায়াকে সে একদমই এক্সপেক্ট করেনি। আনায়া চুপ। তার বুকের ভেতর ধুকধুক শব্দ বেড়ে চলেছে। সে ভাবছে কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলাবে। তানহার চোখে সন্দেহ, অবিশ্বাস লুকিয়ে আছে। তানহার কণ্ঠস্বর একটু কঠিন হয়ে ওঠে, "কি হল? কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? তুই এখানে কি করছিস?" আনায়া শক্ত চোখে তাকায়। সবাই এমন ভাবে জিজ্ঞাসা করছে যেন সে কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছে। বুকের মধ্যে একটা ক্ষোভ দানা বাঁধছে। সে মুখ ফসকে বলে ফেলে, "কেন? আমার কি এখানে এসে কোনো ক্রাইম করে ফেলেছি?" রুহি অবাক হয়ে বলে, "তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেনো আনায়া? আমরা শুধু তোকে জিজ্ঞাসা করলাম।" আনায়া চুপ হয়ে যায়। যেনো নিজের রাগের স্রোতে নিজেই ডুবে যাচ্ছে। ঠিক তখনই তানহা পুনরায় ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে, "এটার জন্য শিক্ষা দরকার। মিনিমাম ভদ্রতা যার মধ্যে নাই, যেখানে সেখানে যার তার সাথে..." "স্টপ ননসেন্স।" ইউভানের গভীর কণ্ঠের হুংকারে চারপাশ জমে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই চুপ হয়ে যায়। এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে এসব মেয়েদের ড্রামা সহ্য করছে ইউভান। এবার তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আনায়ার রাগ তখন তীব্র আগুন হয়ে দাউ দাউ করছে।তার নিশ্বাস গাঢ় হয়ে আসে, বুকের ভেতর যেনো দাবানল চলছে।তানহা কে এবার সে ছেড়ে দিবে না। পুনরায় তেঁতে উঠে বলে, "হ্যাঁ, আমার মধ্যে ভদ্রতা নাই। আমি অভদ্র। খুশি? এখন যদি অভদ্রের মতো আচরণ করি মেনে নিতে পারবে তো, তানহা আপু?" তানহার গায়ে লাগে ভীষণ কথাগুলো। ইউভানের সামনে আনায়া তাকে এভাবে অপমান করছে। সে রাগে কাঁপতে থাকে। কিছু বলতে যাবে, সেই মুহূর্তে ইউভান ঠান্ডা গারো কন্ঠে বলে ওঠে, "তোদের এসব ড্রামা শেষ হলে গাড়িতে গিয়ে বস। বাসায় যেতে হবে। আর কারোর মুখ থেকে একটা কথাও শুনতে চাই না আমি। লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম।" শেষের কথাটা আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলেছে ইউভান।ইউভানের চোখের ভাষা কঠিন, নিষ্প্রাণলাগছে তার কাছে। আনায়ার ভেতরের অভিমান এবার গলা চেপে ধরছে।কিন্তু সে কি চুপ করে থাকার মেয়ে? না! সে কেন চুপ থাকবে? সে এবার রাগী গলায় বলে ওঠে, "আমি কেন চুপ থাকবো? আমি তো অভদ্র, তাই না? আর অভদ্ররা কখনো কারো কথা শোনে না। তাই আমি আপনার কথা শুনতে পারলাম না। সরি। আমাকে অভদ্রতামি করতে দিন।" ইউভান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু আনায়ার মুখের উপর এভাবে কথা বলা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। মেয়েটা এত সাহস কোথায় পায়? এত স্পর্ধা? আনায়ার চোখ দুটো অগ্নিশিখার মতো জ্বলছে। ইউভান ঠান্ডা কন্ঠে গর্জে ওঠে, "থাপড়িয়ে গাল লাল করে ফেলব বেয়াদব।তোর মুখ থেকে আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না আনু, চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বস।" আনায়ার বুকের মধ্যে মোচড় দেয় কথাটা।এক মুহূর্তের জন্য শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আনায়ার বুকের মধ্যে শূন্যতা তৈরি হয়। সে কি সত্যিই এতটা মূল্যহীন? এভাবে ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়া যাবে?আনায়া আর কোন কথা বলার সাহস পাই না।তানহা মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে সে তো এটাই চাইছিল ইউভান যেন আনায়াকে ধমক দেয়। সেই মুহূর্তে সেখানে আয়ান উপস্থিত হয়। আয়ান একসাথে সবাইকে দেখে কিছুটা হতভম্ব হয়ে তাকায়। বিষয়টা বুঝতে পারছে না—এখানে হচ্ছেটা কী?সে অবাক হয়ে বলে, "এখানে কি করছো সবাই? বাইরের আবহাওয়া খুবই খারাপ, আমাদের তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। আর আনায়া, তুই এখানে কখন এলি?" আনায়া কোনো কথার উত্তর দেয় না। সে হনহনিয়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে এই পরিবেশে। রাগে অভিমানে অষ্টাদশের হৃদয় ঝড় উঠে গিয়েছে। ইউভান সেদিকে সরু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।রুহি এতক্ষণ নীরব দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিল। সে বুঝতে পারছে, আনায়া খুব রেগে আছে। তাই সে আর দেরি না করে আনায়ার পিছু নেয়।ইউভান এবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে শুধালো, "তুই ওদের নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বস। আমি আসছি।" আয়ান আর তানহা কোনো কথা না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। ইউভান তার অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াসকে কল দিয়ে বাইরের প্রেস মিডিয়া সামলানোর নির্দেশ দিলো। যেন আবার মিডিয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয়।ইউভানের চুলগুলো এলোমেলোভাবে পড়ে আছে কপালে। ইউভান পা বাড়ালো বাইরে বের হওয়ার জন্য। বাইরে পিয়াস আরো কয়েকজন গার্ড তার জন্য অপেক্ষা করছে।ইউভান এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে কনসার্ট থেকে বের হয়। কিন্তু তখনই চারদিকে মিডিয়ার ভিড় জমে যায়।তারা ইউভানের বের হাওয়ারে অপেক্ষা করছিল। ক্যামেরার ফ্ল্যাশিং লাইট একটার পর একটা ঝলসে উঠছে। সাংবাদিকরা একসাথে চিৎকার করছে "ইউভান! আপনার আজকের গান নিয়ে কিছু বলবেন?" "আপনার নতুন অ্যালবাম কবে আসছে?" "আপনি কি সত্যিই কোনো সম্পর্কে আছেন?" ইউভান কোনো উত্তর দেয় না। চারদিকের মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তার ওপর।এসব কিছু নিয়ে সে মহা বিরক্ত। তার এসব প্রেস মিডিয়া একেবার পছন্দ না। ইউভান মুখ শক্ত করে বিরক্ত চোখে তার ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াসের এর দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, "ইফ ইউ ইভেন ফা*ক দিস আপ, তোমার বডি কেউ খুঁজে পাবে না এমনকি পুলিশ ও না।" পিয়াস ভয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিকিউরিটি গার্ডদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, আর ইউভানের যাওয়ার জন্য একফাঁকা পথ তৈরি করে।স্টেজের কোলাহল থেকে বেরিয়েই, ইউভান হনহনিয়ে গাড়ির দিকে হাঁটে। গাড়িতে উঠে বসতেই পেছনের সিটে বসা আনায়া,তানহা,রুহি সজাগ হয়ে ওঠে।আনায়াতো রেগে বোম হয়ে আছে।ইউভান তড়িঘড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তার আগে একজন গার্ড এসে মাথা নিচু করে বলে, "স্যার আমি কি আপনার সঙ্গে যাব?" ইউভান এক ভ্রু উঁচিয়ে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে বলল, "আমাকে দেখে কি ছোট হারিয়ে যাওয়া বাচ্চা মনে হয় যে একা যেতে পারবো না। গো টু দা হেল বিফর আই লস্ট মাই পেশেনস।" আয়ান ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলে, "শান্ত হ ভাই।" ইউভান গাড়ি স্টার্ট দেয়।তার ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে।আমেরিকায় কনসার্ট করার সময় তাকে এসব ভোগান্তি পোহাতে হতো না।কিন্তু বাংলাদেশে এখানকার মানুষ অনেক অচেতন।গায়ের উপর ঢলে পড়া এসব মানুষ একবার ইউভানের অপছন্দ।সে ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে থাকে। গাড়ি ভেতরকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কেউ কোন কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ইউভানের ভয়ে।কিন্তু তখন ঘটে যায় আরেক বিপত্তি।বাইরে তীব্রভাবে ঝড় হওয়া শুরু করল।ইউভান ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারছে না গাড়ির কাঁচের জানালা গুলো কাপছে।ঝড়ের দাপটে রাস্তার বাতিগুলোও কাঁপতে শুরু করে, চারদিকে বিদ্যুতের ঝলকানি। — "এভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না।" আয়ান উদ্বিগ্ন গলায় বলে। হঠাৎ চারদিকে তীব্র আলো পুলিশের সাইরেনের শব্দ বাঁচতে শুরু করে। পুরো শহর একটা বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে গেছে।ইউভান কোনমতে গাড়ি থামিয়ে দেয়। বুঝতে পারছে না হঠাৎ এখানে পুলিশ কি করছে।আয়ান জানালা দিয়ে তাকিয়ে বলল, "এখানে কী হচ্ছে? এত পুলিশ কেন?" তখনই একজন পুলিশ অফিসের গাড়ির চ্যানেলের কাছে এসে জানায়, "আপনারা সামনে এগোতে পারবেন না স্যার কয়েকটা গাছ পুরো রাস্তায় উপরে পড়েছে যার কারণে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। আর বাংলাদেশে শিশু পাচারকারী টিমকে ধরা হচ্ছে।অনেকদিন ধরেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে আজ তাদেরকে হাতে ধরতে পেরেছি আমরা।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা পালিয়ে অন্যদিকে গিয়েছে তাই সমস্ত রাস্তা আমরা অফ করে রেখেছি।" ইউভানের চোখ সজাগ হয়ে ওঠে।পেছনে বসা আনায়া সহ বাকিরা ও চোখ বড় বড় করে তাকায় সবার মত আতঙ্ক এখন। কিভাবে এখন বাড়ি যাবে তারা?ইউভান আর কোন কথা না বলে গাড়ি উল্টো দিকে ঘোরায়। আয়ান চিন্তিত সরে প্রশ্ন করে, "আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ভাই?" ইউভান ঠান্ডা কণ্ঠে শুধাল, "পাশে একটা রিসোর্ট আছে ওখানে আজকে রাতের জন্য থাকে কাল সকালে বাসায় চলে যাব।" সবাই নিশ্চিন্ত হয়। আনায়া রুহি একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাই করে। ইউভান গাড়ির আয়না দিয়ে এক ঝলক আনায়ার পানে তাকাই। কিছুক্ষণ বাদেই গাড়ি এসে থাম রিসোর্ট এর ভেতরে।চারদিকে এখনো জোরে জোরে বাতাস বইছে। আনায়া, ইউভান সহ বাকিরা কোনমতে গাড়ি থেকে নেমে রিসোর্ট এর ভেতরে প্রবেশ করে।আনায়া হা হয়ে সবকিছু দেখছেরিসোর্টটি পাহাড়ের গায়ে।সাদা মার্বেলের মেঝে, উঁচু ছাদ, চারপাশে সোনালি আলোয় ঝলমল করছে।এক কথায় মারাত্মক সুন্দর একটি জায়গা।রিসেপশনে গিয়ে আয়ান দ্রুত রুম বুকিং করে। ইউভান চুপচাপ দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু একটার ওপর নজর রাখছে।আয়ান রুমের চাবি নিয়ে এসে গিয়ে সবার হাতে দেয়। তানহা অধৈর্যভাবে প্রশ্ন করল, "আমার রুম কোনদিকে?" আয়ান হাতের ইশারায় জানালো, "এই দিকটায়," তানহা আর অপেক্ষা না করে নিজের রুমের দিকে এগোয় দেখে মনে হচ্ছে জরুরী কোন কাজ আছে। আয়ান রুহির হাতে রুমের চাবি দিয়ে বলল, "তোর রুম সামনের করিডোরে। আর আনায়ার রুম ইউভানের পাশে।" রুহি মাথা নাড়ায়।কিন্তু আনায়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সে নাকি এই বদমাশ ফকস্টার পাশের রুমে থাকবে ভাবতেই কা শিউরে ওঠে।আড় চোখে একবার ইউভানের দিকে তাকায়।ইউভানের আশেপাশের দিকে কোন নজর নাই সে এক ধ্যনে ফোন দেখে যাচ্ছে।রুহি আর আয়ান চলে যায়। অবশিষ্ট থাকে আনায়া যে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে।প্রায় ১০ মিনিট ধরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি রোবটের মত তবে ইউভানের কাছে বিন্দু পরিমান পাত্তা পায়নি। সে রিসোর্ট চেনেনা একা একা কিভাবে যাবে যদি হারিয়ে যায়?আনায়া এবার বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে, "বলছি শুনছেন?" ইউভানের মনোযোগ ভ্রষ্ট হয় সে চোখ খুলে তাকায় আনায়ার পানে।এবার কণ্ঠে আওড়ায়, "শুনছি ম্যাডাম।" "আমি রুমে যাব ইউভান ভাই। " ইউভান ভ্রু কুচকে শুধালো, "তো আমি কি বেঁধে রেখেছি তোকে যা।" আনায়ার ইচ্ছে করছে কি নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিঁড়তে।এই লোকটা সব সময় ত্যড়া ত্যাড়া কথা না বলে থাকতে পারে না।সে ঠোঁট চেপে বলল, "না মানে আমি চিনি না। ইউভান তপ্ত শাস ফেলে।আর কোনো বুলি না আওরিয়ে সামনে থেকে এগোই। আনায়া বাধ্য হয়ে ইউভানের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। এক সময় তারা রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইউভান নিজের রুমে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।আনায়া তখনও অজানা কারণে দাঁড়িয়ে রইল।কেন যেন সাহস হচ্ছে না রুমের ভেতর প্রবেশ করার। ইউভান আনায়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বলল, "এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?" আনায়া একটু কুঁকড়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, "আমার ভয় করছে…" ইউভান এবার ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল, একটু সময় নিল, তারপর গম্ভীর গলায় বলল, "তোকে রুম অব্দী এগিয়ে নিয়ে আসলাম এখন কি বিছানা অব্দি দিয়ে আসবো?ভেবে দেখেন ম্যাডাম বিছানা অব্দি নিয়ে গেলে কিন্তু যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। থামাতে পারবেন না কিন্তু আমাকে মনে রাখিয়েন।" আনায়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। কথাটা ঠিক কী অর্থে বলল ইউভান ? ইউভান একপাশে তাকিয়ে হালকা শ্বাস ফেলল, তারপর আবারও আনায়ার দিকে চোখ ঘুরিয়ে এনে ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি টেনে বলল, "কি ম্যাডাম সামলাতে পারবেন তো?" আনায়ার এবার সত্যিই কিছুটা কাঁপুনি লাগল।তার গাল আরও লাল হয়ে উঠল।ইউভান তাকে একটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে লজ্জায় খেলার জন্য সব কথা বলছি ভালোমতো বুঝতে পারছে সে।কান গরম হয়ে ওঠে তার। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না, পেছনে না তাকিয়েই দৌড়ে নিজের রুমের দরজা খুলে ঢুকে গেল।ইউভান সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে নিজের রুমের দরজা লক করে দেয়। আনায়া রুমে এসে তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।ড্রেস চেঞ্জ করার তো কোন অপশন নাই এটা পরেই আজকে রাত পাড়ি দিতে হবে।চোখ মুখে পানি ছিটাই হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় আনায়া জামার চেইনটা খুলে বাহুর দু দিক থেকে কিছুটা নামিয়ে দেয়। এরপর চোখ বুলায় বাকের উপরিভাগের অংশে ঝরঝর করা ইউভানের নামটি।মুহূর্তে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। শরীরের রক্তপ্রবাহ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে ওঠে। ইউভানের নাম তার শরীরে, এটা যদি কেউ দেখে ফেলে? হাতের তালু দিয়ে সেই জায়গা ঢাকার চেষ্টা করে সে।কিছুক্ষণ আগের মুহূর্তের কথা মনে পড়লেই আনায়া লজ্জায় লাল নীল গোলাপি হয়ে যায় বারবার। আজকে রাতে রিসোর্টে বিশেষ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।আনায়ারা যেহেতু রিসোর্টে আছে তাদেরও ইনভাইট। আজকে রাতে ডিনার রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের থেকে।আনায়া, রুহি,তানহা কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে হল রুমে আসে।এসে দেখে ইউভান কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছে। আয়ান ও তাদের পাশে দাঁড়ানো।হয়তো ইউভানের পরিচিত কেউ।চারদিকে পার্টিতে হরেক রকম মানুষের ভিড়। ইউভান এবার এগিয়ে এসে আনায়া আর রুহিকে আদেশের কণ্ঠে বললো, "দুজন একসঙ্গে থাকবি। কোথাও যেন ড্যাং ড্যাং করে নেচে বেড়ানো না হয়। পার্টিতে অনেক অপরিচিত মানুষ আছে একা একা যেন কোথাও না যাওয়া হয়।" রুহি ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়ে। কিন্তু আনায়া? সে বিরক্তিতে চোখ সরু করে ইউভানের দিকে তাকায়।তখনই দুজন অপরিচিত ব্যক্তি এগিয়ে এসে ইউভানের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করে, "এরা কারা ইউভান?" ইউভান প্রশ্নের উত্তর দিতেই যাবে তার আগে তানহা উত্তেজিত কন্ঠে বলে, "আমি ইউভানের ফিয়োন্সে।" তার কথা বলার ধরন এমন, যেন সে সবাইকে বোঝাতে চায় যে ইউভান তার। তার কথা শোনার পর, আনায়ার মন যেন ভেঙে যায়। তার রাগের পরিমাণ এতটা বেশি যে, সে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আনায়া যতটা সম্ভব ধৈর্য ধরে থাকবার চেষ্টা করে। তার মনের মধ্যে একটা রাগের অগ্নিশিখা যেন ফুটে ওঠে।ইউভান রাগী দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকায়। কিন্তু তাতে তানহার কি তানহা একের পর এক বলেই যাচ্ছে ইউভানের সাথে বিয়ের ডেট ফিক্স করা হয়েছে।আনায়া এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না দ্রুত হল রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এসব কথা শুনে অপরিচিত লোক দুটি ইউভানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, "এত বড় গুড নিউস তুমি আমাদের থেকে লুকালে ইউভান?ইটস নট ফেয়ার।তোমরা যেহুতু কাপাল তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা তো করতেই পারি আমরা।" ইউভান কোন কথার উত্তর দেয় না নিশ্চুপ থাকে তার চোখ অন্য কাউকে খুঁজতে থাকে। রুহি ওই দুনিয়াদারির কোন খবর নাই সে এক মনোযোগ দিয়ে ফোন স্কল করছে।ইউভান সবাইকে ম্যানেজ করে কোন মতে ওখান থেকে বেরিয়ে আসে। আনায়া এসে থামে নির্জন খোলামেলা আকাশের নিচে। চারদিকে কোলহল মুক্ত। কিছুক্ষণ আগে ঝড় বৃষ্টি হয়ে মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ।সেই অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল আনায়া।হঠাৎই তার শরীরটা শিরশির করে ওঠে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তার নিঃশ্বাস আটকে যায়। ধীরে ধীরে পেছন ফিরে তাকাতেই সামনে দেখতে পায় ইউভানকে। ইউভান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এই চোখের দৃষ্টি আনায়াকে ঘায়েল করে দিতে সক্ষম। আনায়ার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে, অথচ সে এক ইঞ্চিও নড়তে পারে না। চারদিকে মৃদু বাতাস বইছে,কয়েকটা চুল এসে আরুর মুখের উপর আছড়ে পড়ে। ইউভান আরও কাছে আসে। নিজের মাথাটা কিছুটা আনায়ার দিকে ঝুঁকে বলতে থাকে, _"আমি কি বলেছিলাম ম্যাডাম? বলেছিলাম না যে আমি যেখানে রেখে গিয়েছি আপনাকে যেন সেখানেই এসে দেখি? কিন্তু আপনি তো বড্ড অবাধ্য আমার।আপনার অবাধ্যতা তো একেক দিন একেক রূপ নেয়।একদিন ঝড়, একদিন রোদ্দুর, একদিন পূর্ণিমার আলো। আজ কী রূপ ধরবেন?" আনায়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, _"আপনি এখানে কি করছেন ইউভান ভাইয়া? আপনার ফিউচার ওয়াইফে সাথে থাকুন। শুধু শুধু এখানে এসে আমার অবাধ্যতার রূপ কে দেখতে বলেছে?" ইউভান এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। দুই হাত পকেটে গুঁজে কিছুটা ব্যঙ্গ করে বলে, _" আর ইউ জেলাস সানসাইন।" আনায়া থমকে যায়। আসলেই তো সে কেন এসব কথা বলছে। তার কেনই বা এত খারাপ লাগছে কেনই বা হৃদয় এরকম ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে। ইউভান কার সঙ্গে গেল কার সঙ্গে ঘুরলো তাতে তার কি। আনায়া কোন কথার উত্তর দেয় না পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলে ইউভান এক হাত আঁকড়ে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, _"আ্যনসার মি সুইটি।আর ইউ জেলাস? আনায়া কি বলবে বুঝতে পারে না। এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে?সব কিছু গলমিল লাগছে। সে এবার পিছন ফিরে ইউভানের চোখে চোখ রাখে কিছুটা শক্ত কণ্ঠে বলে, "আমি কেন জেলাস হতে যাব? আপনি কে হন আমার?আপনি অন্য কারোর সম্পদ ইউভান।" কথাগুলো আনায়া ছল ছল নয়নে বলে। ইউভান স্পষ্ট দেখতে পাই অষ্টাদশীর অভিমান মিশানো মুখশ্রী।সে আলতো হাতে আয়ত্ত করে নেয় আনায়ার মুখশ্রী।এরপর ঠান্ডা গভীর কন্ঠে বলে ওঠে, "আমিতো তোরই।" এই দুইটা শব্দ আনায়ার পুরো পৃথিবীকে উলটপালট করে দেয়। আজ কি তাহলে ইউভান শিকার করল? কই না তো? ইউভানের কথার মাঝে কেন এত ধোঁয়াশা এটাই বুঝতে পারে না আনায়া সে শুধু অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল। "আপনি মানুষটা বড্ড কঠিন ইউভান ভাই। আপনার প্রত্যেকটা কথা আমার কাছে ধোঁয়াশার মতো লাগে।" ইউভান নিঃশব্দে এক হাত দিয়ে আনায়ার মুখের উপর আছড়ে পড়া চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দি শুধালো, " ধোঁয়াশার মধ্যে যতদিন থাকবি ততদিন আমাকে পাবি। ধোঁয়াশা কেটে গেলে হয়তো আমাকে হারিয়ে ফেলবি।" আনায়ার বুকটা ধক করে ওঠে ইউভানের হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে। আনায়ার চোখ না চাইতেও জলে ভরে ওঠে। ইউভানকে বড্ড টানছে আনায়ার এই মায়াবী চোখ।কোমরটা আরেকটু গভীরভাবে স্পর্শ করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ইউভান।আনায়া মুহূর্তেই শিউরে ওঠে স্পর্শে।আনায়ার শ্বাস আটকে আসে ইউভান ঠান্ডা আঙুল বারবার আনায়ার মুখ থেকে গলা অব্দি ছুঁয়ে যাচ্ছে। সে কেমন কাপছে ইউভান বিষয়টা খেয়াল করে বাঁকা হেসে শুধালো, "এত কাঁপছিস কেন সানসাইন?" আনায়া কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। বুকের ভেতর অজানা উত্তেজনা যেন তরঙ্গ তুলছে। আনায়া কাপা কাঁপা কন্ঠে বলে, _"ছেড়ে দিন ইউভান ভাইয়া। " ইউভান এবার ছাড়ার বদলে নিজের মুখ ডুবাই আনায়ার চুলে। সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার গায়ে স্রোতের মতো বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পরে । নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে তার। ইউভান ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করছে।আনায়ার নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সে এবার ভীতু গলায় বলে ওঠে, "আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন তাই না?" "আমার ইচ্ছে করছে তোকে এভাবে আটকে রাখতে।" আনায়ার চোখ কিছুক্ষণের জন্য বড় বড় হয়ে যায়। সে বুঝতে পারছে না এখন তার কি বলা উচিত তাৎক্ষণিক ইউভান নিশাক্ত কণ্ঠে বলে, 'সানসাইন' আনায়া চোখ বন্ধ করে নাই সে কিছুতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ইউভানের গরম নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে পড়ছে এতে তার পুরো শরীর কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আওরায়, _'উমমমম' ইউভান বাঁকা হেসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে আওড়ায়, "আমি যদি এখন তোকে গভীরভাবে স্পর্শ করি তাহলে তুই নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবি?নাকি আমার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলবি? আনায়ার মন ছটফট করতে থাকে।ইউভানের প্রতিটি কথা যেন একেকটি শেকল হয়ে তাকে বন্দি করছে।আনায়া লজ্জায় নুয়ে যাই। কান গরম হয়ে যায় তার একটা মানুষ এতটা নির্লজ্জ কথা কিভাবে বলতে পারে ছিছি। সে এটুকু স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে প্রতিটি নিঃশ্বাসে এখন ইউভানের অস্তিত্ব অমোঘ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যাই হোক সে ইউভানের সামনে দাঁড়াতে চায় না। তার কঠিন কথাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো উত্তর দেওয়া তার সাধ্যের বাইরে।আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ইউভানকে দূরে সরিয়ে ওখান থেকে ছুটে চলে যায় পার্টির হল রুমে। ইউভান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আনায়ার যাওয়ার দিকে তাকায়।এরপর বাঁকা হেসে নিজেও হলরুমে প্রবেশ করে। আনায়া হল রুমের এক সাইডে দাঁড়িয়ে হাফসাফ করছে। তার কানে এখনো ইউভানের নির্লজ্জ কথাগুলো বাড়ি খাচ্ছে। হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো হলরুম নিস্তব্ধ। শুধু এক কোণ থেকে একটি মৃদু নীলচে আলো জ্বলে ওঠে।একজন লম্বা ছেলে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে একটু হেসে বলে, _ "Hey everyone! my name is rakib.কেমন আছেন সবাই? Enjoying the party? এবং আরও একটা বড় ব্যাপার আমার কলিগের ফিয়ন্সে আজ এখানে আছে। So, let’s hear it for my lovely brother and her fiancé.এই স্পেশাল মুহূর্তে আমরা ছোট্ট একটা কাপল ডান্সের আয়োজন করেছি। কিন্তু তার আগে, আমরা চাই ইউভান আমাদের একটা গান উপহার দিক।" চারদিক থেকে উচ্ছ্বাসধ্বনি ওঠে। হাততালির শব্দ মিশে যায় মিউজিকের রিদমের সঙ্গে। আনায়ার মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে আসে। চোখ আপনা-আপনি ইউভানের দিকে চলে যায়।ইউভান দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দে। ঠিক তখনই তানহা ধীরে ধীরে তার পাশে এসে দাঁড়ায়। মুখে হালকা হাসি চোখে কিছুটা লাজুক দৃষ্টিতে তাকায় ইউভানের দিকে । আনায়ার সেটা দেখেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইউভান কি করল বা না করল তাতে তার কিছু আসে যায় না। আবার চারপাশের আলো নিভে যায়। শুধু স্টেজের মাঝখানে একমাত্র আলোটা জ্বলে ওঠে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যায় ইউভান এবং তানহা সামনাসামনি দাঁড়ানো।তারপর মিউজিকের মৃদু বিট বাজতে শুরু করে। তসনহা মাথা নিচু করে লাজুক হাসছে। আনায়া আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। সে স্টেজের পাশ কাটিয়ে হালকা অন্ধকারের দিকে পা বাড়ায়ি চলে যেতে চাই। এদিকে তানহা ইউভানের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু ইউভানের নজর আনায়ার যাওয়ার দিকে।ঠিক সেই মুহূর্তে ইউভান আনায়ার হাত আঁকড়ে ধরে।আনায়া থেমে যায় চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। সবার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে তাকায়। তানহাও হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। স্টেজের আলো পুনরায় নিভে যায়। অন্ধকারের মধ্যে ইউভান আনায়ার কব্জি এক হাতে ধরে অন্য হাতে কোমর পেঁচিয়ে হেঁচকা টান দিয়ে তাকে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নেয়। আনায়া টাল সামলাতে না পেরে আঁকড়ে ধরে ইউভানের ঘাড়। আনায়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেতে শুরু করে। ঠিক তখনই স্টেজের আলো আবার জ্বলে ওঠে।তানহা একপাশে সরে যায় তার চোখমুখে ক্ষোভ স্পষ্ট। আনায়া ছটফট করে হঠাৎ ইউভান আনায়ার হাত উঁচু করে ধরে, তার কোমর ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে। আনায়া বেরিয়ে যেতে চায়, কিন্তু ইউভান একপাশে ঘুরে তাকে আবার নিজের সামনে টেনে আনে। ঠিক তখনই ইউভান মিষ্টি স্বরে গান গেতে শুরু করে—,, আমি তোমার কাছে রাখবো, আজ মনের কথা হাজার🎶 দিয়ে তোমার কাজল আকবো,আজ সারাদিনটা আমার 🎶 তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে, তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে 🎶 আর কমলো চিন্তা আমার 🎶 আমি তোমার কাছে রাখবো, আজ মনের কথা হাজার 🎶 দিয়ে তোমার কাজল আকবো,আজ সারাদিনটা আমার 🎶 ইউভান ধীরে ধীরে এক পা পিছিয়ে যায় আনায়া ছাড়ানোর সুযোগ নিতে গেলেই এক ঝটকায় তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে বুকের সঙ্গে আরও জোরে চেপে ধরে।আবার সেই ম্যান্ডারিন ফলের তীব্র ঝাঁঝালো ঘ্রাণ আনায়ার নাকে এসে বাড়ি খাই। পুনরায় গাইতে থাকে, হালকা হাওয়ার মতন, চাইছি এসো এখন 🎶 করছে তোমায় দেখে, অল্প বেইমান এ মন🎶 বাধবো তোমার সাথে, আমি আমার জীবন 🎶 আমি তোমার কাছে রাখবো, আজ মনের কথা হাজার 🎶 দিয়ে তোমার কাজল আকবো,আজ সারাদিনটা আমার🎶 ইউভান এবার আনায়ার মুখের সাথে নিজের গাল আলতো করে স্পর্শ করে।সঙ্গে সঙ্গে আনায়ার সমস্ত শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। ইউভান দুই হাত আগলে আনায়াকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে কানের কাছে গুনগুনিয়ে সুর তুলে, ওওওও......ওওওওও উউ....উউ....উমমম............. উমমম আনায়ার ল দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে সে কাঁধ ঠেলে সরাতে চাইলে ইউভান এক হাতে তার হাত ধরে রেখে অন্য হাত কোমর ঘুরিয়ে নিয়ে তাকে তার সঙ্গে তাল মেলাতে বাধ্য করে। আনায়া না পারছে সরে যেতে আর না পারছে থাকতে। ইউভান পুনরায় সেই ঘোর লাগানো কন্ঠে গাইতে থাকে —— চাইলে আসকারা পাক, বেঁচে থাকার কারণ 🎶 আজকে হাত ছাড়া যাক , ব্যস্ত তাড়ার বারণ 🎶 লিখব তোমার হাতে, আমি আমার মরণ 🎶 আমি তোমার কাছে রাখবো, আজ মনের কথা হাজার 🎶 দিয়ে তোমার কাজল আকবো,আজ সারাদিনটা আমার🎶 ইউভান ধীরে ধীরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আনায়ার চোখ ইউভানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায় না।চারপাশে হাততালি চলতে থাকে। লাইটগুলো সারা জায়গায় অন হয়ে যায়। তানহার চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে আগুন জ্বলে যাচ্ছে।আনায়া নিচে নেমে ইউভানকে খুঁজছিল হঠাৎ তানহা এসে আনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। আনায়া কোনো কথা না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে শুরু করলে তানহা জোর গলায় বলে, "ইউভানের সাথে কি তোর গভীর কোন সম্পর্ক? লজ্জা করেনা নিজের বোনের স্বামীর সাথে এভাবে নাচ করতে?" আনায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখগুলো শক্ত হয়ে ওঠে, তারপর তানহার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে, “সেটা আমি তোমাকে দিব না। এটাই প্রথম এটাই শেষ দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে প্রশ্ন করার মত দুঃসাহস দেখাবে না তানহা আপু।এর ফল খুবই ভয়াবহ হবে মাইন্ড ইট আমাকে মোটেও সহজভাবে নিও না তুমি।" তানহা রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।আনায়া এক মুহূর্ত ব্যয় না করে পাশ কাটিয়ে চলে আসে। তানহা হাতের মুষ্টি শক্ত করে কাউকে ফোন দেয়।মনে মনে হাসে সে।ফোনটা রেখে বিড়বিড় করে আওড়ায়, "আজকেই তোমার শেষ দিন আনায়া।" আপরদিকে, রিসোর্টের উষ্ণ বাতাসে রাতের হালকা ঠান্ডা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশাল আঙিনার মাঝে আনায়া হনহনিয়ে হাঁটছে কিন্তু কোথাও ইউভানকে পায় না।রিসোর্ট পেরিয়ে নির্জন রাস্তায় একা একা হাঁটতে থাকে আনায়া।বুকের ভেতর উথাল পাথাল করছে তার আজ দুচোখ ভরা অস্বস্তি।আনায়া আর সামনে এগোনোর সাহস পায় না। এমনি তো অনেকটা দূর সে চলে এসেছে।ইউভান সময় হলে চলে আসবে এটা চিন্তা করেই আনায়া পেছন ফিরে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ আনায়ার কানে আসে জঙ্গল থেকে কিছু আওয়াজ। আনায়া চোখ তুলে সেদিকে তাকায়।স্পষ্টভাবে কারোর গঙ্গাণীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।আনায়া ঘাবড়ে যায় মনে সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে কাল ঘন জঙ্গলের দিকে পা বাড়ায়। মনের ভেতর কৌতুহল জাগে তার।জঙ্গলের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার চাঁদের আলোয় আবছা গাছপালাগুলো দেখতে পারছে আনায়া। আনায়া ক্রমশ এগোচ্ছে জঙ্গলের গহীনে।তখনই তার জামার কোণা একটি গাছের ডালের সঙ্গে বাধে। আনায়া তড়িৎ বেগে সেদিকে তাকিয়ে জামাটা গাছের ডাল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আনায়া সফল ও হয় কিন্তু সে তার হাতের তরল কিছু অনুভব করে। অদ্ভুতভাবে আনায়ার শ্বাস ঘন হয়ে আসে ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে দেখে তার হাতে রক্ত লেগে আছে তাও তাজা। আনায়া ধড়ফড়িয়ে উঠে ওই গাছটার দিকে তাকায়। সেদিকে আলো ধরতে স্পষ্ট দেখা যায় তাজা রক্ত গাছ বেয়ে পড়ছে। আনায়া ভয়ে সম্পূর্ণ জমে যাচ্ছে পুনরায় তার কানে সে গোমড়ানির আওয়াজ ভেসে আসে।আনায়া কী করবে বুঝতে পারেনা এগোবে কিনা ফিরে যাবে। যদি কেউ বিপদে পড়ে? এ কথা চিন্তা করেই আনায়া সামনের দিকে এগোয়। তার হৃদয়ের স্পন্দন যেন হারাতে থাকে। ধীরে ধীরে গোঙ্গানির আওয়াজ আরো ভয়ংকর শোনা যাচ্ছে আনায়া সেটি অনুসরণ করতে করতে একটি পুকুরের সামনে এসে দাড়ায়।পুকুরের আশেপাশে ঝিঝি পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ ঝোপের আড়ালে কিছু নড়াচড়া দেখতে পায় আনায়া। সে তাড়াহুড়ো করে পা পিছনে টেনে নেয়।আতঙ্কে তার শরীর কেঁপে ওঠে।আনায়া ফিসফিসিয়ে বলে উঠে, " ক ক কে ওখানে?" তখনই ঝোপে আড়াল থেকে বীভৎস গোংরানির আওয়াজ শোনা যায়। আওয়াজটা এমন রকম স্পষ্টভাবে কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না।মুহূর্তেই আনায়ার গা আরও হিম হয়ে আসে।আনায়া উপলব্ধি করতে পারছে মারাত্মক ভুল করেছে একা একা এখানে এসে।সে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে পেছনদিকে ফিরে চলে যাবে তখনই পায়ের নিচে কিছু চাপা খায়৷ চোখ নিচু করে সে যা দেখল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত না আনায়া। মানুষের দুটি রক্তমাখা কাটা হাত মাটির ওপর হালকা লাফাচ্ছে।রক্তগুলি আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে গড়িয়ে পড়ছে, হাতের একে একে কাটা অংশ থেকে লাল তরল বের হচ্ছে। আনায়া ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে, " আআআআআআ...." মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে এবার।আনায়া সারা শরীর গলাকাটা মুরগির মত কাঁপছে। আনায়া দেখে হাত দুইটা কিভাবে লাফাচ্ছে।দেখে বোঝা যাচ্ছে সদ্য হাত কাটা হয়েছে।সে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে ঠিক সেই মুহূর্তে সে ঝোপের আড়াল থেকে এক মানব বেরিয়ে আসে। আনায়া আতঙ্কে সেদিকে তাকায় আর যা দেখে তাতে তার কলিজা কেঁপে ওঠে। দুই হাত আপনা আপনি মুখে চলে যায় তার। আনায়ার শ্বাস আটকে আসে, তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।আনায়া ব্যক্তিটির চেহারা ভালোমতো লক্ষ্য করে সঙ্গে সঙ্গে শেষ স্তব্ধ হয়ে যায়।মানব কি তার চেনা পরিচিত একজন সে আর কেউ না, বরং ঐদিন ভার্সিটিতে যে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলে এবং হাতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিল সুমন।আনায়া বুঝতে পারে না সুমন এখানে কি করছে। আনায়া স্পষ্ট ভাবে দেখে সুমনের হাত নেই। কাঁধের নিচ থেকে দুইটা হাত একেবারে কাটা রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে সেখান থেকে। সদ্য কাটা মাংসের অংশ এখনো খোলসে ঢাকা। ক্ষতস্থান থেকে হাড়ের সাদা অংশ বেরিয়ে এসেছে, রক্ত গলগল করে গড়িয়ে নামছে বুকের ওপর দিয়ে জামা ভিজে চটচট করছে। আনায়া ডুকরে কান্না করে। সুমন ঠিক তার দিকে এগোচ্ছে মুখ হাঁ করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। আনায়া বুঝতে পারছে না কোন কথা কারণ সুমনের গালের একপাশ কেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।আর ভেতর জিহ্বাটাও নেই।সুমন যখন কিছু বলার চেষ্টা করছে তখন গলগল করে রক্ত বেরিয়ে চোয়ালের নিচে দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আনায়া আর বসে থাকতে পারে না তড়িৎ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো উল্টো দিকে দৌড়াতে থাকে। পেছনে শুনতে পায় আনায়ার ভয়ের তীব্রতা যেন পুঞ্জীভূত হয়ে ওঠে।পেছন থেকে সুমন হাত না থাকলেও দৌড়াচ্ছে, ছুটে আসছে আনায়ার দিকে, হালকা হোঁচট খাচ্ছে, কিন্তু থামছে না। আনায়া স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার পেছনে কেউ তাওয়া করছে। সুমনের কাটা হাতের জায়গা থেকে তীব্র চপচপে আওয়াজ হচ্ছে আর গলা দিয়ে সেই বিকট গুমরানির শব্দ...। আনায়া প্রাণপণে দৌড়িয়ে যাচ্ছে তার শরীর ঘামে ভিজে গেছে।মনে প্রাণে শুধু একটা স্মৃতি ভেসে আসছে আর সেটা হল ইউভান। আনায়ার চোখ ইউভানকে খুজে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ আনায়া ধাতব কোন কিছুর শব্দে থেমে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে পেছনদিকে ফিরে তাকায় আর যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। অন্ধকারের মধ্যে কালো এক ছায়া মানব হাতেদার কোদাল বিশ্রী ভাবে সুমন কে আঘাত করছে। স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে সুমনের মাথার খুলি টা গড়িয়ে অন্যদিকে পড়েছে। আর ধারালো কোদালের সাথে কাঁচা মাংস আটকে আছে।ছায়া মানাবকে আরেকটা কোপ দিল সুমনের পাঁজরের পাশে। কোদালের ধারালো ফলাটি মুহূর্তে মাংস ফাঁড়িয়ে হাড়ের গাঁট পর্যন্ত পৌঁছালো।আনায়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। ছায়া মানব কি এতেও থামে না সে আরো একটি কোপ মারে সুমনের কাঁধের উপর ফলে মাংস ছিঁড়ে গরম রক্ত ঝরে পড়তে লাগল মাটিতে। শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত ও মাংসের টুকরোগুলো সিটকে গিয়ে আশপাশে ছিটকে পড়ল। তার বুকের পাঁজরের একটা অংশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, কাটা মাংসের টুকরোগুলো হালকা কাঁপছে যেন শরীর এখনো মরতে রাজি নয়।এতকিছুর পরে কি সুমন বেঁচে আছে? সে তো তখনই দুনিয়া ছেড়েছে যখন তার মাথা শরীর থেকে আলাদা করা হয়েছে। আনায়া দূর থেকে দৃশ্যটা দেখে স্থির হয়ে গেল। তার শরীর হিম হয়ে এল, এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা ছিন্নভিন্ন মাংসের টুকরো, রক্তের ভেজা মেঝে দেখে গলার মধ্যে একটা অবরুদ্ধ চিৎকার আটকে গেল।তখনই ছায়া মানবটি এবার ধীরে ধীরে আনায়ার দিকে ফিরে। আনায়া ভয়ে থাকলেও তার চোখ সজাগ হয়ে ওঠে ছায়া মানবের মুখ স্পষ্ট হয় কিছুটা তবে মুখের কোন আকার বোঝা যাচ্ছে না কারণ। ছায়া মানবের মুখে ড্রগনের মাস্ক পড়া।ছায়া মানবটি ধীরে ধীরে পিছুপা হয়।আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে শুরু করল। আনায়া বুঝতে পারছ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তার বিপদ আরো ঘনিয়ে আসবে অনেক বড় ভুল করেছে বাইরে এসে রিসোর্ট এর। তাই এক মুহূর্ত আর দেরি না করে উল্টো পথে দৌড়াতে শুরু করে।যে করেই হোক কোন মতে ইউভানের কাছে তাকে পৌঁছাতে হবে।আনায়া জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তায় চলে আসে।তার মাথা কাজ করছে না। পায়ের নিচে শুকনো পাতাগুলো মচমচ করে উঠছে, চারপাশটা অন্ধকার, নিস্তব্ধ। রিসোর্টের ফটক পেরিয়ে সে বুঝতে পারছে না কোনদিকে যাবে। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, যেন ধোঁয়ার মতো কিছু তার চারপাশে জমাট বেঁধে আছে।মাথা ঝাঁকিয়ে ঝটপট ফোন বের করল। দেরি করা যাবে না।প্রথমেই আয়ানকে ফোন দিল। রিং বেজে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ ধরছে না। একবার... দু’বার... তিনবার… না, কলটা কেটে যাচ্ছে। এক অদ্ভুত শূন্যতা বুকে ছড়িয়ে গেল। যেন এই পৃথিবীতে সে একা, একদম একা।তারপর সাহস করে ইউভানকে ফোন দিল। আঙুলগুলো কাঁপছে। এক... দুই... তিন... অবশেষে কলটা রিসিভ হলো।আনায়া গভীর শ্বাস নিল। মনে হলো এই দমটাই হয়তো তার শেষ আশ্বাস।সে ফোনে কিছু বলতেই যাবে তার আগেই ওপাশ থেকে এক ধরনের আওয়াজ ভেসে এলো যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।আনায়ার কানে আসছে চাপা নিশ্বাস, মৃদু হাসির শব্দ, কারো দমচাপা আর্তনাদ—এটা কী? আনায়ার মস্তিষ্ক ঝাঁকুনি খেল, কিন্তু বুঝতে সময় লাগল না।আনায়া স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলে কন্ঠের আওয়াজটা তানহার এবং গলার স্বর, শ্বাস, চাপা আর্তনাদ—সবকিছু মিলিয়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ফোনের ওপাশে আসলে কী ঘটছে।আনায়ার কানে ঝাঁঝালো গরম সীসা ঢেলে দেওয়া হলো যেন।আনায়া ঠোট ফাঁক করে কিছু বলতে যাবে তার আগে কলটা কেটে গেল। চলবে,

Golper Alo ব্লগে আপনাকে স্বাগতম, এখানে আপনি পাবেন সেরা ভালোবাসার গল্প।


👉 ⏪ আগের পর্ব | 👉 ⏩ পরের পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ